বস্তায় সবজি চাষে সাফল্য অর্জন
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষি বিজ্ঞানীগণ নিরমত্মর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। অল্প জমি হতে অধিক পরিমাণে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদনে নিত্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনে তারা সক্রিয়। শহরে থেকেও যারা নিজ হাতে লাগানো বাগানের টাটকা শাক-সবজি খেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য ‘‘পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’’ শাক-সবজি চাষাবাদের নতুন এক কৌশল বা পদ্ধতি নিয়ে এসেছে। আর তা হচ্ছে ব্যাগে বহু সত্মরে সবজি চাষ বা ‘‘ব্যাগ গার্ডেনিং’’ যার মাধ্যমে সীমিত পরিসরে শাক-সবজি উৎপাদন। এ পদ্ধতি সেই সব পরিবারের জন্যে উপযোগী যাদের প্রচলিত উপায়ে চাষাবাদ করার জমি বা সুযোগ নেই।
পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের কৃষি ও পরিবেশ বিভাগের পরিচালক ড. শেখ তানভীর হোসেন বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়া এবং উগান্ডার বসিত্ম এলাকায় Solidarites (ফ্রান্স ভিত্তিক আমত্মর্জাতিক ঘএঙ) সাফল্যজনকভাবে এই পদ্ধতি বাসত্মবায়িত করেছে। খাদ্য চাহিদা এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বাংলাদেশের জন্যে এই পদ্ধতি উপযোগী হবে বলে ধারণা করা হয়। এই ধারণার প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র Solidarites -এর কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশে ব্যাগ গার্ডেনিং -এর উপযোগিতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ভবানীপুর, গাজীপুরে একটি পরীক্ষামূলক গবেষণা প্রকল্প বাসত্মবায়ন করছেন। গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির (লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, ঢেঁড়শ, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া) উপর পরিচালিত পরীক্ষার ফলাফল সমেত্মাষজনক ও আশাব্যঞ্জক। এছাড়াও এ পদ্ধতিতে শীতকালীন শাক-সবজিসহ সারা বছরব্যাপী সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।
ব্যাগে বহু সত্মরে সবজি চাষের কৌশল বর্ণনা করে ‘‘পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’’ -এর প্রোগ্রাম অফিসার সালমা আক্তার বলেন, একটি বড় সাইজের সাধারণ সিনথেটিক বসত্মা/ব্যাগে জৈব সার মিশ্রিত মাটিতে শাক-সবজি উৎপাদন করা হয়। মাটিতে রস ধরে রাখার জন্য বসত্মার নিচে শুকনো ৩/৪ কেজি খড় বা গাছের পাতা দিতে হবে এবং মাটি যাতে জমাট বেঁধে না যায় সে জন্যে বসত্মার মাঝখানে নিচ থেকে উপর পর্যমত্ম ইটের টুকরো (সাইজ ২০-৪০ মি.মি.) বা খোয়া দিতে হয়।
বসত্মার উপর দিকে মাটিতে এবং পুরো বসত্মাটিকে চারপাশে লম্বালম্বিভাবে চারটি সত্মরে বৃত্তাকারে বিভক্ত করে ছিদ্র সৃষ্টি করে বীজ বপন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অন্যত্র চারা তৈরি করে রোপণ করা উত্তম।
পাতাবহুল বিভিন্ন শাক-সবজি বিশেষ এ পদ্ধতির জন্য বিশেষ উপযোগী।
পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের কৃষি ও পরিবেশ বিভাগের পরিচালক ড. শেখ তানভীর হোসেন এবং প্রোগ্রাম অফিসার সালমা আক্তার এ প্রতিবেদককে জানান, পাইলট প্রকল্পের উপযোগিতা সরেজমিন পরিদর্শন করতে এসে স্থানীয় এলাকাবাসী ও অন্যান্য ব্যক্তিরা পদ্ধতিটির ব্যাপারে উৎসাহ এবং আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং নিজ উদ্যোগে পদ্ধতিটি বাসত্মবায়ন করার জন্য কারিগরি দিক সম্পর্কে জানার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। পদ্ধতিটি স্বল্প পরিসরে এবং স্বল্প সময়ে করা যায় বিধায় খুবই উপযোগী। প্রতিটি ব্যাগে চারটি সত্মর ব্যবহার করার ফলে পদ্ধতিটি সময় এবং স্থানের সাশ্রয় করে থাকে। সবজি উত্তোলন বা হারভেস্ট করার পর ব্যাগটি অক্ষত থাকা পর্যমত্ম একাধিকবার সবজি চাষ করা সম্ভব। ৫টি ব্যাগে যথাযথভাবে শাক-সবজি লাগিয়ে পরিচর্যা করা হলে একটি পরিবারের প্রতি সপ্তাহের সবজি চাহিদা মেটানো সম্ভব হতে পারে।
এ পদ্ধতিটি বাড়ির ছাদে এবং বসিত্ম এলাকার জন্য বিশেষ উপযোগী। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে উপকূলীয়, হাওর এবং চর এলাকার বসতবাড়ির জন্য পদ্ধতিটি উপযোগী এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা মেটাতে গুরম্নত্বর্পূণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।