অনলাইন টুরিস্ট গাইড : ঘরে বসে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

অনলাইন টুরিস্ট গাইড : ঘরে বসে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

পেশা হিসেবে অনলাইন টুরিস্ট গাইড হতে পারে চমৎকার ব্যাপার। এখানে কাজের পাশাপাশি পাবেন ব্যাপক আনন্দ, সম্মান ও আয়ের ভালো একটি উৎস। বিষয়টি খুবই সহজ আর হয়তো আপনি জানেনও; কিন্তু তেমনভাবে খেয়াল করেননি! একটু গুছিয়ে ভাবলেই বুঝতে পারবেন, কত বড় সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এ মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে দেশ সেবার সুযোগ। নিজের দেশকে সারাবিশ্বের সামনে গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থাপন করার এত সহজ পদ্ধতি বোধ হয় আর হয় না। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও নিজের অবদানকে পারবেন সরাসরি কাজে লাগাতে।


টুরিস্ট গাইড

টুরিস্ট বা পর্যটক যখন কোথাও বেড়াতে যান, সেখানকার সব কিছুর সঙ্গে তার পরিচয় না থাকা স্বাভাবিক। তাই তিনি এমন একজন অপারেটর বাছাই করেন- যিনি সহজে তাকে বেড়ানোর স্থানগুলোতে নিয়ে যেতে, সেগুলো সম্পর্কে ব্রিফ করতে আর বুঝিয়ে দিতে সক্ষম। এই অপারেটরই হলেন টুরিস্ট গাইড। সাধারণত নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে একেকজন টুরিস্ট গাইড কাজ করে থাকেন।

যোগ্যতা

অনেকেই আছেন, বেড়াতে পছন্দ করেন। আর এই মনোভাব থেকেই নিজেকে টুরিস্ট গাইড হিসেবে গড়ে তুলে থাকেন। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, একধাপ এগিয়ে অনলাইন টুরিস্ট গাইড হিসেবে নিজেকে কীভাবে গড়ে তুলবেন আজ বরং সে ব্যাপারটি জানা যাক। এ পেশায় নিজেকে জড়াতে চাইলে যে গুণগুলো থাকা চাই-

ূ পোশাক-পরিচ্ছদ ও আচার-আচরণে স্মার্টনেস;

ূ কথা বলায় স্পষ্টবাদী ও সাবলীল;

ূ ইংরেজিতে বিশেষ দক্ষতা;

ূ উপস্থাপনায় সুন্দর ভঙ্গি;

ূ অনলাইনে জানাশোনা এবং

ূ নিজ দেশের দর্শনীয় ও সুন্দর স্থানগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা ইত্যাদি।

এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণাই আপনাকে এই পেশায় যোগ্যতর হিসেবে উপস্থাপন করবে। এ ব্যাপারগুলোর কিছু আছে যা আপনাকে নিজের চেষ্টায় আয়ত্ত করতে হবে; আর বাকিগুলো শিখে বা জেনে নিতে হবে কোথাও থেকে বা কারও কাছ থেকে। এ পেশায় আসার ব্যাপারে আপনি যখন নিবেদিতপ্রাণ হতে পারবেন, তখনই পা বাড়ানো ভালো।

অনলাইন

লোনলি প্ল্যানেট : টুরিস্টদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে তথ্যবহুল ওয়েবসাইটটির নাম ‘লোনলি প্ল্যানেট’ www.lonelyplanet.com। এই ওয়েবসাইটটিতে লাখ লাখ পর্যটক প্রতিদিন ভিজিট করছেন নির্দিষ্ট তথ্য সম্পর্কে জানার জন্য। কেউ কেউ এখানে ভিজিট করছেন বেড়ানোর নতুন কোনো স্থান খুঁজে পাওয়ার জন্য। আপনার কাজ হচ্ছে এ সাইটে যোগ দেওয়া এবং যারা বাংলাদেশে বেড়ানো সম্পর্কে জানতে চান, তাদের তথ্য দেওয়া।

তাছাড়া যারা নতুন স্থানে বেড়াতে আসতে চান, বাংলাদেশের সুন্দর পর্যটন অঞ্চলগুলোর কথা উল্লেখ করে তাদের আগ্রহী করে তোলা। সম্ভব হলে তাদের বাংলাদেশের সুন্দর টুরিস্ট স্পটগুলোর ছবি দেখান।

বিশ্বায়নের যুগে পিওর বা নিখাঁদ গ্রাম সম্পর্কে আগ্রহ অনেকের। বাংলাদেশে উত্তরবঙ্গ, বরিশাল প্রভৃতি অঞ্চলসহ রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর গ্রাম। সেসব গ্রামের কথা বর্ণনা করুন। ছবি দেখান। বলুন, কেউ চাইলেই এই গ্রামের মানুষের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারে; তাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা করে গ্রাম্য জীবনের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। হ্যাঁ, সত্যিই এটা অনেকে চান। ইট-কাঠ-পাথরের শহরে যারা থাকেন, তারা একটা নির্মল গ্রাম্যজীবনে কয়েকদিন থাকার জন্য উতলা হয়ে পড়েন। সুতরাং এটা তাদের কাছে লোভনীয়।

এভাবে দেশের সুন্দর ব্যাপারগুলোও তুলে ধরতে পারেন ‘লোনলি প্ল্যানেট’ ওয়েবসাইটে। আমাদের দেশের বৃষ্টি, বর্ষা এগুলো যে কোনো দেশের চেয়েও সুন্দর। বর্ষা শুরু হলে গাছে-গাছে নতুন পাতা গজায়, বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ টিনের ঘরে বসে শোনার ও দেখার মুহূর্ত অসাধারণ না!

ফেসবুক : ‘লোনলি প্ল্যানেট’ অবশ্যই বড় প্ল্যাটফর্ম। তবে এটিই শেষ বা একমাত্র জায়গা নয়, সুযোগ আছে আরও। এ রকমই একটি বড় মাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুকে বেড়ানোর তথ্যসমৃদ্ধ অনেক বড় বড় পেজ, গ্রুপ আছে। ওইগুলোতে যোগ দিন। বাংলাদেশের বেড়ানোর জায়গাগুলো নিয়ে ডকুমেন্ট তৈরি করে আপলোড করুন। টুরিস্টদের আগ্রহী করে তোলার জন্য সুন্দর স্থানগুলোর বর্ণনা ও ছবি দিন।

নিজেকে পরিচিত করা : আপনার ব্যাপারে যত সম্ভব অনলাইনের বিভিন্ন জায়গায় লিখুন। সম্ভব হলে নিজের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করুন, সেখানে নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন। বাংলাদেশের প্রতিটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে লিখুন। গ্রাম্যজীবন সম্পর্কে লিখুন। তারপর বিভিন্ন জায়গায় আপনার ওয়েবসাইটটির কথা ছড়িয়ে দিন। ওয়েবসাইটে অবশ্যই আপনার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম রাখবেন। আর যদি ওয়েবসাইট না থাকে, তাহলে নিজের একটা ই-মেইল অ্যাড্রেস দিন সর্বত্র।

ঠিকই দেখবেন এক-দু’জন করে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন অনেক বিদেশি। আর এভাবে যোগাযোগের মাধ্যমেই আপনি তাদের সঙ্গে চুক্তিতে যাবেন।

ভুলেও যা করবেন না : লোনলি প্ল্যানেট বা ফেসবুকে বাংলাদেশ সম্পর্কে লেখার সময় ভুলেও আগে থেকে উল্লেখ করবেন না আপনি টুরিস্ট গাইড বা এ রকম কিছু। আপনি জাস্ট ইনফরমেশন দেবেন। কেউ কিছু জানতে চাইলে উত্তর দেবেন বা পরে জেনে জানাবেন বলবেন; এর বেশি নয়। হ্যাঁ, কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করে বাংলাদেশে এলে তাকে গাইড করতে পারবেন কি-না- তখন অবশ্যই টুরিস্ট গাইড হিসেবে নিজের পরিচয় দেবেন।

আর্থিক লেনদেন

একটা কথা মনে রাখবেন, বিদেশিরা আমাদের অতিথি। আর দ্বিতীয় কথা হলো, ওরা যদি একবার এসে উপভোগ করেন, তাহলে বারবার আসবেন। বন্ধু-বান্ধব-পরিজন নিয়ে আসবেন। নানাজনকে রেফার করবেন আপনার কাছে। অনলাইনে আপনার সম্পর্কে লিখবেন। সুতরাং তাদের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে তর্কে না যাওয়াই ভালো। তার পরও ‘লোনলি প্ল্যানেট’ থেকে দেখে নিতে পারেন টুরিস্টদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারটা। শুধু একটা ব্যাপার জানুন, টুরিস্ট সর্বনিম্ন আপনাকে যেটা অফার করবে, সেটাও আপনার কল্পনার চেয়ে অনেক অনেক বেশি হয়ে উঠতে পারে!

মনে রাখবেন, এই ক্যারিয়ারে আপনি ফুলটাইম কিংবা ফ্রিল্যান্স- দু’ভাবেই কাজ করতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে দেশের ভাবমূর্তির কথাই আপনাকে সবার আগে ভাবতে হবে। আপনার দায়িত্ব দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করা। এর উল্টোটা নয় কিন্তু!  favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment