ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বছরজুড়ে লেগেই থাকে রাজ্যের অনুষ্ঠান। হৈ-হুল্লোড়ে চলে নানা আয়োজন। সেসব আয়োজন সুন্দর ও রুচিশীল করতে অনেকেই মুখোমুখি হন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের। বর্তমানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট একটা শিল্প হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় এর অবস্থান হয়েছে অনেক সুন্দর ও নান্দনিক। ফলে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে অনেকেই ক্যারিয়ার গড়তে ছুটছেন। এই পেশাটা যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি ক্যারিয়ার লাইফ উপভোগ করারও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এখানে। সুযোগ রয়েছে নিজের যোগ্যতা প্রমাণেরও। এসব বিবেচনা করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পেশা হিসেবে লোভনীয় হয়ে উঠেছে। কাজের ক্ষেত্র হিসেবেও এখানে রয়েছে ব্যাপক সুযোগ।
কাজের ধরন
যেভাবে শুরু
শুনে অবাক হলেও সত্যি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এত সুন্দর ও সাবলীলভাবে কাজ করে যে, ছোটখাটো ভুল হওয়ারও আশঙ্কা থাকে না। এই যেমন কোন অতিথিকে কী উপহার দেবেন, কীভাবে ও কী দিয়ে আপ্যায়ন করবেন? প্রোগ্রামস্থল সাজানো, যাতায়াত, খাওয়ার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব কাজই করে থাকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এমনকি আপনি চাইলে অনুষ্ঠানের আগেই ডেমো প্রজেক্টও দেখতে পাবেন। এ যেন অনুষ্ঠানের আগের এক অনুষ্ঠান। এদিক থেকে বিবেচনা করে আপনি যদি একটা ভালো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে আপনার অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিতে পারেন, তবে নির্ভাবনায় অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে পারবেন।
হুইসেলের অপেক্ষা
আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়বেন, তবে প্রস্তুতি শুরু করুন। কীভাবে, কোথা থেকে কাজ শুরু করবেন? শুরুটা নিজের পরিবার থেকেই হতে পারে। কীভাবে? বাসায় ছোট-বড় অনেক অনুষ্ঠানই তো হয়। দায়িত্ব নিয়ে সেগুলো সফলভাবে করতে পারেন কি-না দেখেন। এতে নিজের সামর্থ্য বুঝতে যেমন সহায়তা হবে আপনার, তেমনি অভিজ্ঞতার ঝুলিও বড় হবে।
ট্র্যাকে ছুটতে
এই ধাপে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে আরও জোরদার করতে হবে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ওপর শর্ট কোর্স করতে পারেন। বাংলাদেশে বর্তমানে ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ওপর শর্ট কোর্সের আয়োজন করে থাকে। অল্প টাকার বিনিময়ে তাদের থেকে কোর্স করতে পারেন। আবার আপনি সরাসরি তৃতীয় ধাপেও চলে যেতে পারেন।
মুকুটের হাতছানি
এই ধাপে আপনি কয়েকটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সম্ভব হলে টুকে রাখুন বাংলাদেশের বড় বড় কয়েকটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মের ঠিকানা। তাদের সঙ্গে কথা বলুন। সহজেই ওদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। বাস্তবে কাজ করলে আপনার জানাশোনার পরিধি বৃদ্ধি পাবে অনেক অনেক বেশি।
নিজেই বস
আপনি চাইলে নিজেই গড়ে তুলতে পারেন একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম। এটা করার আগে আপনাকে বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। এটা খুবই জরুরি। মনে রাখবেন, শুধু টাকা থাকলেই আপনি এই ফার্ম করে লাভ করতে পারবেন না। এ জন্য আপনার যেমন প্রচেষ্টা দরকার, তেমনি জানার ঝুলিও হতে হবে ভরপুর। সুতরাং টাকা খরচ করার আগে নিজেকে যাচাই করে নিতে ভুলবেন না। আর নিজেকে যাচাই করে নিতে তৃতীয় ধাপের কর্মপ্রক্রিয়া খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
নিজের মুখোমুখি
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালনায় আয়োজিত বড় বড় প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করুন। অনুষ্ঠান উপভোগ করার চেয়ে আড়ালে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের কর্মপ্রক্রিয়া ভালো করে লক্ষ্য করুন। দেখুন, জানুন ও শিখুন। এগুলো বাস্তব জীবনে খুবই কাজে দেবে। এগুলো দেখে সত্যিই শিখতে পারছেন কি-না সেটা যাচাই করে নিন। কীভাবে যাচাই করবেন? বড় প্রোগ্রামগুলোর পরিধি দেখে বাসায় বসে নিজেই একটা কর্মপ্রক্রিয়া তৈরি করুন। তারপর সেই প্রোগ্রামে উপস্থিত থেকে মিলিয়ে দেখুন নিজের কর্মপ্রক্রিয়ার সঙ্গে কতটা মিলছে। যদি ৬০ ভাগের বেশি মিলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি মোটামুটি তৈরি কাজ করার জন্য।
নিজের ব্যবস্থাপনা
বড় বড় কোম্পানির প্রোগ্রাম ম্যানেজার বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তাদের একটা চমক জাগানিয়া প্রোগ্রামের অফার দিন, যে প্রোগ্রামে তাদের কোম্পানির অনেক সুবিধা হবে। যদি সত্যি সত্যিই আপনার প্রোগ্রামটা কাজের হয়ে থাকে তবে ওটা যত কষ্টেরই হোক না কেন, ওই কোম্পানি সেটা লুফে নেবেই।
এভাবে ব্যবস্থা করতে পারলে নিজে যেমন লাভবান হবেন, তেমনি বড় কোম্পানির সঙ্গে আপনার সখ্য বাড়বে। ভবিষ্যতে ওই কোম্পানি বড় কোনো প্রোগ্রাম আয়োজন করতে গেলে আপনাকে ডাকবেই।
ক্যারিয়ারের পালে হাওয়া
ক্যারিয়ার নির্ভর করে আপনার ওপর। আপনি কি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে চাকরি করবেন, না ব্যবসা করবেন? যদি চাকরি করতে চান তবে প্রথম দু’বছর চাকরি করুন। চাকরি ভালোভাবে করতে পারলে এখানে বসেও ব্যবসাটা ভালো করতে পারবেন। আর চাকরিতে ফেল করে আপনি যদি ভাবেন, স্বাধীন ব্যবসা করবেন, তবে আপনার এই ব্যবসা লোকসানের খাতেই যাবে। নিজের কাছে নিজে সৎ থেকে ভেবে দেখুন- কোনটা আপনার জন্য পারফেক্ট।
শুরুর আগে সরাসরি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের বিজনেসে না নেমে কিছুদিন জব করে নিতে পারেন। তবেই প্রকৃত অর্থে নিজেকে চিনতে পারবেন। আর নিজেকে চিনতে পারার মাধ্যমেই নিজের অবস্থান আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারণ সফলতা যে আপনারই কাজের যোগ্যতার প্রমাণ!