সুতোয় বোনা ক্যারিয়ার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বিশ্ববাজারে পোশাক শিল্পের চাহিদা বাড়তে থাকায় অন্যসব পেশার চেয়ে এ পেশায় চাকরি পাওয়াটা বেশ সহজও বটে! একেকটি পোশাক শিল্প এবং বায়িং হাউসে প্রচুর সংখ্যক দক্ষ লোক নিয়োগ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পেশাদারদের উচ্চ বেতনসম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এই পেশার ব্যাপক দক্ষ জনবল চাহিদার কারণে আমাদের দেশেই গড়ে উঠেছে বেশ কিছু শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশে চাকরির বাজারে যে ক’টি পেশার অসম্ভব চাহিদা তার মধ্যে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার অন্যতম। চাহিদার তুলনায় এই পেশাতে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা দেশে অনেক কম। বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটছে। বিশ্বমানের টেক্সটাইল শিল্পের কাতারে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে এই শিল্পে প্রয়োজন দক্ষ প্রযুক্তি জ্ঞানসমৃদ্ধ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার।
- কাজের ক্ষেত্র
টেক্সটাইল, গার্মেন্ট, ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে রয়েছে চাকরির বড় বাজার। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত দেশি-বিদেশি টেক্সটাইল মিল, বিভিন্ন বায়িং অফিস, বুটিক হাউস, ফ্যাশন হাউস, গার্মেন্ট শিল্পে ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের রয়েছে অনেক সুযোগ। মূলত টেক্সটাইল বিষয়ে শিক্ষার্থীদের যে কোনো ছোট-বড় টেক্সটাইল বা গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির পণ্য উৎপাদন কার্যক্রমের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন কম্পোজিট শিল্প, স্পিনিং, উইভিংসহ গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানেও তারা কাজ করে থাকেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক এবং শিল্পঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর শিল্পঋণ বিতরণ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ রয়েছে। ফলে শুধু দেশের অভ্যন্তরেই তাদের জন্য রয়েছে বিশাল কাজের ক্ষেত্র। ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে টেক্সটাইলের শিক্ষার্থীদের রয়েছে চাহিদা।
- বেতন-ভাতা
বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্পে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে হলে একজন প্রার্থীকে টেক্সটাইল, গার্মেন্ট বিষয়ে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় অধ্যয়নরত একজন ছাত্রছাত্রী যে কোনো প্রতিষ্ঠানেই ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নিতে পারেন। তারপর প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। শিক্ষাজীবন শেষে এ ক্ষেত্রে তাদের বেতন কাঠামো ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হয়। তবে টেক্সটাইল শিল্পে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়। একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন তাদের কর্মের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ওপর নির্ধারিত হওয়ার মাধ্যমে দ্রুত বাড়ে। ফলে একজন দক্ষ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৭০-৮০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদেয় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। আমাদের দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কিছুটা থাকলেও গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য তৈরির জন্য প্রয়োজন ডিজাইন, কোয়ালিটি এবং মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষা। আর এ কারণেই ডিজাইন শিক্ষার সম্প্রসারণ একান্ত প্রয়োজন। টেক্সটাইল বিষয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই টেক্সটাইল টেকনোলজিতে-অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং ও ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে অনার্স, এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এ ছাড়া ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্নকারী ব্যক্তিরাও এই শিল্পে প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে সক্ষম হতে পারেন।
- প্রশিক্ষণ
টেক্সটাইল, অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং ও ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে অনার্স, এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্নকারীকে টেক্সটাইল টেকনোলজির আধুনিক সব প্রযুক্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হয়। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার তৈরিতে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজি’এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সারাদেশে মোট চারটি সরকারি টেক্সটাইল টেকনোলজি কলেজ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করে। কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজি মূলত দুটি কোর্সে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং স্পেশালাইজেশন ইন ইয়ার্ন, ফেব্রিক্স, ওয়েট প্রসেসিং, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রদান করে। কোর্স হিসেবে আছে বিএসসি ইন টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট বিষয়টিও।
এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং ডিপ্লোমা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে অন্যতম আলোচিত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি বা এনআইএফটি। এ প্রতিষ্ঠানটিতে ফুলটাইম শিক্ষকদের সঙ্গে আছেন দেশের খ্যাতিমান কিছু পার্টটাইম শিক্ষক এবং তত্ত্বাবধানে থাকেন একদল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রফেশনাল ব্যক্তিরা। তাদের ক্লাসরুমও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত।
বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে। ফলে বেড়ে চলেছে গার্মেন্ট, বায়িং হাউস, ফ্যাশন হাউসসহ পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। পাশাপাশি গার্মেন্ট, বায়িং এবং মার্চেন্ডাইজিং সম্পর্কিত প্রশিক্ষিত লোকের চাহিদাও বাড়ছে ব্যাপক।