সহকর্মীর সঙ্গে বনীবনা হচ্ছে না ?
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
নবমিতা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা। অফিসে আসিফ তার চেয়ে কয়েক বছরের সিনিয়র। যদিও তারা একই পদে কাজ করছেন। আসিফ একই পদে থাকা সত্ত্বেও নবমিতাকে ডমিনেট করতে চাইছেন। নবমিতাও সহজে ছাড় দিতে নারাজ। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ছোটখাটো ঝামেলা বেধে যাচ্ছে। তাছাড়া নবমিতা চাকরিতে যোগ দেয়ার পর থেকেই লক্ষ্য করছেন অফিসের কর্তাব্যক্তিরা আসিফের বাড়াবাড়িকে কিছুটা প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন। একই সেকশেন কাজ করায় ইচ্ছা না থাকলেও নবমিতার আসিফের সঙ্গে কাজ ভাগাভাগি করতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় বিষয়ে পরামর্শ করতে হচ্ছে। কিন্তু আসিফের সাড়া বরাবরই নেতিবাচক। সহায়তা তো নয়ই বরং গায়ে পড়ে খারাপ আচরণ করেন আসিফ। ভুল খুঁজে বের করে হেয় করার চেষ্টা করেন। এ সব বিষয় নিয়ে নবমিতা স্বভাবতই চরম বিরক্ত।
কর্মস্থলে নবমিতার মতো পরিস্থিতিতে আমাদের অনেকেরই পড়তে হয়। সহকর্মীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মনে ভর করে বিষণ্ণতা, ক্ষোভ। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চলতে থাকলে বদলি কেউবা চাকরি ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করেন। কিন্তু এগুলোর কোনোটাই স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। বরং একটু সংবেদনশীল ও কৌশলী হলে সেই সহকর্মীটিই হয়ে উঠতে পারে আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সহকর্মীর সঙ্গে সদা ইতিবাচক আচরণ করুন। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন, আপনি তার জন্য ক্ষতিকর কেউ নন; বরং শুভাকাঙ্ক্ষী এবং তার ভালো চান। আপনি তার প্রতিদ্বন্দ্বিও নন- এই বার্তাটা তাকে দিন। এমনও হতে পারে আপনার সহকর্মীটি অফিসে কোনো কারণে বঞ্চিত কিংবা পারিবারিক কোনো সমস্যায় জর্জরিত। যার প্রভাব তার আচরণে পড়ছে। এমনটি হলে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। তার কষ্ট ভাগাভাগি করে নিন। তবেই শুরু হবে বন্ধুত্বের রসায়ন।
মতের মিল না হলে
অফিসে কোনোক্রমেই একজন সহকর্মীর সঙ্গে বিবাদে জড়ানো উচিত নয়। প্রয়োজনে ছাড় দিতে হবে। আপনার সহকর্মী যা চাইছেন, তা যদি অফিসের স্বার্থবিরোধী না হয়, করুন না। নীতির প্রশ্ন ছাড়া সচরাচর বিষয়গুলোতে খুব বেশি কঠোর অবস্থানে না থাকাই ভালো। তবে তিনি যদি আপনার পেছনে লেগে থাকেন, ভদ্রোচিতভাবে তাকে বুঝিয়ে দিন, তিনি যা করছেন তা উচিত নয়। দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় যেখানে কাটছে, অফিস কিংবা নিজের স্বার্থেই হোক, সম্পর্কটা ভালো হওয়া উচিত। আপনার সহকর্মী যদি পদমর্যাদা ও বয়সে আপনার চেয়ে ছোট হন, তাহলে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন, এ রকম ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ক্ষতিটা তারই হবে। কিন্তু আপনার সহকর্মী যদি পদমর্যাদা ও বয়স দুটিতেই আপনার চেয়ে বড় হন, তাহলে তার সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না। তবে তাকে এ বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
সহজ-সরল হোক সম্পর্ক
সহকর্মীর সঙ্গে সুন্দর-স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন আপনি নিজেই। অফিসের ৯টা-৫টা ঘড়ির কাঁটা থেকে বেরিয়ে একটি অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক হলে ক্ষতি কী? ছুটির দিনে কোনো এক দুপুরে তাকে বাসায় নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন। বাসায় একসঙ্গে খাবার খেয়ে মুভি দেখে কাটিয়ে দিতে পারেন একটি ছুটির বিকাল। সেই সঙ্গে চলল কফি। রেস্টুরেন্টেও সহকর্মীদের দাওয়াত করে খাওয়াতে পারেন। জন্মদিন বা কোনো উপলক্ষে উপহার পাঠাতে পারেন। তার সন্তানকে পছন্দের কিছু একটা উপহার দিতে পারেন। তার প্রিয় প্রসঙ্গ নিয়েও মাঝে মধ্যে আলাপচারিতায় মেতে উঠুন। মজা করুন; প্রাণ খুলে হাসুন। এতে সম্পর্কটা মজবুত হবে।
প্রশংসা করুন
বুঝতে পারছেন, অফিসের কেউ একজন হয়ত আপনাকে ঠিক পছন্দ করছেন না, পেছনে লেগে থাকছেন। সুযোগ পেলেই আপনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতনের কান ভারি করছেন। সম্পর্কটা সরলরেখায় আনা যায় খুব সহজেই। আপনি তার কোনো কাজের প্রশংসা করুন। সরাসরি করলে যদি তিনি ভাবেন যে আপনি তার কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন; তবে তার কাছের কারো সঙ্গে তার প্রশংসা করুন। অথবা তার পছন্দের সঙ্গে যদি আপনারটি মিলে যায়, এখান থেকেই শুরু হতে পারে সমঝোতার পথ চলা।
হাত বাড়িয়ে দিন
ধরা যাক, আপনার সহকর্মী কোনো পারিবারিক সমস্যায় পড়েছেন। হয়ত তার কোনো নিকটজন অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে নেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারেন। সহযোগিতা করতে পারেন পরিচিত কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঠিকানা বা ফোন নম্বর দিয়েও। মনে রাখবেন বিপদে কাউকে সহযোগিতা করলে তিনি সেটা মনে রাখেন। কোনো কারণে আপনার সহকর্মীর জরুরিভিত্তিতে টাকাও দরকার হতে পারে। টাকা ধার দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। এভাবে কারো বিপদে এগিয়ে গেলে তার সঙ্গে চমৎকার একটি সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। কাজের ক্ষেত্রেও বাড়িয়ে দিতে পারেন সহযোগিতার হাত। সহকর্মীর কাজের ভার কিছুটা নিজের কাঁধে নিতে পারেন। তিনি কোনো অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলে তাকে বুদ্ধি দিয়ে ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারেন। কোনো লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েও সহযোগিতা করতে পারেন। কোনো দরকারি জিনিস, ধরা যাক পেনড্রাইভ, কাগজ, ফাইল কিংবা একটি কলমই তৈরি করে দিতে পারে সেতুবন্ধ। তার প্রয়োজনের দিকটা দেখলে সম্পর্কটা আপনা-আপনি ভালো হয়ে যাবে। অফিস তার প্রয়োজনে তাকে ছুটি না দেয়ায় তার মন খারাপ হতে পারে। তার পাশে দাঁড়ান। বোঝান তার প্রয়োজনটা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু অফিস যেহেতু ছুটি দেয়নি তাই মন খারাপ করে বসের সঙ্গে তিক্ততা সৃষ্টি করার দরকার নেই। এটি তার ক্যারিয়ারে ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
আপনি যদি হন তার সমস্যার কারণ
নানা জায়গা, নানা আদর্শ আর নানা স্বভাবের মানুষের সম্মিলন ঘটে কর্মক্ষেত্রে। তাই সবার সঙ্গে বনিবনা হবে না- এটাই স্বাভাবিক। কী কারণে বনিবনা হচ্ছে না, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। আপনার সহকর্মী কেন আপনার সঙ্গে বিরূপ আচরণ করছেন, তা জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে তার সঙ্গে পৃথকভাবে বসুন। এ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলুন। এমনও হতে পারে, আপনিও হতে পারেন তার সমস্যার কারণ। এ ক্ষেত্রে তার সঙ্গে বসুন, জানার চেষ্টা করুন, আপনার কোনো ব্যবহার তার খারাপ লেগেছে কি না বা আপনি তার কোনো সমস্যার কারণ কি না। ধরা যাক, কোনো কর্মীর কাজের চাপ অনেক বেশি। অথচ আপনাকে অফিস ততটা প্রেসার দেয় না। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই একটি দূরত্ব তৈরি হতে পারে। আপনার সহকর্মীর কাজে একটু সাহায্য করলে ক্ষতি কী? এটি বরং ঘুচিয়ে দিতে পারে পারস্পরিক দূরত্ব।