অবসান হোক সিদ্ধান্তহীনতার!
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট পাওয়ার পর থেকেই অন্তুর মাথায় কেবল ঘুরছে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ রম্য নাটকের কথা। ভালের ফলাফলেরও যে এতখানি বিড়ম্বনা থাকতে পারে অন্তুর তা ভাবনাতেই আসেনি কখনও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ভালোই হয়েছে তার। মানবিক বিভাগের ইউনিটে তার মেধাক্রম অষ্টম। আর এই চমকপূর্ণ রেজাল্টই কাল হয়েছে অন্তুর বেলায়। ভেবেছিল মেধাক্রম অনুযায়ী যে সাবজেক্ট পাবে, সেটাই লুফে নেবে। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যখন নিজের ঘাড়ে এসে পড়েছে তখনই চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে অন্তু। বাবা-মা সাফ জানিয়ে দিয়েছে এ ব্যাপারে অন্তুকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার পছন্দ শেষ পর্যন্ত দু’টোয় এসে ঠেকেছে—ইংরেজি ও অর্থনীতি। ‘ডিম আগে না মুরগি আগে’র মতো দ্বিমুখী যন্ত্রণায় ঘুরপাক খাচ্ছে অন্তু।
মিসেস জাহান ব্যাপারটা আবার অন্যরকম। খ্যাতনামা একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মিসেস জাহান। চাকরির বয়স পনের বছর। কাজের সূত্রে কোম্পানির ইউরোপ অফিসে যাওয়ার সুযোগ এসেছে তার। এবারই প্রথম। অথচ দোটানায় পড়েছেন তিনি। ক্লাস টু পড়ুয়া বারো বছরের ছেলে নিতুলকে নিয়েই তার দুশ্চিন্তা। একদিকে প্রথমবারের মতো বিদেশ সফর, অন্যদিকে ছেলেকে তার বাবার কাছে রেখে যাওয়ার টেনশন। ছেলেকে নানাবাড়িতে রেখে যাওয়ার কথাও একরকম পাকাপাকি করে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু সিদ্ধান্তটা কোনোভঅবেই এখনও চূড়ান্ত করে উঠতে পারছেন না।
অন্তু আর মিসেস জাহানের বয়সের ব্যবধানটা সকাল-বিকাল হলেও সমস্যার সূত্রটা কিন্তু এক জায়গায়। স্কুল পড়ুয়া কিশোর থেকে শুরু করে অবসর নেওয়া প্রবীণ ব্যক্তি—সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে থাকেন কমবেশি সবাই। একটা ভালো সিদ্ধান্ত জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। একটা ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে সারাজীবনের কান্না। সিদ্ধান্ত নিতে তাই সিদ্ধহস্ত হতে হবে।
সিদ্ধান্তকে আমরা দু’টো পাল্লায় রেখে মাপতে পারি। এক পাল্লায় ফেলা যায় ভারি সিদ্ধান্তগুলোকে, আরেক পাল্লায় হালকা বা ছোট ছোট সিদ্ধান্তগুলোকে। এরপর একটা ধাঁধা দেয়া যাক। বলুন তো পাঠক, কোন পাল্লায় ওজন বেশি হবে? ভারি সিদ্ধান্তের দিকে যারা মাথা ঝুঁকতে চাইছেন তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাচ্ছি তুলা আর লোহার ওজনের ধাঁধাটা। জীবনের সেরা সিদ্ধান্তগুলো তারাই নিতে পারেন, যারা ছোট ছোট সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সাথে নেন। ‘চা না কফি’ এমন অতি তুচ্ছ জিজ্ঞাসা’র জবাবে যারা ত্রিশ সেকেন্ড খরচ করে ফেলেন অবলীলায়, তাদের জন্য বড় বড় দ্বিধাগুলো কাটিয়ে ওঠা মুশকিল।
জীবনের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তকেই মণি-মুক্তার মতো করে মূল্যায়ন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেকোনো বিষয়ে বেশি ভাবলে কেঁচো-গণ্ডুষ করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। হাই-প্রেশার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কাছের মানুষের পরামর্শ নিতে পারেন। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অতীত অভিজ্ঞতার পর্যালোচনা করুন। আপনার এথিকস এবং লক্ষ্যের সহায়ক সিদ্ধান্ত নিন। যেকোনো সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব নিয়ে মোকাবেলা করুন। সিদ্ধান্ত নিতে বললেই যাদের গায়ে জ্বর আসে, তারা বেশি বেশি করে আত্ম-জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হোন। আপনার সিদ্ধান্ত আপনার সম্পদ—ব্যাপারটাকে এভাবেও ভাবতে পারেন। উপযুক্ত মনে হলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করুন। সবশেষে মনে রাখবেন বিখ্যাত বাংলা প্রবাদ, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে
- দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। ‘দ্য সুনার, দ্য বেটার’ কথাটি মেনে চলুন।
- নিজের উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না। ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
- নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখুন। সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অন্যের কাছে হাত পাতবেন না।
- গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বেলায় বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীর পরামর্শ নিন।
- পারিবারিক সিদ্ধান্ত নিতে সব সদস্যের মতামতকে গুরুত্ব দিন।
- সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেলে তার ভালো-মন্দের হিসাব কষতে উঠে-পড়ে লাগবেন না।
- অন্যের সিদ্ধান্তে কখনও নাক গলাবেন না; তা আপনার নাকটা যত লম্বাই হোক না কেন!