সময়োপযোগী পেশা ওয়েব ডেভেলপার

সময়োপযোগী পেশা ওয়েব ডেভেলপার

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৬ শতাংশ বা ৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, দেশের অধিকাংশ লোকেরই প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক আছে এবং এদের একটা বড় অংশ আবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এই ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বাড়ছে ওয়েবসাইটের সংখ্যা। প্রয়োজন হচ্ছে দক্ষ ওয়েব ডেভেলপারের।


ওয়েবসাইট : কোনো ওয়েব সার্ভারে রাখা ওয়েব পৃষ্ঠা, ছবি, অডিও, ভিডিও ও অন্যান্য ডিজিটাল তথ্যের সমষ্টিকে বোঝায়, যা ইন্টারনেট বা ল্যানের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যায়। ওয়েব পৃষ্ঠা মূলত একটি এইচটিএমএল ডকুমেন্ট, যা এইচটিটিপি প্রটোকলের মাধ্যমে ওয়েব সার্ভার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজারে স্থানান্তরিত হয়।

ওয়েব ডেভেলপার : ওয়েবসাইট তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত ওয়েব ডেভেলপার। আরেকটু বিশদভাবে বললে ওয়েবসাইট ডিজাইন করার পর তাকে ‘লাইভ’ করার মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে তারাই ওয়েব ডেভেলপার।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট : কায়েন্টের যাবতীয় রিকোয়ারমেন্ট যেমন সাইট স্ট্যাটিক হবে না ডাইনামিক, ল্যাঙ্গুয়েজ কী হবে, এডমিন এবং ইউজারের কতটুকু একসেস থাকবে, প্রাইভেসি-সিকিউরিটি ইত্যাদি যাতীয় ফুল ফিলাপ করে সাইট তৈরির যজ্ঞকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বলে।

যেভাবে ওয়েব ডেভেলপার হতে হবে : চাইলে যে কেউ বিশ্বসেরা ওয়েব ডেভেলপার হতে পারে। কিন্তু এর জন্য সবার প্রথম প্রয়োজন একাগ্রতা। আর প্রয়োজন প্রচুর পরিশ্রম ও সাধনা। আপনি যদি একাগ্রচিত্তে পরিশ্রম করতে রাজি থাকেন এবং ধৈর্যসহকারে আপনার সাধনা চালিয়ে যান তাহলে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন।

কেন ওয়েব ডেভেলপার : মানুষ এখন প্রতিদিনই ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ওয়েবসাইট তৈরি করছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় দক্ষ ওয়েব ডেভেলপারের সংখ্যা নগণ্য। কায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে ফ্রিলান্সার হিসেবে কাজ করতে পারেন। মার্কেট প্লেসগুলোতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ওয়েব ডেভেলপারের। পারিশ্রমিকও অন্য সব কাজের তুলনায় বেশি।

শিক্ষাগত যোগ্যতা : শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনো মাপকাঠি নয়, তবে ইংরেজিতে দক্ষ হলে মার্কেট প্লেসে খুব ভালো করা যাবে। এ ছাড়া ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ভালো টিউটোরিয়াল বা বই ইংরেজিতে সহজলভ্য। তবে এখন বাংলায়ও অনেক ভালো টিউটোরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে।

তৈরি হতে কতটা সময় প্রয়োজন : আপনার মেধা আর পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করছে তৈরি হতে কত সময় লাগবে। আপনি কত দ্রুত গোটা ব্যাপারটা গ্রহণ করতে পারছেন। এ ছাড়া আপনি কতটা সময় ব্যয় করবেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার জন্য তার ওপরও। তবে সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে যে কেউ মোটামুটি ভালো ওয়েব ডেভেলপার হতে পারে। আপনাকে অবশ্যই নতুন নতুন আপডেট সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে আপডেট করে নিতে হবে।

শুরুটা যেভাবে : ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার জন্য আপনাকে যে বিষয়গুলো জানতে হবে:

এইচটিএমএল : হাইপার টেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ (এইচটিএমএল) হলো একটি ফর্ম্যাট যাতে বিভিন্ন প্রকারের ফর্ম্যাটিং ও হাইপারলিংক ব্যবহার করা যায়। প্রকৃত অর্থে এটি কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নয়, বরং একটি মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ যা একসারি মার্কআপ ট্যাগের সমন্বয়। ইন্টারনেটে, তথা ওয়েবসাইটে এইচটিএমএল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই ফাইলের এক্সটেনশন .যঃস অথবা .যঃসষ উভয়ই হতে পারে। এইচটিএমএলের সর্বশেষ ভার্সন হলো এইচটিএমএল-৫। এর মাধ্যমে আপনি ওয়েবসাইটের কাঠামো তৈরি করবেন।

সিএসএস : ক্যাসকেডিং স্টাইলশিট (সিএসএস) একটি স্টাইলশিট ভাষার জন্য ব্যবহৃত বর্ণনা উপস্থাপনা ডকুমেন্টের লেখা একটি মার্কআপ ভাষা। ওয়েবপেজ স্টাইলশিটের মাধ্যমে অতিসহজেই ওয়েবপেজকে দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপন করা। এইচটিএমএলের মাধ্যমে একটি ওয়েবপেজ বাহ্যিক রূপ পায় আর সিএসএসের মাধ্যমে এর সৌন্দর্য পরিপূর্ণতা লাভ করে। মূলত সিএসএসের ব্যবহারে পেজ ডিজাইনিং প্রচুর সময় বাঁচে। ওয়েব ডিজাইনের দক্ষতা ওপরের ধাপ উন্নত করতে চাইলে ক্যাসকডিং স্টাইলশিটের (সিএসএস) কোনো বিকল্প নেই। সিএসএস একই ডকুমেন্ট একাধিকবার ব্যবহার হতে পারে এবং ডকুমেন্ট বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন স্টাইলে ব্যবহার করা যেতে পারে। একই স্টাইলশিট একাধিক পেজ কিংবা একাধিক স্টাইলশিট একই পেজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রোগ্রামিং ভাষা : আপনাকে কোনো একটা প্রোগ্রামিং ভাষা জানতে হবে। এটা মূলত ওয়েবসাইটের ইঞ্জিন। সাধারণত ওয়েব ডেভেলপাররা পিএইচপি শেখে। পিএইচপি মূলত সার্ভার-সাইড স্ক্রিপ্টিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণ, ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটা তুলনামূলক সহজ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি।

সিএমএস : কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস) হলো একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম (ওয়েব) যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কন্টেন্ট (লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি) সম্পাদনা, প্রকাশ ও পরিবর্তন করা হয়। এই ধরনের সিস্টেমে সাধারণত আগেই কিছু প্রসিডিওর বা ফাংশন লেখা থাকে যেগুলো পরিবর্তন করে কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। বিশাল ও জটিল কোড লেখার ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সিএমএস তৈরি করা হয়েছে। কয়েকটি জনপ্রিয় কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিএমএস হলো : ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, ম্যাজেন্টা, পিএইচপি-নুক ইত্যাদি।

আয়-রোজগার : ওয়েব ডেভেলপমেন্টে আয়-রোজগার সম্পূর্ণ নির্ভর করবে দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সদিচ্ছার ওপর। আপনি যদি নিজেকে একজন দক্ষ ডেভেলপার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে মাসে কয়েক লাখ টাকা সহজেই উপার্জন করা সম্ভব। এ জন্য প্রথমে টাকা-পয়সার চিন্তা না করে দক্ষতা বাড়ালে আয়টা স্থায়ী হবে এবং পরিমাণ বেশি হবে। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment