গবেষণা খাত : জ্ঞানে উপার্জন

গবেষণা খাত : জ্ঞানে উপার্জন

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

চাকরি খুঁজছেন হন্য হয়ে। না পেয়ে মাঝে মধ্যে হতাশ হয়ে পড়ছেন? নেই কোনো অভিজ্ঞতাও। অথচ বড় প্রতিষ্ঠান কিংবা বড় চাকরিতে জয়েনের পূর্বশর্ত হচ্ছে অভিজ্ঞতা। আপনার পোর্টফোলিওটাও নিস্তেজ আর হালকা! বলি, একটু ইতিবাচক মন নিয়ে নিজের দিকে তাকান। অন্যরা আপনার দিকে নেতিবাচক দৃষ্টি রাখুক। আপনি আস্থা খুঁজুন নিজের মধ্যে। ভাবনাটা একটু প্রসারিত করুন, বৃষ্টি ধোয়া দুপুরের মতো চারদিক একটু ভালো করে তাকান। দেখবেন, ঠিকই সহজ এবং ভালো একটা সুযোগ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। চাকরিটা একটু অন্যরকম। অনেকটা স্বাধীন এবং বুদ্ধিদীপ্ত। অথচ এতে প্রবেশ খুবই সহজ। চাকরির মান, সেলারিও স্মার্ট। আগ্রহ হচ্ছে কী? কীভাবে, কোথায়, কেমন করে এই সুযোগ অপেক্ষা করছে তা জেনে নিই-


কাজের ক্ষেত্র

দেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে অসংখ্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে কাজের সুযোগ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পাশাপাশি বিশেষ লোকবলের প্রয়োজন হচ্ছে। এই বিশেষ পদগুলোই হচ্ছে গবেষণার। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়; বর্তমানে ছোট-বড় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই আছে রিসার্চ সেন্টার। বাংলাদেশের বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা-ইন্স্যুরেন্স, ফার্ম, দেশি-বিদেশি এনজিও ইত্যাদিতে প্রতিনিয়ত গবেষণার কাজ হচ্ছে।

এসব প্রতিষ্ঠানে খুব স্মার্ট সম্মানী বা সেলারি দেওয়া হয় গবেষকদের। সাধারণত প্রজেক্ট বেসিস হয়ে থাকে এই গবেষণাগুলো। হয়তো কোনো এনজিও বিদেশি তহবিল পেল বাংলাদেশে একটা প্রজেক্ট রান করানোর জন্য। আর তখনই প্রয়োজন গবেষণার। ডাক পড়ে ভালো গবেষকদের। দেশি এবং বিদেশি সব প্রতিষ্ঠানেই গবেষণার সম্মানী বা সেলারির মান ভালো। তাই অনেকেই জীবনের একটা বড় সময় বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে গবেষণায় কাটিয়ে দেয়। এতে উন্নত জীবনযাত্রার পাশাপাশি মনের খোরাকও মেটানো সম্ভব। তবে টিচিং অ্যান্ড রিসার্চে ক্যারিয়ার গড়তে হলে আপনাকে হতে হবে নিষ্ঠাবান ও আত্মবিশ্বাসী।

মেধার জোরেই কাজ

চাকরিটা যখন গবেষণার, তখন এটাকে জ্ঞানের পাল্লায় তুলে দেওয়াই যায়। যেমন- কোনো প্রতিষ্ঠান আপনাকে দিল গ্রামীণ জনপদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে একটা গবেষণাপত্র উপস্থাপনের তখন থেকেই কিন্তু আপনি চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে গেলেন। আর হয়তো এমন একটা কাজ আপনি দীর্ঘদিন ধরে করতে চাচ্ছেন। হতে পারে এই আইডিয়াটা আপনারই। তারা আপনার আইডিয়াটা গ্রহণ করে আপনাকে এই কাজে নেমে পড়ার সব উস্কানির রসদ জুগিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণত প্রজেক্ট ও গবেষণার ওপরই নির্ভর করে এই চাকরিটা। সময়সীমাও আপনার এবং প্রতিষ্ঠানের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই নির্ধারণ হয়। অনেকেই শুরুতে ছোটখাটো গবেষণা করে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিটাকে দীর্ঘ করেন, তারপর বড়সড় গবেষণায় মনোনিবেশ। এর মাধ্যমে সমাজ এবং রাষ্ট্র যেমন উপকৃত হয় তেমনি জনপ্রিয়তাও পাওয়া যায় সহজে। আর রোজগার তো আছেই! সাধারণত আপনার মেধার জোরেই এ গবেষণাকে আপন করতে পারেন।

সময়সীমা

সর্বনিম্ন এক মাস ও সর্বোচ্চ দুই বছর। দুই বছরের বেশি সময় লাগে না সাধারণত কোনো গবেষণায়। যেহেতু এটা প্রজেক্টকেন্দ্রিক হয়ে থাকে, তাই প্রজেক্টের সময়সীমা হলো গবেষণার সময়সীমা। গবেষণায় নামার আগে ভালোভাবে নিয়মকানুন জেনে নিন। হ্যাঁ, এটা ঠিক, আপনি চাইলেই গবেষণার মাঝ পথে সরে আসতে পারেন। কিন্তু নৈতিকতা মেনে গবেষণা থেকে সরে না আসা আপনার জন্যই ভালো। হুট করে গবেষণা ছেড়ে দিলে আপনার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়তে পারে। তাই নয় কী? প্রতিষ্ঠানের সুবিধা-অসুবিধা না দেখলে আপনার গবেষণা জীবন খুব একটা সুবিধার হবে না, এটা বলাই যায়।

খোঁজখবর

অনলাইন জব পোর্টালগুলোতে নিয়মিত পাওয়া যায় এমন গবেষণার খোঁজখবর। কিছু প্রতিষ্ঠান দৈনিক পত্রিকাতেও গবেষণার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। নিয়মিত খোঁজখবর রাখলে সহজেই পেতে পারেন তথ্য। তবে এসবে না গিয়ে বরং সরাসরি সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে পারেন। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেরই গবেষণা ফিল্ডের আলাদা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আলাদা সাব ক্যাটাগরি থাকে। তাতেই পেয়ে যাবেন আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য। সবচেয়ে বড় কথা, গবেষকদের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না।

সুযোগ-সুবিধা

প্রতিষ্ঠান যদি ভালো মানের হয়, তবে প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই পেয়ে থাকেন একজন গবেষক। যেমন- ট্রান্সপোর্ট, বাসস্থান, বোনাস-ভাতা, বেতনাদি। তবে গবেষণায় সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো, এখানে আপনি পরিপূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। তা ছাড়া ভালো না লাগলে গবেষণায় ইতিও টানতে পারেন। তবে এমন না করাই ভালো। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে গবেষণা ছাড়তে পারবেন না এবং গবেষণাপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেয়। কিন্তু সেটা খুবই সীমিত প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। সুতরাং এদিক থেকে চিন্তা করলে গবেষণায় ক্যারিয়ার ঠিক করা অবশ্যই ইতিবাচক।

প্রশ্নের পিঠে স্বপ্ন

গবেষণা কিন্তু লার্নিং প্রসেস। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যে ধরনের কাজ আপনার কাছ থেকে আশা করছেন, সে বিষয়ে তাদের পরিপূর্ণ ধারণা না থাকাই স্বাভাবিক। ফলে কাজটা ভালো করে তাদের বুঝিয়ে দিন। আর বাকিটা বুঝতে চূড়ান্ত গবেষণাপত্রের অপেক্ষায় থাকতে বলুন। এতে গবেষণাপত্রের প্রতি তাদের আক্ষেপ আরও বেড়ে যাবে। আর আপনার গবেষণার তথ্য যার কাছ থেকে নেবেন বা যেই সোর্স থেকে সংগ্রহ করবেন। তার কাছ থেকে খুঁটিনাটি ভালো করে জেনে নিন। অজানা বিষয় নিঃসংকোচে জেনে নিন। একবারে তথ্য সংগ্রহ করতে না পারলে বারবার চেষ্টা করুন।

জানার মাঝে অজানাকে খোঁজার ঘোষণা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের মতো অনেকেই মনে করেন, যে বিষয়ের জ্ঞান আমাদের কাছে পরিপূর্ণতা পায়নি, সেই বিষয়টাকে যথাযথভাবে তুলে ধরার পদ্ধতিই হচ্ছে গবেষণা। আর সেই গবেষণাই যদি হয় আপনার রুটি রুজি, তবে এর চেয়ে ভাগ্যবান কেইবা আছেন! favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment