দেড় শ বছরের ইতিহাসে চায়ের সর্বোচ্চ উৎপাদন

দেড় শ বছরের ইতিহাসে চায়ের সর্বোচ্চ উৎপাদন

  • অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক

কার্তিকের শেষ পক্ষের বৃষ্টিতে সিলেটের চা-বাগানগুলো সজীব হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে তিন-চারদিনের বৃষ্টি ছিল চা-বাগানের জন্য বাড়তি পাওনা। বাগান সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই বৃষ্টি চা-বাগানের জন্য বড় আশীর্বাদ। এটি নভেম্বর-ডিসেম্বরের শেষ উত্পাদনে সহায়ক হবে। তবে বড় সুখবর হচ্ছে: চলতি মৌসুমে দেশে চা উৎপাদনে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে ৮০ মিলিয়ন কেজি উত্পাদনের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। গত মৌসুমে ৬৭ দশমিক ৩২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। এবার শুধু সেই রেকর্ডই অতিক্রম হচ্ছে তা নয়-এবার দেশের চা-শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদন হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ টি বোর্ড-এর অধীন চা-বাগান ব্যবস্থাপনা কোষ এর জিএম মো. শাহজাহান আকন্দ বলেন, ‘চলতি চা-উৎপাদন মৌসুমে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ মিলিয়ন কেজি বেশি উৎপন্ন হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এক কোটি ২০ লাখ কেজি বেশি চা-উৎপাদন হয়েছে। এবারের উৎপাদনের সকল রেকর্ড ভঙ্গ সম্পর্কে ঐ কর্মকর্তা বলেন, চা অত্যন্ত সংবেদনশীল ফসল। এর জন্য অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। এবার প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত, সঠিক তাপমাত্রা ছিল। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ছিল না। বিশেষ করে এবার খরামুক্ত ছিল বাগানগুলো। ফলে এবার দেশে বাম্পার চা-উৎপাদন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর চলতি চা-উত্পাদন মৌসুম শেষ। এই সময়ের মধ্যে চা-শিল্পে আবহাওয়াজনিত কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করছি না। আশা করছি এবার দেশে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৮০ মিলিয়ন কেজি চা-পাওয়া যাবে।’ এতে বাগানের শ্রমিকরাও বেশ খুশি। সমনবাগ চা-বাগানের শ্রমিক বধুভূমিজ, শান্তু নায়েকসহ অনেকেই বললেন, ‘বাগান আমাদের মায়ের মতো। বাগানই আমাদের সব। বাগান ভালো থাকলে,  আমরাও ভালো থাকি।’

১৮৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগান। ১৮৫৪ সালে দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা-উৎপাদন শুরু হয় এই বাগানে। সারা দেশের ১৬২ টি চা-বাগানের মধ্যে সিলেটেই আছে ১৩৮টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ চা-বাগান মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলে। আর কিছু বাগান রয়েছে সিলেট ও হবিগঞ্জে। এবার শুধু সিলেটে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজি চা-উৎপাদন হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৪ মিলিয়ন কেজি বেশি। অর্থাৎ গত বছর সিলেটে চা-উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজি।

শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, জানুয়ারি থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৪৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা  হয়েছে। যা চা শিল্পের জন্য খুবই উপকারী। চা বিশেষজ্ঞরা এ বৃষ্টিপাতকে চা শিল্পের জন্য আশীর্বাদ মনে করেন। এবার সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের পেছনে অনুকূল আবহাওয়া যদিও বড় কারণ ছিল। তারপরও চা-চাষ সম্প্রসারণ, সময়মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, সর্বোপরি চা-বোর্ডের নজরদারি এবং ক্লোন চা গাছের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে এবার সর্বোচ্চ চা উৎপাদন হচ্ছে। কুলাউড়ার সাতছড়ি, সিলেটের খান টি-স্টেট, সিলেটের মালনীছড়াসহ বিভিন্ন বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে চা-বাগানগুলো আরো সবুজ-সতেজ হয়ে উঠেছে।

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment