কেমন হবে করোনা পরবর্তী পৃথিবী?
- সুরাইয়া সুলতানা রিয়া
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি হচ্ছে কোভিড-১৯। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়েছে এই ভয়াবহ মহামারীর তাণ্ডব। এক দেশের পর আরেক দেশ, এক শহরের পর আরেক শহর, এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশ সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাস। এরইমধ্যে কতোজন হারালেন প্রিয়জন। কেউ কেউ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন সংক্রমিত হয়ে। অন্যেরা দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক নিয়ে সংক্রমিত হবার আশঙ্কাতে দিনযাপন করছেন। জীবন এবং জীবীকা দুই-ই পড়েছে ভয়াবহ হুমকির মুখে। কি হবে? কবে মিলবে মুক্তি তা আজ সকলেরই অজানা।
করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব আজ থমকে গেছে। থেমে গেছে সাধারণ জীবনযাত্রা। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত, সকল কর্মক্ষেত্র এখন জনমানবশূন্য। পৃথিবীর মানুষ যেন এক অদৃশ্য কারাগারে বন্দী। করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিলো পৃথিবীর কোনো দেশই সয়ংসম্পূর্ন নয়। কবে মুক্তি মিলবে এই ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি থেকে তা আজ বিশ্বের সকলেরই অজানা। সবার মধ্যেই একটা প্রশ্ন জাগ্রত হচ্ছে- তাহলে কেমন হবে করোনা পরবর্তী এই বিশ্বের চেহারা? বদলে যাবে কি পুরোনো সকল নিয়ম? তবে কি করোনা এই চেনা বিশ্বকে এক অচেনা রূপ দেবে? এমন অনেক প্রশ্নই ঘুরছে মানুষের মনে।
গবেষকদের মতে, করোনা পরিস্থিতি কে স্বাভাবিক করতে যে নিয়মনীতিগুলো মেনে চলতে হবে বা যে কাজগুলো করতে হবে দুর্ভাগ্যবশত কোনো দেশই এই কাজগুলো করছে না। পুরো বিশ্ব কেমন এক বৈকল্যে আক্রান্ত হয়েছে। মনে হচ্ছে এখানে কোন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নেই, সব অপ্রাপ্তবয়স্কদের দল। যেখানে এই জরুরী অবস্থার জন্যে অনেক আগেই বিশ্বকে আরো কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেবার দরকার ছিলো, সেখানে তেমন কঠোর ব্যবস্থা জারি করলেও মানছে না অনেকদেশ। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বকে স্বাভাবিক অবস্থাতে ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে এবং বিশ্বের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে বহুগুণ। বিশ্বের বহুদেশেই এর মধ্যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। উন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশ সবই হুমকির মুখে। মহামারীর পরেই মন্দা দেখা দেবে। বিশ্ব কি পারবে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে?
অর্থনীতি, শিক্ষাক্ষেত্র, খেলাধুলা, কর্মক্ষেত্র সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এই করোনা ভাইরাস। চেনা পরিচিত সকল নিয়মগুলো বদলে গেছে অচেনা নিয়মে। বিশ্বের বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্র এখন কাজ করছে অনলাইনে। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বেছে নিয়েছে এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে। বর্তমান বিশ্বের সবকিছুই হয়ে উঠেছে অনলাইননির্ভর। তবে কি কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো একদম বন্ধ হয়ে যাবে? এমন আশঙ্কও করছে অনেকে। গবেষকদের মতে- লকডাউনে বাসায় থেকেই অফিস করছেন বেশির ভাগ মানুষ। কাজ করার নতুন এই ধারা ভবিষ্যতেও বজায় থাকতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। তাঁদের মতে, মানুষ কাজ করবে বাসায় বসে, আর অফিস হয়ে যাবে কথার কথা। আবার আরেক দল বলছে, ভবিষ্যতের অফিসও অতীতের মতো হয়ে যাবে। অফিসে গিয়ে কাজ করার সংস্কৃতি না থাকলে দেখা দেবে বিভিন্ন সমস্যা।
করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই জীবনযাত্রায় পুরোনো মাত্রা ফিরে আসবেন বলে আশা করছেন অনেকে। এই করোনা ক্রান্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে পুরো বিশ্বকে একটি সংহতিতে আসতে হবে।গবেষকের মতে- “মানব সম্প্রদায়কে এখন একটা রাস্তা বেছে নিতে হবে। আমরা কি বিভেদের রাস্তায় হাঁটবো না বেছে নেবো সংহতির পথ? বিভেদের পথ বেছে নিলে এখনকার পরিস্থিতি যে শুধু আরো খারাপের দিকে যাবে, শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতেও পরতে হবে আরো বড় কোন বিপদে। আর যদি আমরা বেছে নিই সংহতির পথ, বিজয়টা শুধু করোনা ভাইরাসের বিপক্ষেই হবে না, হবে ভবিষ্যতের সমস্ত সংকটের বিরুদ্ধেও।”
পুরো বিশ্বে স্বাস্থ্য সচেতনতার একটা নতুন তরঙ্গ তুলেছে এই কোভিড-১৯। এটাই একমাত্র মাধ্যম এই মহামারি থেকে মুক্তি লাভের। আর আমরা তো জানিই, ঘন-কালো অন্ধকার রাতের শেষে ঠিকই আলোভরা একটি সূর্য ওঠে। তাই এখন কেবল সেই সূর্যেরই অপেক্ষা। আমাদের জানা নেই কবে থামবে এই মৃত্যুর মিছিল, আবার কবে মানুষ শঙ্কাহীনভাবে অপরকে জড়িয়ে ধরবে। কবে এই মুখোশ খুলে মুক্ত বাতাসে মানুষ শ্বাস নেবে, তা অনুমান করা দুঃসাধ্য। হতে পারে কয়েক মাস অথবা বছর লেগে যাবে পরিস্থিতি ঠিক হতে। তবে নিশ্চিত যে মানুষ আবারও উঠে দাঁড়াবে। নতুন অভিজ্ঞতায়, নতুনভাবে শুরু করবে সবকিছু।প্রতিটি বড় বিপর্যয়ের পর এমন নতুন ভাবেই শুরু হয়েছে সবকিছু।