শিশুদের করোনা হওয়ার ঝুঁকি কম কেন?

শিশুদের করোনা হওয়ার ঝুঁকি কম কেন?

  • স্বাস্থ্য ডেস্ক

শিশুদের আমরা সব সময় প্রাণবন্ত দেখতে চাই। কিন্তু দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা অতিমারিকালে শিশুদের মধ্যেও করোনাঝুঁকি ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছর করোনার যে ভেরিয়েন্টগুলো ছিল, সেগুলো শিশুদের সেভাবে আক্রান্ত করেনি। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ডেলটা ভেরিয়েন্টটা মারাত্মক। এই ভেরিয়েন্টে সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু-কিশোরনির্বিশেষে। এই ভেরিয়েন্টটা আবার বেশি ছোঁয়াচে। এ বছর আগের তুলনায় পরীক্ষাও বেশি হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার অনেক শিশু আক্রান্ত হচ্ছে।

 শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

মাইল্ড সিনড্রোমে জ্বর হয়। বেশি বা কম হতে পারে। ক্ষুধামান্দ্য হবেই। দুর্বল হয়ে যাওয়াটাও কমন। কাশি, সর্দি তো আছেই। শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে, না–ও পারে। শ্বাসের গতি বুকের খাঁচা দেখে বোঝা যাবে। অক্সিমিটার দিয়ে মাপা যাবে। মাথাব্যথা থাকতে পারে। আসলে কোভিডের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে পারে। নিউমোনিয়ার সব লক্ষণ থাকতে পারে। সবচেয়ে মারাত্মক লক্ষণ হলো ১০২-১০৩ ডিগ্রি জ্বর, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, জিবও স্ট্রবেরির মতো লাল হয়ে যাওয়া, শরীরে র‌্যাশ হওয়া, খুবই দুর্বল হয়ে পড়া। পরের এই লক্ষণগুলো কেবল শিশুদেরই হয়।

একটা শিশু যত কম বয়সে আক্রান্ত হবে, তার ক্ষতি তত কম হবে। এক দিনের শিশুও করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে লক্ষণ কম প্রকাশ পাবে। কোভিড যে রিসেপ্টরের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে, শিশুদের ক্ষেত্রে সেই রিসেপ্টর ‘ইমম্যাচিউর’ থাকে। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তা ছাড়া শিশুদের ইনহেলিং টেন্ডেন্সি ভালো থাকে। দূষণের মধ্যে থাকে না। ধোঁয়ায় থাকে না। ধূমপান করে না। তাই আমাদের লাংস থেকে শিশুদের লাংস অনেক হেলদি হয়। তা ছাড়া শিশুদের ভাইরাল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই ভাইরাসের বিপরীতে তাদের আগে থেকেই প্রতিরোধব্যবস্থা ভালো থাকে। তাই শিশুরা আক্রান্ত হলেও সেটা মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা কম।

করোনায় আক্রান্ত শিশুদের আইসোলেশনে রাখা কঠিন। ডাবল মাস্ক পরিয়ে রাখতে হবে। যিনি পরিচর্যা করবেন, তাকেও ডাবল মাস্ক পরিয়ে রাখতে হবে। করোনার কোনো ওষুধ নেই। লক্ষণভেদে ওষুধ দেওয়া হয়। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল, বমি থাকলে সেটার ওষুধ এরকম। অ্যান্টিহিস্টামিন দেওয়া যেতে পারে। সার্বিকভাবে প্রচুর লিকুইড খাওয়াতে হবে। ফলের রস খাওয়াতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে। শর্করা, উদ্ভিজ্জ আর প্রাণিজ প্রোটিন, শাকসবজি, দুধ–পানি, সাপ্লিমেন্টেশন (ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, সি, ডি, জিংক; এগুলো যদি স্বাভাবিক সোর্স থেকে পাওয়া যায়, খুবই ভালো হয়)। ৯টা থেকে ১০টা এই এক ঘণ্টা শিশুকে রোদে রাখা ভালো।

শিশুর জ্বর যদি কিছুতেই না কমে, অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যায়, কিছু খেতে না পারে, খুব বেশি বমি করে, শ্বাসকষ্ট হয় বা একেবারেই প্রস্রাব করতে না পারে—এই ধরনের ‘রেডফ্ল্যাগ’ থাকলে তাকে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে বা বাচ্চাদের করোনা চিকিৎসা হয়, এমন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

শিশুদের পোস্ট–কোভিড জটিলতা অন্যদের মতো জটিল নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে কোভিডের পর নিউমোনিয়া হতে পারে। যে শিশুদের হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস টাইপ ওয়ান, ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে বা আগে ছিল, তাদের ক্ষেত্রে পোস্ট–কোভিড সিনড্রোম প্রকট হতে পারে।

সুত্র: প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment