বলিউডের সোনালী দিনের পথ প্রদর্শক ছিলেন যিনি
- আবু রিফাত জাহান
“মাঝে মাঝে পুরনো দিনকে মনে করা শরীরের জন্য ভালো”- (সিনেমা – ‘মেরা নাম জোকার’)
ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক রাজ কাপুরের দেয়া এই সংলাপের সেই পুরনো দিন, আজ ভারতীয় সিনেমা জগতের সোনালী দিন যা বর্তমান প্রজন্মের বলিউড বাসিন্দারা তো আছেই, পাশাপাশি বিশ্ব সিনেমার বহু কলাকুশলীরা মনে ধারণ করে বেড়ে উঠেছে। তাই এখনো বিশ্ব ব্যাপি মানুষ স্মরণ করছে তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে; তার পুরনো কাজের অপ্রকাশিত ছবি প্রকাশের মাধ্যম, আর তার বলা সংলাপ পোস্ট করার মাধ্যমে; আর সাথে বলিউডপ্রেমীদের হ্যাশট্যাগে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা তো আছেই।
রণবীর রাজ কাপুর (জন্ম-১৯২৪ সালে) যাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সেরা পথপ্রদর্শক রুপে আখ্যায়িত করা হয়, ১৯৮৮ সালের ২রা জুন, ৬৩ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রভাবশালী এই অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক ১৯৭১ সালে ভারতীয় সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’- এ সম্মানিত হোন। এছাড়া তিনি অসাধারণ সব কাজ সৃষ্টির মাধ্যমে ৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও মোট ১১ বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। একসময় পুরো বলিউড জগতই ছিল ‘নিউ ওয়েভ ফিল্মের জনক’ খ্যাত এই কিংবদন্তির হাতের মুঠোয়। তাই কাপুর পরিবারের এই সদস্য বলিউড পাড়ায় বিভিন্ন নামে পরিচিত পান। তার মধ্যে বহুল ব্যবহৃত ছিল ‘দ্যা বলিউড শোম্যান’।
বিখ্যাত পাঞ্জাবি হিন্দু ‘কাপুর’ পরিবারের, বাবা পৃথ্বীরাজ কাপুর ও মা ‘রমা’ দেবী কাপুরের ৬ সন্তানের মধ্যে জেষ্ঠ্য রাজ কাপুরদের আদি নিবাস ছিল বর্তমান পাকিস্তানের পাখতুনখোয়াতে। পরিবার সহ ভারতে চলে আসার পর মাত্র ১০ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ইনকিলাব’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনেতা রাজ কাপুরের সিনেমা জগতে অভিষেক হয়। ১৯৪৮ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে রাজ কাপুর নিজস্ব স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত করেন আর.কে. ফিল্মস নামে। ১৯৪৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘আন্দাজ’ প্রচুর ব্যবসা সফল হলে ভারতীয় সিনেমা জগতে রাজ কাপুরের আধিপত্যের জানান দেয়া শুরু হয়।
তার নিজস্ব প্রযোজনায় করা ১৯৫১ সালে ‘আওয়ারা’, ১৯৫৫ তে ‘শ্রী ৪২০’, ১৯৫৬ তে ‘চোরি চোরি’ ও ‘জাগতে রাহো’ এবং ১৯৬০ সালে ‘জিস দেশ ম্যা গঙ্গা বেহতে হ্যায়’ সবগুলো সিনেমাই সফলতার মুখ দেখে। পাশ্চাত্য চার্লি চাপলিনের বিখ্যাত অভিব্যক্তি তার সিনেমাগুলোতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে তা অভিনয়ের মাধ্যমে এবং দর্শকপ্রিয়তাও লাভ করে।
এধরনের বহু চলচ্চিত্রের নির্মাতা, পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবে বলিউড পাড়ার শোম্যান ছিলেন অনবদ্য। তিনি তার পুত্রদেরও তার সিনেমার মাধ্যমে পরিচিত দেন। ১৯৭০ সালে প্রয়াত অভিনেতা ঋষি কাপুরকে ‘মেরা নাম জোকার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিষেক ঘটানো হয়। রাজ কাপুরের নির্মাণেই ঋষি কাপুরের পরবর্তী সিনেমা ‘ববি’ পুরো বলিউড জগতের ভক্তদের সিনেমার স্বাদই পরিবর্তন করে দেয়। নতুন প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীর আবেগঘন ভালোবাসাকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই সিনেমা প্রচন্ড ব্যবসা সফলতা লাভ করে।
১৯৮৭ সালে ভারত সরকার কর্তৃক ভারতের চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার’ গ্রহণের জন্য মঞ্চে যাবার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে যান এবং এরপর থেকেই শারিরীক অবনতির শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের ২রা জুন হাঁপানী সংক্রান্ত জটিলতায় বলিউড এই মহাতারকার দেহবসান ঘটে। বলিউডের আজকের সোনালী দিনের যিনি পথপ্রদর্শক, তার জন্য তাই ভালোবাসার কমতি নেই লক্ষ-কোটি বলিউডপ্রেমিদের।