রঙ্গনের ‘রঙ্গিন’ স্বপ্ন

রঙ্গনের ‘রঙ্গিন’ স্বপ্ন

  • মো. আসাদুজ্জামান, সাভার

পুরো নাম আমির হোসেন রঙ্গন। পেশায় ডিজাইনার। ক্ষীয় ফ্যাশন হাউজের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। তবে পাট দিয়ে পোশাক তৈরী করে ইতিমধ্যেই বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ জুট অ্যান্ড ইকোনোমিক রেভ্যুলেশন’ শিরোনামে ৮ দিনব্যাপী পাটপণ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। রঙ্গন স্বপ্ন দেখেন বিশ্ববাজারে নিজের তৈরি পাটপণ্য একদিন রপ্তানি হবে।

ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছেন পাটকলে চাকরি করতে। বাড়িতে সেলাই মেশিন দিয়ে গার্মেন্টসের কাজ করেছেন মা। বাবার চাকরির সুবাদে নিজেও পড়েছেন পাটকলের অবৈতনিক স্কুলে। মাঝে মাঝে স্কুল ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে পাটকল দেখতে যেতেন। পরক্ষণেই আবার শিক্ষকের বেতের কথা মনে পড়লে কষ্ট পেতেন। আর ভাবতেন, ইস! আমি যদি এই পাটকলের মালিকের ছেলে হতাম। তাহলে বোধ হয় কোন সমস্যা হত না। পিতামাতার নিম্ন আয়ের কারণে সংসারে অভাব লেগেই থাকত। দেখেছেন দরিদ্র বাবার দীর্ঘ ৪৫ বছরের চাকরির পেনশনের টাকা না পাওয়ার বেদনা। যার কষ্টে বাবাকে হারালেন অল্প বয়সেই। যে কষ্ট এখনও তাড়া করে বেড়ায় রঙ্গনকে। তাই নিজেই শুরু করেন কাজ।

index3প্রথমে সেলাই শেখা, তারপর ডিজাইন করা। পর্যায়ক্রমে ফ্যাশন হাউজের প্রতিষ্ঠা পায় তার হাত ধরেই। সেখানে বাবার পাটকলের ‘পাট’ আর মায়ের গার্মেন্টস শিল্পকে একত্রে নিজেই পাটপন্যে নিয়ে কাজ শুরু করলেন। রঙ্গন পাট দিয়ে তৈরী করেন প্যান্ট, শর্টস, শার্ট, লেডিস ওভারকোর্ট, টপস ব্লেজার, জেন্টস কোর্ট, কটি, মুজিব কোর্টসহ আরো পরিধেয় পোশাক।

শুরুতে দুরাবস্থা পাড়ি দিলেও এখন স্বপ্ন দেখছেন বড়কিছু করার। এ জন্য কথা বলেছেন পাটের জিনতত্ত¡ আবিষ্কারক মাকসুদুল আলমের সাথে। কথা হয়েছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের অনেকের সাথেই। পেয়েছেন সাহস-উদ্যম ও নতুন করে কাজ করার প্রেরণা। হারিয়ে যাওয়া পাটশিল্পকে আবার ফিরিয়ে দিতে চান তিনি। হাসি ফোটাতে চান লক্ষ-কোটি কৃষকের মুখে।

কীভাবে এটি সম্ভব এমন বিষয়ে জানতে চাইলে রঙ্গন জানান, ‘কারখানাগুলোতে তুলার বদলে সুতা তৈরিতে ব্যবহার হবে পাট, যা দিয়ে তৈরি হবে পোশাক। রপ্তানি হবে বিদেশের বাজারে। এতে চাষীরা আবার পাট উৎপাদনে উৎসাহী হবে এবং কমে যাবে পোশাক তৈরীর খরচ। একটা প্যান্ট তৈরি করতে তুলার প্রয়োজন পড়ে ২৫০ গ্রাম বা তার কিছু বেশি। প্রথমে ফেব্রিকস তৈরি করা হয়, তারপর সেটা দিয়ে প্যান্ট। এতে যে পরিমাণ তুলা লাগে, তার দাম ১০০-১১০ টাকা (১ কেজি তুলার দাম ৩.৫ ডলার বা ২৮০ টাকা)। আমাদের দেশে যেহেতু পাট স্বাভাবিকভাবে প্রতি মণ ১২-১৫শ টাকার মধ্যে কেনা যায়, সেক্ষেত্রে আধা কেজি বা তার কিছু বেশি পাটের জন্য ব্যয় করতে হয় ১০-১৫ টাকা। অর্থাৎ কাঁচামালেই খরচ কমানো যায় ৬-৭ গুণ।

বর্তমানে পাটের বাজারের যে সঙ্কট রয়েছে তার চ্যালেঞ্জ তিনি পণ্যের চাহিদা দিয়ে মেটাতে চান। বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করবেন। এতে দেশি-বিদেশি ক্রেতারা আকৃষ্ট হবেন। এটা দেখে তার মতো অনেকেই কাজে নামবে, তখনই পাটের চাহিদা দৃশ্যমান হবে। শীতপ্রধান দেশগুলোকে টার্গেট করে ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া মত দেশগুলো পণ্য রপ্তানি করবে। এতে সাফল্য আসবে বলে তিনি মনে করেন।

নিজেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তৈরী করেছেন মুজিব কোট। তিনি তাকে উপহার দিতে চান। যাতে প্রধানমন্ত্রী তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং লক্ষ মানুষের পেশা যে পাটের সাথে জড়িত সেদিকে মনোযোগ দেন। বন্ধপাটকলগুলো যাতে অচিরেই খুলে হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment