এগিয়ে যাক দেশীয় ফ্যাশন শিল্প
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
যারা এক সময় কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছেন পোশাকে-ফ্যাশনে দেশীয় চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে, তাদের দেখানো পথ ধরে ফ্যাশন জগতে শৈল্পিক বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছে। ফ্যাশন হাউসগুলোর নানামাত্রিক উদ্যোগের ফলে দেশের মানুষের পোশাক কেনার অভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে শুধু ঈদ-পূজায় কেনাকাটা হলেও এখন- বাংলা নববর্ষ, মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ফাল্গুন-বসন্তসহ দিবস ও উৎসব-উপলক্ষকেন্দ্রিক পোশাক কেনার প্রবণতা বেড়েছে। জানা গেছে- বর্তমানে প্রায় শতাধিক ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউস তাদের স্বনামে নিজস্বতায় শিল্পমাত্রা ঠিক রেখে দেশীয় ফ্যাশন শিল্পকে উজ্জ্বল দিগন্তে ধাবিত করেছেন। বলা যায় দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ধারণ করে দেশীয় কাপড়, দেশীয় বুনন, রং ও নকশার বৈচিত্র্যে এসব পোশাক উৎসব-পার্বণকে সঙ্গী করে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এক সময়ের ঘরোয়া বা শৌখিন আঙ্গিকে গড়ে ওঠা ছোট বুটিক হাউসগুলো সময়ের বিবর্তনে নামীদামী ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে ইতোমধ্যে। উল্লেখ করা যেতে পারে আড়ং, অঞ্জন’স, নিপুণ, কে-ক্র্যাফট, রঙ, নগরদোলা, সাদাকালো, প্রবর্তন, শ্রদ্ধা, বাংলার মেলা, অন্যমেলা, নিপুণ, নবরূপা, গ্রামীণ চেক, নীলাঞ্জনা, ওজি, বিবিআনা, দেশালসহ আরও শ্রুতিমধুর অনেক নাম। আশার খবর হলো- এদের মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরেও বিস্তৃতি ঘটিয়ে রফতানি শুরু করেছে।
কোটি টাকার বৈশাখী বাণিজ্য
দেশীয় ফ্যাশন হাউসের তৈরি পোশাক বাইরের আমদানি করা পোশাকের চেয়ে অনেক উন্নতমানের। সুতার মান ভাল। রঙে আছে স্থায়িত্ব। দামে সাশ্রয়ী। পরিধেয় হিসেবে আরামদায়ক। দেশি কাপড় অনেক মানসম্মত ও টেকসই কিন্তু গ্রাহকদের কাছে ভারতীয়-পাকিস্তানীসহ বিদেশী কাপড়ের প্রতি আগ্রহ বেশি। তারপরেও বাহারি রঙের মসলিন, সুতি, সিল্ক, জর্জেটের মতো দেশী কাপড়ে নিত্যনতুন ডিজাইনে চমৎকার শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, স্কার্ট, সালোয়ার কামিজসহ গৃহস্থালি সরঞ্জামের কদর বাড়ছে। ছোট বড় মিলিয়ে দেশে এখন ফ্যাশন হাউসের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। বছরে টার্নওভার ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
নীরবে বিকশিত হলেও প্রচার সীমিত
দেশীয় ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে সব বয়সী মানুষের। বিশেষত তরুণদের অধিক আগ্রহই এ শিল্পের মোক্ষম ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারপরেও সত্যি হলো- ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে ধারণের পাশাপাশি গুণগত মানে দেশীয় ফ্যাশনগুলো এগিয়ে থাকলেও প্রচারণায় অনেক পিছিয়ে আছে। দেখা গেছে রাজধানীকেন্দ্রিক কিছু বিক্রয়কেন্দ্রে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো পোশাক বিক্রিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বা সিলেটে নামীদামী ফ্যাশন হাউসের দুই-একটি বিক্রয়কেন্দ্র থাকলেও দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে তাদের পণ্য অনুপস্থিত। যে কারণে আগ্রহ থাকলেও হাতের নাগালে না পাওয়ায় দেশীয় ফ্যাশন হাউসের পণ্য কিনতে পারছে না এ প্রজন্মের দেশীয় সংস্কৃতির অনুরাগী ক্রেতারা।
দেশীয় পণ্যে ফ্যাশন উদ্যোগ
দেশীয় বস্ত্রের এবং দেশীয় তাঁতীদের তৈরি পোশাকের বাজার তৈরির বিষয়কে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হলো ফ্যাশন উদ্যোগ বৈশাখী ফ্যাশন শো- ১৪২৩। অনুষ্ঠিত আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আজকের এই আয়োজন আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই। ফ্যাশন মূলত তরুণদের জন্য। তবে সেখানে জায়গা আছে সবার। পহেলা বৈশাখ একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এখানে সকল শ্রেণী যুক্ত হয়। গত কয়েক বছরে এই উৎসবের সঙ্গে পোশাকও যুক্ত হয়েছে। যা আমাদের ঐতিহ্যের বাইরে নয়।’
ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ [এফইএবি] আয়োজিত ফ্যাশন শোতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট আবদুল মতলুব আহমাদ ও বরেণ্য অভিনেতা আফজাল হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমাদের ফ্যাশনে নক্সার পরিবর্তন এসেছে। তবে গুণগত মানের দিকেও বিশেষ অনুরোধ করব ফ্যাশন হাউস মালিকদের প্রতি।’ এই আয়োজনের বিশেষ আর্কষণ ছিল ফ্যাশন শো শেষে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল জলের গানের মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনা। বছরব্যাপী দেশীয় পোশাকের ক্যাম্পেইন শুরুর উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ফ্যাশন উদ্যোগ বৈশাখী ফ্যাশন শো ১৪২৩, ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ [এফইএবি]-এর প্রথম আয়োজন।
কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদের কোরিওগ্রাফিতে ফ্যাশন শো তে অঞ্জন’স, দেশাল, নিপুণ, এবি ফ্যাশন মেকার, এম ক্র্যাফট, বিবিয়ানা, কে ক্রাফট, রং বাংলাদেশ, সাদাকালো, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, মিয়াবিবিসহ এফইএবির সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশাখী পোশাকে র্যাম্পের রানওয়ে আলোকিত করেন দেশ সেরা মডেলরা। র্যাম্পে দেশীয় পোশাকে মডেলদের সরব উপস্থিতি মুগ্ধ করে উপস্থিত সকলকে। এফইএবির নেতারাসহ সদস্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যেক্তারা, সাংবাদিক, আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে জমকালো এই ফ্যাশন শো’কে ঘিরে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। আগামী দিনে দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বছরব্যাপী এমন নিয়মিত আয়োজন থাকবে বলে জানানো হয় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আজহারুল হক আজাদ এবং রঙ বাংলাদেশের স্বত্ত্বাধিকারী সৌমিক দাসের পক্ষ থেকে।