সয়াবিন গাছে কৃষকের স্বপ্ন
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
আবহাওয়া অনুকূলে। পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ নেই। বাম্পার ফলনের প্রত্যাশায় চলছে নিত্য যতœ। চলছে আগাছা দমন ও সার-ওষুধ প্রয়োগ। এভাবেই দিনে-দিনে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে সয়াবিন গাছ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষকের স্বপ্ন। চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সোনার ফসল সয়াবিনকে ঘিরে তাই জেলার কৃষকদের স্বপ্নও অনেক। লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন চলছে সয়াবিন খেতের পরিচর্যা। সয়াবিন চাষীদের এখন কোন স্বস্তি নেই। সকাল থেকে বিকেল অবধি, ছাতিফাটা রোদে পুড়ে তির-তির করে বাড়ন্ত সয়াবিন গাছের পরিচর্যা করে চলেছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ, চরগাজি, চর পোড়াগাছা, চরলক্ষ্মী, চর আলেকজান্ডার, চর বাদাম, চর সীতা; কমলনগর উপজেলার চর ফলকন, চর জাঙ্গালিয়া, চর কালকিনি, চর মার্টিন, চর লরেন্স; সদর উপজেলার চর রমনিমোহন, চর মনসা, চর উভুতি, টুমচর এবং রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জসহ জেলার প্রায় সর্বত্র এবার সয়াবিনের আবাদ হচ্ছে। এছাড়া মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরগুলোতেও সয়াবিনের চাষ করা হয়েছে।
ওইসব এলাকার কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে রবি মৌসুমে সয়াবিনের আবাদ করে আসছেন। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবার তারা সয়াবিনের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন। একাধিক সয়াবিন চাষীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বীজ সংগ্রহ ও বুনতে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যথাসময়েই বীজ থেকে চারা গজিয়েছে। চারা গজানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর থেকেই আগাছা দমন চলছে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দেয়া হচ্ছে। রুমার্টিন এলাকার বর্গাচাষী দীন মোহাম্মদ জানান, খেতের আগাছা পরিষ্কার করে সার প্রয়োগ ও ভিটামিন জাতীয় কিছু ওষুধ স্প্রে করেছেন। এখন পর্যন্ত খেতে কোন রোগ-বালাই দেখা দেয়নি। লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ৫ টি উপজেলায় ৪৮ হাজার ৫১৭ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে।
এবার ৮৮ হাজার ৩০১ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে বলে তার আশা। লক্ষ্মীপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, সয়াবিন খেতে প্রতি বর্গফুটে ৫ থেকে ৬টি গাছ রাখা ভাল। ঘনগাছ সরিয়ে ফেলতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। রোদে জমি শুকিয়ে গেলে-ফুল আসার সময় প্রথম সেচ এবং গুঁটি গঠনের সময় দ্বিতীয় সেচ দিতে কৃষকদের বলা হয়েছে। কৃষকরা পরামর্শ নিয়ে যথাযথ পরিচর্যা করছেন। কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক ভূঁইয়া বলেন, পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই যাতে আক্রমণ করতে না পারে সে ব্যাপারে কৃষি বিভাগ সতর্ক রয়েছে। ভাল ফলন পেতে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে চাষীদের বলা হচ্ছে। সয়াবিন তেল জাতীয় শস্য। সয়াবিন গাছ ৩০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। গাছের কাণ্ডে ফুল ধরে। ফুল থেকে শিমের মতো বীজ জন্মে, ওই বীজই মূলত সয়াবিন। সয়াবিন ভোজ্য তেলের প্রধান উৎস ওই বীজ।