শূন্য থেকে কোটিপতি
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
দেশি শিং মাছ ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে জয়ী যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া বর্মনপাড়া গ্রামের রামপ্রসাধ বর্মন। বর্তমানে ২১ বিঘার ৫টি পুকুরে তিনি প্রতিবছর ৮৮ মেট্রিক টন দেশি শিং মাছ উৎপাদন করছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। এতে তিনি যেমন আর্থিকভাবে সাফল্যের মুখ দেখেছেন, তেমনি তাকে দেখে উৎসাহিত হয়ে আরও অনেকেই এই শিং মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
রামপ্রসাধ যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া বর্মনপাড়া গ্রামের জ্যোতিষ বর্মনের ছেলে। তার বর্মন মৎস্য খামারের শিং মাছ সারাদেশের বাজারে যাচ্ছে। রামপ্রসাধের দিন বদলের গল্প এলাকার অনেকের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। যদিও দু`মুঠো ভাতের জন্যই বই খাতা রেখে একদিন পথে নেমেছিলেন তিনি। আর আজ তিনি আদর্শ ও সফল চাষি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
রামপ্রসাধ বর্মন জাগো নিউজকে জানান, গ্রামের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন তিনি। ১৯৭৮ সালের কোন একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন ভাত নেই। ক্ষুধার কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে লোকের পুকুরে জাল টানার কাজে নেমে পড়েন। ২ টাকা হাজিরায় জাল টানা শুরু হয়। তার উপার্জনের টাকায় চলতো সংসার। এভাবে কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজেই মাছ চাষের আগ্রহী হন। ৩/৪ বছর পর মুড়লি এলাকায় ছোট্ট একটা পুকুর লিজ নেন। সেখান থেকেই মাছ চাষ শুরু। ওই পুকুরে উৎপাদিত জাপানি মাছ বিক্রি করে চার হাজার টাকা আয় হয়। সেই টাকা দিয়ে আবার পুকুর লিজ নিয়ে শুরু হয় তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রামপ্রসাধকে।
বর্তমানে তিনি নিজেই সাত একর জমির ৫টি পুকুরের মালিক হয়েছেন। এছাড়া ৬টি পুকুর লিজ নিয়েছেন। এখন তিনি ৫টি পুকুরের মোট ২১ বিঘা জলকরে দেশি শিং মাছের চাষ করছেন। ২০০৯ সাল থেকে তার ২১ বিঘা পুকুরে চলছে এই মাছের চাষ। দামও ভালো। দেশের বাজারে চাহিদাও রয়েছে। প্রতিবছর ৮৮ মেট্রিক টন শিং মাছ উৎপাদন হচ্ছে তার পুকুরে। যার বাজার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। এই শিং মাছ বদলে দিয়েছে জীবনের চিত্র। তিন মেয়েসহ ৫ জনের সংসারে আজ নেই কোন ক্ষুধার কষ্ট। পুকুর ছাড়াও তিনি ৩৫ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন মাছ চাষ করে। তার খামারে ১৫ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
রামপ্রসাধ বর্মন বলেন, দেশীয় প্রজাতির শিং মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। মাছ ধরে রাখার জন্য ৫টি পুকুরে শুধু শিং মাছ উৎপাদন করছি। মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, ফরিদপুরের ভাংগা, ঝিনাইদহ, বরিশাল, মাগুরাসহ সারাদেশে শিং মাছ বিক্রি হয়। তবে মাছ বাজারজাত করতে কিছু সমস্যার মুখোমুখিও হতে হয় বলে জানান তিনি।
যশোর জেলা মৎস্য চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল করিম আনু জাগো নিউজকে বলেন, রামপ্রসাধ শিং জাতীয় মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেকে উৎসাহিত হচ্ছেন। তিনি একজন আদর্শ মাছ চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রজমান আলী জাগো নিউজকে বলেন, রামপ্রসাধ দেশীয় শিং জাতীয় মাছ চাষ করছেন। দেশীয় শিং জাতীয় মাছ চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তিনি। এই মাছ চাষে মৎস্য বিভাগও তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করে থাকে।