বগুড়ার উদ্যোক্তারা চান শিল্প প্লট
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
সরকার গ্যাস দেবে না জেনেও শিল্পকারখানা করার জন্য প্রস্তুত শিল্পনগরী ও উত্তরবঙ্গের ১১ জেলার প্রবেশদ্বার বগুড়ার উদ্যোক্তারা। তাঁরা চান সরকার শুধু প্লট দিক, বাকিটা নিজেরাই করবেন। কেউ কেউ জমি কিনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় কারখানা করছেন ঠিকই, কিন্তু বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই চান শিল্প প্লট।
কিন্তু সরকার দুই যুগের বেশি সময় ধরে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। দ্বিতীয় শিল্পনগরী ‘করা হবে, করা হবে’ বলতে বলতেও হয়নি। নতুন করে বলা হচ্ছে কৃষি শিল্পনগরী ও অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। আর এদিকে একেক সময় একেক আশ্বাস দেওয়ার কারণে কোনোটার প্রতিই তেমন আস্থা রাখতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। ফোরাম অব অ্যাগ্রো মেশিনারিজ ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড প্রসেসিং জোনের (ফার্মপজ) সভাপতি গোলাম আজম বলেন, ‘অন্যগুলোও হোক। তবে আরেকটি বিসিক শিল্পনগরী হওয়া বেশি জরুরি। আদতে কোনটি হবে, কবে হবে—কোনো কিছুর প্রতিই আস্থা রাখতে পারছি না।’ নাম না প্রকাশের শর্তে অনেক উদ্যোক্তাই এমন অনাস্থার কথা জানান।
তবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, অনাস্থার কোনো কারণ নেই। অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। অন্যগুলোও বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরীর অনেক প্লটে যেখানে ছাগল চরে, বিস্ময়করভাবে বগুড়ায় সেখানে ২৩০টি প্লট শেষ হয়ে গেছে ২৫ বছর আগেই। মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় সব প্লটেই কারখানা চালু। প্রকৌশল, খাদ্য ও সহায়ক, ওষুধ, সিরামিক ইত্যাদি কারখানা রয়েছে বগুড়া বিসিকে।
জানা গেছে, আশির দশকের পর থেকেই বগুড়ায় কৃষি যন্ত্রাংশ ও হালকা প্রকৌশল শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ছোট-বড় প্রায় দেড় হাজার শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে এ জেলায়। বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট না পেয়ে লোকালয়ে এবং আবাদি জমির ওপর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে কারখানাগুলো। দক্ষিণের মোংলা নৌবন্দর ও ভোমরা স্থলবন্দর থেকে উত্তরের বুড়িমারী ও হিলি স্থলবন্দরের সঙ্গে সংযুক্তি এবং রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বগুড়া।
বগুড়ায় ১৪ একর জমি নিয়ে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে ১৯৬৪ সালে। উদ্যোক্তাদের আগ্রহ ও চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালে অধিগ্রহণ করা হয় আরও ১৯ একর জমি। বর্তমানে ৩৩ একর জমির ওপর বগুড়া বিসিক। উদ্যোক্তারা বলছেন, আরও ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ দরকার।
বিসিক কর্মকর্তাদের মতে, বগুড়ায় বিসিকের দ্বিতীয় শিল্পনগরী হওয়ার বাস্তবতা আছে, সরকার তা বোঝেও। প্লট শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তাই দ্বিতীয় শিল্পনগরীর জন্য জায়গা খোঁজে বিসিক এবং বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) শরণাপন্ন হয়। শহরতলির ছয়পুকুরিয়ায় ১৫ একরেরও বেশি জমি ছিল বিএসইসির। বিএসইসি জমিটিতে কিছু করছেও না, ছেড়েও দিচ্ছে না। ২৫ বছর ধরে জমিটি পাওয়ার চেষ্টা করছে বিসিক।
বগুড়া বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক হজরত আলী বলেন, বহুবার চিঠি চালাচালির পর বিএসইসি গত বছর জানিয়ে দিয়েছে যে জমিটি তারা দেবে না এবং এতে নিজেরাই কিছু একটা করবে। এরপর শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের পাশে চকভেলী ও বীরগ্রাম এলাকাকে চিহ্নিত করে গত বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব দেয় বিসিক। মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করেনি।
হতাশ বিসিকের পক্ষে এবার এগিয়ে আসেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আশরাফ উদ্দিন। তিনি জানান, দ্বিতীয় শিল্পনগরীর জন্য শহরতলির বুজরুকবাড়িয়ায় ১৫০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়ে দুই সপ্তাহ আগে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
এদিকে বগুড়া বিসিক নতুন করে উদ্যোগ নেয় ‘কৃষি শিল্পনগরী’ বা ‘কৃষি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল’ স্থাপনের। এ জন্য সদর উপজেলার চণ্ডীহারা-মাঝিপাড়া এলাকায় ৫০ একর জমি পছন্দ করে। বিসিকের পক্ষ থেকে একটি দল সম্প্রতি জমি পরিদর্শন করে।
নতুন করে আলোচনায় আসে অর্থনৈতিক অঞ্চল। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়ায় এসে এক জনসভায় জেলাটিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার ঘোষণা দেন। এক বছরে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটির স্থান নির্ধারণ হয়েছে। আর কোনো কাজ হয়নি।
জানা গেছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে শাজাহানপুর চকজোড়া, জোড়া, পারটেরখুর, বীরগাঁও ও চকভ্যালী—এ পাঁচ মৌজার ২৫১ দশমিক ৪৩ একর জমির ওপর। জমির অধিগ্রহণ মূল্য ধরা হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান বলেন, উত্তরাঞ্চলের প্রাণ হচ্ছে বগুড়া। এখানকার উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগেই এ প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছেন ও রাখছেন। নীতি সহায়তা পেলে শুধু বগুড়া নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিতেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবেন বগুড়ার উদ্যোক্তারা।