কৃষিতে সফল বেলী বেগম
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
সকালের মিষ্টি রোদে পেয়ারা গাছের পরিচর্যা করছিলেন ঈশ্বরদীর জগন্নাথপুরের গৃহিণী বেলী বেগম। তার জমির পরিমাণ নয় বিঘা হলেও চৌদ্দ বিঘা জমিতে পেয়ারার বাগান করেছেন। এজন্য সতের বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। বাকি জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি ও ফল আবাদ করছেন। এরমধ্যে দেড় বিঘায় আলু, তিন বিঘায় লাউ, পাঁচ বিঘায় টমেটো, সাত বিঘায় গাজর, সাড়ে চার বিঘায় ফুলকপির আবাদ করেছেন। এসব সবজির ফলনও ভালো।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ঈশ্বরদীর কৃষি সেক্টরে সফল নারী উদ্যোক্তা বেলী বেগম সবজি চাষে এবছর জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। পুরস্কার প্রাপ্তি সম্পর্কে বেলী বেগম বলেন, খুবই ভালো লাগছে। ১৯৯৫ সালে কৃষিকাজ শুরু করি। একজন নারী হওয়ায় প্রথমদিকে আমাকে সামাজিক বিরূপ পরিবেশের মধ্যেই এগুতে হয়েছে। বাধা ডিঙিয়ে আমি আজ এ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি। এখন এ কাজে কোনো সমস্যা নেই। আশা করছি এ বছর ২০ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করতে পারব। পেয়ারার ফলন ও দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
বেলী বেগমের স্বামী ময়েজউদ্দিনও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন কৃষক। তবে তার স্বামী ব্যাংক ঋণ নিলেও বেলী বেগম কোনো ঋণ নেননি। এর আগেও বেলী বেগম কৃষিকাজে সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ২০১২ সালে রাজশাহীর ফাদার বক্স প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুরস্কার, ২০১৩ সালে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন পুরস্কার।
বেলী বেগমের কৃষিতে সফলতা দেখে গ্রামের অনেক নারী এগিয়ে এসেছেন। তারাও ধীরে ধীরে চাষাবাদে এগিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে সংসারে আর্থিক সহযোগিতাও হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ বিভিন্ন খরচ এখন তারাই বহন করছে। যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
বেলী বেগমের বিয়ে হয় ১৯৯১ সালে। এক ছেলে, দুই মেয়ে, স্বামী নিয়ে তার সুখের সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। তার কৃষিপণ্য কিভাবে বাজার সৃষ্টি করেছে জানতে চাইলে বেলী বেগমের মতে, ঈশ্বরদী থেকে তার উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজেই ঢাকায় ট্রাকযোগে পাঠানো যায়। তবে ২০১৩-১৪ সালে অতিরিক্ত অবরোধ ও হরতালের কারণে পরিবহন সমস্যা হওয়ায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এখন সেই সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, বর্তমানের মতো পরিবেশ থাকলে গ্রামে আমাদের মতো মেয়েরা কৃষিকাজ করে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে পারব।