যেভাবে বিজয়ী হলেন তিন বন্ধু
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
‘চট্টগ্রামের টিএসপি ইন্ডাস্ট্রিজে শিল্পপণ্য তৈরির পর ৩০ লাখ টন জিপসাম পাশের ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর তারা বাই প্রডাক্ট হিসেবে ৯০ হাজার টন জিপসাম উৎপন্ন করে। সেগুলোর মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাকি ৮০ শতাংশই বৃষ্টির পানির সঙ্গে পুকুর, নদী ও খাল-বিলে যাচ্ছে এবং সেসবের পানি মারাত্মক দূষিত করছে। এই ফেলে দেওয়া জিপসাম ব্যবহার করেই তো আমরা দেশের চাহিদা মেটাতে পারি। আমরা তো আমদানি করি। ফলে বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়। অথচ দেশেই পচে জিপসাম।’ বলছিলেন ইয়াসির আরাফাত। এই ভাবনা থেকেই এ সমস্যার সমাধান করে দেশেই জিপসাম বোর্ড তৈরির পরিকল্পনা করেছেন ইয়াসির আরাফাত, সাদুন মোস্তফা ও কাশফিয়া নেহিরন। ইয়াসির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্কুল অব ইকোনমিকস, সাদুন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে আর কাশফিয়া বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটে পড়ছেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিন বন্ধু- ইয়াসির আরাফাত, সাদুন মোস্তফা ও কাশফিয়া নেহিরন। বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরোনোর পথে হঠাৎ একটি পোস্টারের দিকে চোখ গেল ইয়াসিরের। বন্ধুদের বললেন, ‘এই এসএমই ব্যবসা পরিকল্পনা প্রতিযোগিতায় আমরাও তো যেতে পারি!’ এরপরই গড়ে উঠল ‘ইকোজিপ’। পরের বছরের মে মাসে শুরু হলো মূল প্রতিযোগিতা। সেখানে নাম জমা দিল ৩০০টি দল। কার কী আইডিয়া আছে, সেগুলো এক পাতায় জমা দেওয়া হলো। ইকোজিপ দিল ‘আমরা শিল্পবর্জ্য থেকে অগি্ননিরোধক জিপসাম বোর্ড তৈরি করব এবং সেটি বাসা-অফিস, স্কুল-কলেজ ও শিল্প-কারখানায় পার্টিশন, আসবাব, সাজসজ্জা ও ফলস সিলিং হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রায় ১৫ মাস পর বিচারকরা সব আইডিয়া যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিযোগীদের এসএমই ফাউন্ডেশনে ডাকলেন।
সেখানে গেল ‘ইকোজিপ’। তাদের সেরা ১০০টি দলের মধ্যে নির্বাচিতও করা হলো। এরপর বিপণনের ওপর তারা একটি প্রশিক্ষণ নিলেন। ৩০ মের মধ্যে পরিকল্পনার বিস্তারিতও জমা দিলেন। এই পরিকল্পনা জমা দেওয়ার পর আগস্টে আবার এসএমই ফাউন্ডেশনে গেলেন তারা। এবার সেরা ১৮টি দলের একটি হিসেবে তাদের দলগত উপস্থাপনার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। এভাবে নানা পরিকল্পনা করার পর ২৬ নভেম্বর আবার এসএমই ফাউন্ডেশনে গ্রুপ প্রেজেন্টেশন দিলেন তারা। ১৫ মার্চ এলো সেই চূড়ান্ত ক্ষণ। এক জমকালো অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ইকোজিপের হাতে তুলে দিলেন ক্রেস্ট, সনদ ও তিন লাখ টাকার চেক।