অনলাইন বাজার : সম্ভাবনার নূতন দিগন্ত
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
দেশে ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটিতেছে অনলাইন কেনাকাটার। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে ঘিরিয়া প্রতিষ্ঠানভেদে অনলাইন বেচাকেনার হার গতবারের চাইতে এইবার ৩০ হইতে শতভাগ পর্যন্ত বাড়িয়াছে। আর্থিকমূল্যে এই বেচাকেনার পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও অধিক হইবে বলিয়া সংশ্লিষ্টরা ধারণা করিতেছেন। মূলত ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ঘরে বসিয়া ঝামেলামুক্তভাবে স্বল্প সময়ে পছন্দসই পণ্য পাইবার বাস্তবতায় দিন দিন এই বাজার সমপ্রসারিত হইতেছে। পোশাক, দৃষ্টিনন্দন গহনা, ব্যাগ, প্রসাধন সামগ্রী হইতে শুরু করিয়া নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন- চাল, ডাল ও শাকসবজির পাশাপাশি জায়গা-জমি, ফ্ল্যাট, আসবাবপত্র, মোবাইল, বইপত্র, কম্পিউটার, ইলেক্ট্রনিক পণ্য এবং নূতন-পুরাতন সব ধরনের পণ্যই কেনাবেচা হয় অনলাইনে। তাহা ছাড়া অনলাইনে বাস, ট্রেন ও বিমানের টিকিট এবং হোটেল রুম বুকিং দেওয়ারও সুবিধা আছে। উপরন্তু চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে অর্ডার করা পণ্য পৌঁছাইয়া যাইতেছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। নিজের জন্যতো বটেই, বর্তমানে আত্মীয়-স্বজনকে পাঠানো উপহারের ক্ষেত্রেও অনেকের প্রথম পছন্দ হইয়া উঠিতেছে অনলাইন বাজার।
হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, কানেকটিভিটি, ডাটা ও মানুষের সক্ষমতাকে কাজে লাগাইয়া পৃথিবীর সব কয়টি দেশ যে একটি বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হইবে—তাহা কয়েক বত্সর পূর্বেই বিখ্যাত দার্শনিক মার্শাল ম্যাকলুহান মন্তব্য করিয়াছিলেন। এইসব অনুষঙ্গকে কাজে লাগাইয়া আজিকার বাস্তবতায় বর্তমান বিশ্ব শুধু একটি গ্রামেই পরিণত হয় নাই, বরং মানুষের প্রাত্যহিক জীবন আরো সহজতর হইয়া উঠিয়াছে। তবে কনফারেন্স, চিকিত্সা সেবা, তথ্য প্রদান এবং পণ্য ও বিভিন্ন সেবাকর্ম কেনাবেচার ক্ষেত্রেই ইহা অধিকতর প্রাধান্য পাইতেছে। বহিঃর্বিশ্বে এই ধরনের কর্মকাণ্ড ইতোপূর্বেই জনপ্রিয়তা অর্জন করিয়াছে। কিন্তু একটু ধীরে হইলেও ২০১১ সাল হইতে আমাদের দেশে অনলাইন বেচাকেনার প্রচলন হইয়াছে। বিশেষ করিয়া নগর জীবনের কর্মব্যস্ততা, সময়ের অভাব, যাতায়াতের কষ্ট, যানজট ইত্যাদি কারণে মানুষ অনলাইন কেনাকাটার উপর অধিক পরিমাণে নির্ভরশীল হইতেছেন। অনলাইনে প্রার্থিত পণ্যের ছবি ও বিবরণ দেখিয়া অর্ডার দিলেই যথাসময়ে পণ্য যথাস্থানে পৌঁছাইয়া যাইতেছে। অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্থা ই-ক্যাবের হিসাবে দেশে বর্তমানে ১০০টিরও বেশি ই-কমার্স সাইট আছে। তাহা ছাড়া ফেসবুক কেন্দ্রিক ই-শপ আছে ১০ হাজারেরও অধিক। গত বত্সরের ঈদে প্রায় ১১ কোটি টাকার মতো লেনদেন হইলেও এইবার ইতোমধ্যেই তাহা ৩০০ কোটি টাকার গণ্ডি ছাড়াইয়া গিয়াছে। এই পরিস্থিতিতে অনলাইন কেনাবেচার এই ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি যে ভবিষ্যতে দেশের ই-কমার্সকে বিশ্ব পরিসরে নূতন এক উচ্চতায় স্থান করিয়া দিবে—তাহা ক্রমশই স্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে।
অনলাইনে কেনাকাটা নূতন হইলেও তাহা বেশ সহজ। তাহা ছাড়া এই বাজারে উদ্যোক্তা বা বিক্রেতার সংখ্যা বাড়িবার মধ্যদিয়া নূতন কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটা বড় সম্ভাবনা রহিয়াছে। ইতোমধ্যে দেশে অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতি অনলাইনে ব্যবসা করিয়া সাফল্যের মুখও দেখিয়াছে। তাই অনলাইনে নাগরিকদের পণ্য কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বস্তি নিশ্চিত এবং ঝুঁকি দূর করিবার জন্য সরকারেরও কিছু করণীয় আছে। বিশেষ করিয়া পণ্যের মান ও প্রদত্ত বিবরণের বিষয়ে স্বচ্ছতায় বিশেষ তদারকির প্রয়োজন রহিয়াছে। কেননা ক্রেতারা কোনো কারণে প্রতারিত ও বঞ্চিত হইলে এই বাজারের প্রতি তাহাদের অনীহা সৃষ্টি হইবে, যাহা আদৌ কাম্য হইতে পারে না।