নেতৃত্ব শিখিয়েছে বোর্ডিং স্কুল : অমিত সিং
প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম ‘ব্যবস্থাপনা’। তাই উদ্যেক্তামাত্রই জানেন, দক্ষ ব্যবস্থাপক হতে না পারলে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা দুরহ হয়ে পড়ে। ভাবছেন, কীভাবে দক্ষ ব্যবস্থাপক হবেন? এজন্য পরামর্শ নিতে পারেন বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যাক্তিদের। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে এরকম একটি পরামর্শমূলক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন গুগল ফর ওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট অমিত সিং। সাক্ষাৎকারটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন মারুফ ইসলাম।
প্রথমেই জানতে চাই, আপনি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কার কাছে?
- আমি বড় হয়েছি ভারতে। বাবা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। ফলে আমার ছোটবেলার দশটি বছর কেটেছে দিল্লির একটি বোর্ডিং স্কুলে। বলতে পারেন আমার নেতৃত্বের শিক্ষা এবং ব্যবস্থাপনার শিক্ষার শুরু ওই স্কুলেই। আপনার যদি বোডিং স্কুল সম্পর্কে ধারনা থেকে থাকে তাহলে নিশ্চয় জানেন, বোডিং স্কুল আপনাকে শেখাবে কীভাবে দলভূক্ত হয়ে থাকতে হয়, কীভাবে একই খাবার অনেকের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খেতে হয়, কীভাবে সবার সঙ্গে সমঝোতা করে চলতে হয়। মনে পড়ছে বাস্কেটবল টিমের কথা। স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে আমি কখনোই বাস্কেটবল খেলিনি। কিন্তু এখানে খেলতে হবে। কী বিপদ! এজন্য আমাকে প্রতিদিন সবার আগে ঘুম থেকে উঠতে হতো। তারপর কয়েক ঘণ্টা অনুশীলন করতে হতো। এভাবে ছয়মাস অনুশীলন করার পর আমি বস্টেকবল দলে খেলার সুযোগ পাই এবং একসময় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হই। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আমার নেতৃত্ব গুণ আর ব্যবস্থাপনার ভিত্তি ওই স্কুলই গড়ে দিয়েছে।
নেতৃত্ব বিষয়ে শৈশবে আর কি কি শিক্ষা পেয়েছেন আপনি?
- মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে কঠিন শিক্ষা আমি পেয়েছি শৈশবেই। একইসঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার শিক্ষাটাও পেয়েছি। মানুষের সামনে কোনও বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার কৌশল শিখেছি। তারপর কীভাবে কোচ হতে হয় সেই শিক্ষা অর্জন করেছি। আমি মনে করি আমার জীবনের সবচেযে সেরা সময় ছিল সেটা।
এছাড়া আর কোনো শিক্ষা ?
- সাফল্যের অন্যতম শর্ত হচ্ছে যোগাযোগ দক্ষতা। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আপনি কত সময় ব্যয় করেন আমি ঠিক জানি না, তবে যত সময়ই ব্যয় করুন না কেন তা যথেষ্ট নয়। যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ সময় ব্যয় করতে হয়। আপনি ধারনাও করতে পারবেন না, প্রতিদিন আমি কত মেইলের উত্তর দেই। যোগাযোগ দক্ষতার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা আমি উপলব্ধি করেছি সেই স্কুলজীবনেই। আর একটা শিক্ষার কথা বলি। সেটা হচ্ছে, আপনার প্রতিষ্ঠান কত বড় হবে সেটা নির্ভর করে আপনি কত মানুষের সঙ্গে যুক্ত থা্কতে পারছেন। গুগলকে দেখুন, এর অফিস অবকাঠামো খুবই সোজাসাপ্টা, বাধাহীন। এর দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ প্রবেশ করে বলতে পারে, ‘আপনার সঙ্গে কী এক কাপ কফি খেতে পারি?’ আমি মনে করি, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যাক্তিকেও এ রকম ভয়ডরমুক্ত, বাধাহীন হতে হয়। যে কেউ যেন তাঁর কাছে যেতে পারে এবং কথা বলতে পারে। এই প্রবেশগম্যতার শিক্ষা পেয়েছি সেই সময়। এটা গেল একটা শিক্ষা। আর একটা শিক্ষা হচ্ছে, একই সঙ্গে আপনি একাধিক কাজ সফলভাবে করতে পারবেন না। আপনাকে কোনো একটা লক্ষ্য ঠিক করতেই হবে। অর্থাৎ গুরুত্ব অনুযায়ী কাজ সাজানো এবং একর পর এক কাজ সম্পন্ন করার শিক্ষা। এটা আমি পেয়েছি সেই বোর্ডিং স্কুলে।
যদি কাউকে আপনার প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে চান তবে তার মধ্যে কোন ধরনের যোগ্যতা আশা করেন?
- মানুষের সঙ্গে প্রচুর মিশতে হবে এবং তাদেরকে জানতে হবে-এটাই একমাত্র যোগ্যতা। আমি দেখব, লোকটির চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কতটুকু। এছাড়া, নতুন কোনো বিষয় শেখার ব্যাপারে তার আগ্রহ কতটুকু সেটিও দেখার চেষ্টা করব। সেই নতুন বিষয় যে ব্যবসা সংক্রান্ত হতে হবে এমন নয়, যেকোনো কিছু হতে পারে। আমরা সাধারণত একটি বোর্ড ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে থাকি। চার সদস্যের একটি ইন্টারভিউ বোর্ড থাকে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আমরা প্রার্থীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করে থাকি। আর এসব গল্পের মধ্য দিয়েই তার যোগ্যতা খুঁজে বের করি।
সদ্য গ্রাজুয়েটদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
- আমি জানি, শিক্ষাজীবনে সামান্য কিছু সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু হাজার হাজার সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পর। কারণ, যখন শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায় তখনই একজন মানুষ প্রকৃত বাস্তব পৃথিবীতে প্রবেশ করে। আর এই বাস্তবের পৃথিবীটা সমস্যায় ভরা। সুতরাং শিক্ষাজীবনেই এই শিক্ষা নিতে হবে যে, কীভাবে বেশি সংখ্যক সমস্যা মোকাবেলা করা যায়, কীভাবে টিম ওয়ার্ক করা যায়, কীভাবে নেতৃত্ব দেওয়া যায় ইত্যাদি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিউইয়র্ক টাইমসের বিজ্ঞান বিভাগের উপ-সম্পাদক অ্যাডাম ব্রায়ান্ট ।