ধনী হওয়ার পঞ্চতন্ত্র
- ড্যানিয়েল এ্যালি
ধনী হতে চাওয়ার অনেক অর্থ রয়েছে। ধনী হতে হলে ধনের সমৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মনের সমৃদ্ধি অর্জন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সত্যকথা বলতে একজন ধনী গরিব হতে পারেন আবার একজন গরীবও ধনী হতে পারেন। ধনী হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো পথ নেই। তবু কিছু কৌশল অবলম্বন করলে ধনী হওয়ার পথটা সহজ হয়। যেমন :
১. উৎপাদকের মানসিকতা তৈরি
অব্যশই আপনাকে ভোক্তার চাহিদানুসারে পণ্যদ্রব্য ও সেবা সরবরাহ করতে হবে। উদহারণ হিসেবে বলা যায়, ভোক্তা পিজা খেতে চাইলে আপনাকে পিজা তৈরি করতে হবে, ভোক্তা মুভি দেখতে চাইলে আপনাকে মুভি তৈরি করতে হবে, ভোক্তা কোনো কাজ খুঁজলে আপনাকে কাজ সরবরাহ করতে হবে ইত্যাদি। প্রত্যেক মিলিয়নারই একজন উৎপাদক। আর শুধুমাত্র উৎপাদকই ধনী হতে পারে।
উৎপাদকের লক্ষ্য শুধু নিজের ভোগ করা নয়, জনগণকেও খাওয়াতে হবে। তিনি অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট যায়গা থেকে পণ্যদ্রব্য বা সেবা গ্রহণ করে থাকেন, কিন্তু এটা তাদের প্রাথম লক্ষ্য হতে পারে না। পরবর্তী আহার খোঁজার পরিবর্তে, তাঁরা অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠে পরবর্তী খাবার অন্যদের মাঝে সরবরাহ করার জন্য, তারা জানে যে এই প্রক্রিয়া পরবর্তীতে তাঁদেরও খাওয়ার সুযোগ করে দেবে।
অর্থাৎ এই সকল উৎপাদকেরা সরবরাহ করছে হার্ট সার্জারি, সর্বোচ্চ বিক্রীত বই অথবা গগণচুম্বি ইমারত নির্মাণ। তারা শেখাবে কীভাবে পণ্যদ্রব্য ও সেবা তৈরি করতে হয় তাদের চারপাশের লোকদের সাহায্য করতে। আপনি যখন উৎপাদকের মানসিকতা তৈরি করতে পারবেন আপনি নিজেও সম্পদশালী হয়ে উঠবেন।
২. প্রাত্যহিক হার জানা
আপনি প্রতিদিন কী পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে চান? আপনি কি আপনার দৈনন্দিন উপার্জনের পরিমাণ হিসাব করেছেন? ১০০, ৫০০ বা ১০০০ টাকা? বছরে কমবেশি প্রায় ২৫০টি কার্যদিবস রয়েছে। আপনি কি জানেন একজন মিলিয়নার হতে এটি কীভাবে কাজ করবে? যদি প্রতিদিন ৫০০ টাকা আয় করতে পারেন, প্রতি বছরই আপনি মিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেন।
প্রতিদিন যদি ১০০০ টাকা আয় করেন, আপনাকে এর দ্বিগুণ করার চেষ্টা করতে হবে। একটু কল্পনা করুন, যদি আপনি দ্বিগুণ কাজ করতে পারেন, দ্বিগুণ আয় করতে পারবেন! আপনার দৈনিক আয়ের হার বাড়ানোর জন্য কী করছেন? যদি নতুন একটা চাকরি খোঁজেন, একাধিক যায়গায় জীবনবৃত্তান্ত পাঠান। আপনি যদি প্রতিদিন বিক্রয়ের জন্য ১০টি ডাক পান তাকে ২০ এ পরিণত করার চেষ্টা করেন। এসকল প্রচেষ্টার ফলে আপনার কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।
৩. সবকিছুতে ত্যাগস্বীকার
অধিকাংশ মানুষই সবকিছুতে ত্যাগ স্বীকার করতে ভয় পায় কারণ তারা মনে করে এর ফলে হয়তো অনেক কিছু হারাতে হবে। হয়তো একজন মা খরচের ভয়ে ২০ টাকা দাম দিয়ে একটা বই কিনতে চান না যা ভবিষ্যতে তাঁকে ২০,০০০ টাকা আয় করতে সহায়তা করতো। অথচ তিনিই সেই টাকা দিয়ে বাচ্চার জন্য ভিডিও গেম কিনতে পেরে সুখ বোধ করেন।
ধনী হওয়ার পূর্বে, আপনাকে গরীব হতে হবে। প্রত্যাশা অনুযায়ী সর্বোচ্চটা পেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই প্রতিকূল পরিস্থিতি দক্ষ হাতে সামলাতে হবে। বড় লক্ষ্যে দৃষ্টি নিবন্ধিত করতে গেলে অনেক সময় আসবে যখন সন্তোষজনক অবস্থায় পৌছাতে দেরি হবে, যা পরিশেষে আপনার জন্য মূল্যবান হয়ে উঠবে।
অধিক চিন্তাভাবনা করেও যদি ঝুঁকি নিতে চান, আপনাকে নিজের কাছেই দুইটা প্রশ্ন করতে হবে: এক, এই ঝুঁকিটা নিতে গেলে কী কী সমস্যার সন্মূখীন হতে পারেন যা আপনাকে মোকাবেলা করতে হবে? দুই, তারপর আবার জিজ্ঞাসা করুন, এর থেকে আপনি কোন ধরণের সূফল পেতে পারেন? সাধারণত দেখা যায় যে, আপনি সামান্য একটি কারণেই ঝুঁকি নিতে চাইবেন না কারণ এখানে অর্থের ব্যপার জড়িত রয়েছে। যাহোক, আপনার নির্ধারিত বড় লক্ষ্যটি অর্জন করতে চাইলে সবকিছুতে ত্যাগস্বীকার করার মানসিক সামর্থ্য থাকতে হবে, এমনকি আপনার হাতে থাকা শেষ পয়সা দিয়ে হলেও।
৪. শুধুমাত্র উন্নত কাজগুলি করুন
সম্পদ নষ্টের অন্যতম কারণ হলো যখন একজন লোক দরিদ্র এলাকায় বাস করে। অনেক সময়, মানুষ গরীব এলাকায় বসবাস করে, যার ফলে তাদেরকে বিত্তহীন মানুষ দ্বারা বেষ্টিত থাকতে হয়। আপনি যদি এসব লোকদের থেকে দুরে থাকতে চান আপনাকে দরিদ্র এলাকা ত্যাগ করতে হবে। বিত্তহীণ লোকদের সাথে দরিদ্র এলাকায় বসবাস করলে আপনি কখনোই ধনী হতে পারবেন না।
যখন ছোট ছিলাম, নেতিবাচ লোকদের সাথে তাদের এলাকায় বাস্কেটবল খেলতাম। আমি নিয়মিতই দেখতাম তারা ধুমপান করছে, গালাগাল করছে এবং খেলার প্রতিটি মুহূর্তে আরো অন্যান্য অসন্মানজনক কার্যকলাপে ব্যস্ত রয়েছে। এমনকি যদিও আমি তাঁদের সাথে এসব আচরণে অংশ নিতাম না তবুও এগুলো আমার সাধারণ জীবনে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করতো। আমার মতো অনেক লোক রয়েছে যাঁরা এরকম পরিবেশ সহ্য করে যায়। তাঁরা বুঝতে পারেনা যে কীভাবে এ ধরনের বাজে গল্প, কুৎস রটনা, হিংস্রতা এবং উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাসমূহ তাঁদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। মোটকথা হলো আপনার যদি উন্নতি না হয়, আপনি বিত্তহীণ থেকে গেলেন। বিত্তশালী কাজকর্ম খুঁজে বের করুন সেইসব কাজে অংশ নিন। বাস্কেটবল খেলার পরিবর্তে আমি বিলাসবহুল বাড়িতে ঘুরতে শুরু করলাম এবং গাড়ীর ডিলারশীপ নিলাম। যা আমার জীবনকে পরিবর্তন করে দিল।
৫. বিশেষ ক্ষমতার ব্যবহার
প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেকটা লোকই সহজাত গুণের অধিকারী হয়। পার্থক্য হলো কারোর একটু কম আবার কারোর একটু বেশি। তথাপি আপনার ভেতর যে প্রকৃতিপ্রদত্ত গুণাবলী রয়েছে তা বুঝতে হবে এবং তার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় মানুষ তার সহজাত গুণাবলীর অপব্যবহার করে থাকে। যাহোক আপনার গুণাবলীকে আবাদ করতে হবে এবং তাঁদের পাশে থাকতে হবে যারা আপনাকে সহায়তা করতে পারে। অনেক সময় আপনার মেধা, দক্ষতা, প্রকৃতিপ্রদত্ত গুণাবলী এবং কাজের সামর্থ্য সহজে বুঝতে পারবেন না। বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি থেকে আমাদের গুণাবলীর সঠিক ব্যবহারে দিক নির্দেশনা বা উৎসাহ পেয়ে থাকি। অনেক লোকই তা খুঁইয়ে থাকে ।