ব্যবস্থাপণার অ আ ক খ
কানাডার নাগরির ব্রিয়ান ট্রেসির তিনটি পরিচয়-লেখক, পরামর্শক এবং অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা। তিনটি পরিচয়েই তিনি দুনিয়াজুড়ে খ্যাতিমান। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিএম, ফোর্ড, ফেডারেল এক্সপ্রেসসহ এক হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানে তিনি পরমর্শক হিসিবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পৃথিবীর ১০৭টি দেশে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ লাখ মানুষের সামনে বক্তব্য দিয়েছেন। বই লিখেছেন ৬০টি। এরমধ্যে একটি বই সাইকোলজি অব অ্যাচিভমেন্ট সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের মর্যাদা লাভ করেছে। পৃথিবীর চার ভাষায় কথা বলতে পারা এই ব্যবসায় বিশেষজ্ঞ নিয়মিত নিবন্ধ লিখে থাকেন তাঁর ব্যাক্তিগত ব্লগে। ব্যবস্থাপনা বিষয়ক তাঁর একটি নিবন্ধ ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মারুফ ইসলাম।
সবাই জানতে চান, কী করলে দক্ষ ব্যবস্থাপক হওয়া যায়? আমি বলি, কথাটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে কোনো ব্যবস্থাপককে অনুসরণ করুন, দেখুন তারা কী করে। আপনি নিশ্চয় লক্ষ্য করবেন, তারা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে পরিবর্তন করে এবং নিজেদের দক্ষতা বাড়ায়। এটাই ব্যবস্থাপণার অ, আ, ক, খ। মানে প্রথম পাঠ।
সবার আগে নেতৃত্ব-গুণ
- সফল ব্যবস্থাপক হতে হলে থাকবে হবে নেতৃত্ব-গুণ। অন্যভাবে বলা যায়, সফল নেতা হতে হলে থাকতে হবে ব্যবস্থাপণা গুণ। অর্থাৎ ব্যাপারটা একে অপরের পরিপূরক। ভেবে দেখুন, একজন নেতাকে দলের সবাইকে মানিয়ে চলতে হয়। আবার একজন ব্যবস্থাপককেও তার কর্মীদের মানিয়ে চলতে হয়। এই মানিয়ে চলা বিষয়টাই একজন ব্যবস্থাপককে দক্ষতার অর্জন করতে হয়। এজন্য প্রথমত তাকে সৎ হতে হয়, তারপর হতে হয় অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই দুটি কাজ যদি আপনি করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার প্রতি আপনার কর্মীদের বিশ্বাস ও আস্থা বেড়ে গেছে। আর একবার যদি বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পারলেই আপনার সফল হওয়ার পথ সহজ হয়ে যাবে।
নেতা হতে কী লাগে?
- সফল নেতা হওয়ার জন্য খুব বেশি কিছু লাগে না। মাত্র দুইটি জিনিস ধরকার-এক. ব্যাক্তিত্ব, দুই. কর্মদক্ষতা। ব্যাক্তিত্ব অর্জনের জন্য সবার আগে দরকার সততা। সৎ হলে মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করকে এবং আপনাকে অনুসরণ করবে। মনে রাখবেন ব্যবসায় সফল হওয়ার প্রধান অস্ত্র হচ্ছে বিশ্বস্ততা। আপনার কর্মী যদি আপনার উপর বিশ্বাস রাখতে না পারে তাহলে গণমানুষ কেন আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্যের ওপর বিশ্বাস রাখবে? তাই ব্যাক্তি হিসেবে অন্যের বিশ্বাস অর্জন করুন এবং পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকেও ভোক্তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলুন। এ জন্য আপনাকে কোনো না কোনোভাবে উদাহরণ সৃষ্টি করতেই হবে। কীভাবে উদাহরণ সৃষ্টি করবেন সেটা নির্ভর করবে আপনার ব্যবস্থপণা দক্ষতার ওপর।
নিজের ওপর বিশ্বাস
- ব্যবস্থাপণা গুরু জিম কলিংস বলেছেন, তিনি নেতৃত্বের পাঁচ নম্বর অধ্যায় অনুসরণ করেন। এ অধ্যায়ের বিষয়ের নাম ‘‘নম্রতা’’।’ ব্যবস্থাপণায় দক্ষ হয়ে উঠতে হলে সবার আগে চাই নম্রতা, চাই বিনয়ী হওয়া, চাই নিরহংকারী হওয়া। যারা ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো ছোটাছুটি করছেন তাদের বলি, শান্ত হোন, বিনয়ী হোন। অহংকার ঝেড়ে ফেলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মিশুন। কলিংস বলেছেন, ‘তুমি যদি বিনয়ী হতে না পারো তবে তোমার মধ্যে সবজান্তা ভাব চলে আসবে যা তোমাকে সফল হতে দেবে না।’ নেতৃত্বের পাঁচ নম্বর অধ্যায় আমাদের এটাই শেখায় যে তুমি সব বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নও। আর তুমি যেহেতু সবজান্তা নও সেহেতু অন্যের কাছ থেকে শেখো। অন্যের কাছ থেকে শিখতে হলে বিনয়ী হতে হবে, নম্র হতে হবে। এছাড়া সাফেল্যের সংক্ষিপ্ত কোনো পথ নেই।
সূত্র : ব্রিয়ান ট্রেসির ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট।