প্রান্তিক উদ্যোক্তা নির্জন মালাকার
- শাহজাহান নবীন, কুষ্টিয়া
চলতি পথে ঝাঁলমুড়ি, আমড়া বা আম কাসূন্দি, আঙ্গুলী গজা (আঞ্চলিক খাবার) খেতে বেশ ভালই লাগে। তবে হরেক পদের এসব খাবার বেশী দেখা মেলে রেল স্টেশন, বাসস্টেশন, লঞ্চ, ফেরি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গুলোতে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই আঞ্চলিক রকমারি খাবারের বেশ চাহিদা রয়েছে। জিভে জল নিয়ে আসা এসব খাবারের স্বাদ সত্যিই আলাদা। এসব রকমারি নাস্তা ও হালকা খাবারের দোকানকে ঘিরে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে চলে আড্ডা, বন্ধুত্ব আরো কত কি!
তেমনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নানা ধরণের ভ্রাম্যমাণ ছোট ছোট খাবারের দোকান। ঝাঁলমুড়ি, আম-আমড়া কাঁসুন্দি, সরবত, ডাব, শসাসহ ঋতু অনুযায়ী এখানে পাওয়া যায় নানা ধরণের হালকা খাবার। ভ্যান গাড়িতে করে ভ্রাম্যমাণ এসব দোকান তাদের পসরা সাঁজিয়ে রাখে। এসব দোকান গুলোর মধ্যে একটু ব্যতিক্রম আয়োজন ‘নির্জন মালাকার’এর। বাদাম, ঝাঁল বাদাম, ছোলা ভাঁজা, ডালমুট ভাঁজা, ঝাঁল খুরমা, গুড়ের খুরমা, চিনির খুরমা, ঝাঁল নিমকি নিয়ে মোট আট পদের সমাহার নির্জন মালাকারের দোকানে। নির্জনের এই আট পদের নাম সবই আঞ্চলিকভাবে পরিচিত। দেশের অন্যান্য জায়গায় এসব খাবার পাওয়া গেলেও স্বাদের ব্যাপারে নিজের অভিন্নতার ব্যাপারে দৃঢ়তা ব্যক্ত করে নির্জন মালাকার বলেন-‘স্থানীয় শেখ পাড়া বাজারের একটি মিষ্টির দোকানে প্রায় ১২বছর কাজ করেছি। মালিকের হাতে গোনা টাকায় আমার সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। তাই প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে নিজেই ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা নিই। সেই থেকে আজ এই অবস্থানে। এখন বেশ ভাল আছি, নিজের ব্যবসা নিজে করার মজাই আলাদা।’
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার ত্রিবেণী গ্রামের নিরাঞ্জন মালাকারের ছেলে নির্জন মালাকার। দুই সন্তানের জনক নির্জন মালাকার প্রতিদিন নিজের ভ্যানগাড়ীতে নিজের হাতে তৈরি করা আটপদের খাবার সাঁজিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। বিশেষ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই বেশী দেখা যায় নির্জনের আট পদের খাবারের ভ্যানগাড়ীকে।
দিনের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরের উত্তর পাশের আম বাগানের সামনেই নিজের তৈরি খাবারের পসরা সাঁজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন নির্জন। আচার-আচরণে সদালাপী ও সদা হাস্যোজ্জল চেহারা দিয়েই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন তিনি। এছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও তার বেশ সুনাম রয়েছে। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্জন মালাকারের একটু বেশীই কদর করেন। অনেকেই তার এই খাবারের জন্য আগে থেকেই বায়না দেন বলে জানান নির্জন মালাকার।
কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তারা বলেন, এই খাবারগুলো ক্যাম্পাসের বাইরে অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও তা নির্জনের খাবারের মতো স্বাদের হয় না। ভালোই লাগে এসব হালকা খাবারের আয়োজন দেখে।
সুরমা খাতুন, ইরফান, সোহেল রানা, বনি ও আবু জার নামের শিক্ষার্থীরা বলছিলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমান খাবারের দোকানগুলোর মধ্যে এই দোকানের প্রতি সবার অন্যরকম ভাললাগা কাজ করে। সকাল কিংবা বিকেল যেকোন সময় আড্ডা জমাতে নির্জন ভাইয়ের এসব খাবারের কোন জুড়ি নেই।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা খুব ভালো। স্যার, অফিসার সবাই অনেক ভালো। সঠিকভাবে ব্যবসা করে যে আয় রোজগার হয়, তা দিয়ে আমার সন্তান দুটোকে মানুষরে মতো মানুষ করার স্বপ্ন দেখি। বাকিটুকু ভগবানের ইচ্ছে।’ এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা বলেন নির্জন মালাকার।
রকমারি এই খাবারের পরিকল্পনার ব্যাপারে নির্জন মালাকার বলেন-‘ক্যাম্পাসে ঝাঁলমুড়ি, আমড়া, আম, আচার, শসা, ডাব, ফুচকা এগুলো তো পাওয়াই যায়। তাই ভেবেছিলাম ভিন্নরকম কিছু করতে হবে। যেকারণে আঙ্গুলী গজা বা খুরমা, নিমকি (আঞ্চলিক শব্দ), বাদামের ব্যতিক্রমী আইটেম তৈরি করি। যদিও এসব খাবার দেশের নানা জায়গায় পাওয়া যায়। তবুও আমার খাবারের স্বাদ একটু আলাদা। সুযোগ-সুবিধা পেলে এই ব্যবসাকে আরো বড় করার স্বপ্ন রয়েছে আমার।’