আর্থিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প
- এস এম মুকুল
ভিজিট বাংলাদেশ স্লোগান শুরু হয় পর্যটন বর্ষ-২০১৬।এখানে স্বাগত জানানো হয় বাংলাদেশ ও বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের। সৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ ও বিশ্বকে জানার জন্য দেশ থেকে দেশান্তরে ভ্রমণের পিপাসা মানুষের চিরন্তন শখ। এই শখ বা নেশাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্প। পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনীতির নাড়ির স্পন্দনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটনকে কেন্দ্র করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে- মালয়েশিয়ায় পর্যটন খাতের বার্ষিক অবদান প্রায় দুই হাজার কোটি ডলার। বিশ্ব পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় মালয়েশিয়া নবম স্থানে। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরও তাদের পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয়ভাবে সাজিয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটন স্পটের মাঝে বৈচিত্র্যতা রয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণ, পরিচর্যা আর প্রচারণার অভাবে এর অনেক কিছ্ইু পর্যটকদের অজানায়। নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের একটি প্রধান শিল্প হিসেবে পর্যটন দ্রুত বিকশিত হয়েছে। নেপালের মোট জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে। ভারতে আছে প্রচুর ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান। বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সাধন করাই হলো পর্যটন শিল্পের মূল বিষয়। বাংলাদেশেও এ শিল্পের সম্ভাবনা অফুরন্ত। অনেক দেশের মতো বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান খাত পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাকে বাংলাদেশও কাজে লাগাতে পারে।
- পর্যটনের বিশ্ব প্রেক্ষিত
বর্তমান বিশ্বে পর্যটন একটি লাভজনক এবং অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং বহুমুখী কর্মসংস্থান সহায়ক বড় শিল্পখাত। সমীক্ষা থেকে জানা যায়, পর্যটন শিল্প একক শিল্প খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে বিশ্বের মোট জিডিপিতে অবদান রাখছে শতকরা ৯ ভাগ। বিশ্বের মোট চাকরি বা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখছে শতকরা ৮ ভাগ। বিশ্ববাণিজ্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখছে শতকরা ৬ ভাগ- যার পরিমাণ ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার। তথ্যে-উপাত্তে দেখা গেছে- বিশ্বে প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। পরোক্ষভাবে এই খাতে প্রায় ৮০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। জানা গেছে, ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা প্রতিবছর থাকা, খাওয়া, ভ্রমণ, দর্শন এবং কেনাকাটা বাবদ খরচ করেন প্রায় ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। আরও জানা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৮৩ ভাগ দেশের সবচেয়ে জাতীয় আয় আহরণকারী প্রথম পাঁচটি খাতের মধ্যে পর্যটন একটি বিশেষ খাত। বিশ্বের প্রতি ১১ জন কর্মজীবীর মধ্যে ১ জন সরাসরি পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বিশ্ব ট্যুরিস্ট অর্থনীতির তথ্যমতে- ১৯৫০ সালে বিশ্বে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২ কোটি ৫০ লাখ। প্রতিবছর এ খাতে বিশ্বে প্রায় ৬৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যবসা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পর্যটকরা এখন পুরাকীর্তি, বাংলো, বাগান, পাহাড়, সাগর, ঝরনার পাশাপাশি ইকো ট্যুরিজমের দিকে ঝুঁকছে। প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষের বিচিত্র জীবনধারা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিও পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ছে।
- সম্ভাবনায় অনিন্দ সুন্দর বাংলাদেশ
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। এ দেশের নদ-নদী, সবুজ-শ্যামল মাঠ, ফসলের ক্ষেত, ছায়াঢাকা গ্রাম, শান বাঁধানো পুকুর, গ্রাম-বাংলার মানুষের সরল জীবন বিশ্বের যে কোন মানুষের হৃদয় আকৃষ্ট করে। তাই বিজ্ঞ পর্যটকদের অভিমত- যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে শুধু পর্যটন শিল্প থেকেই বছরে হাজারো কোটি টাকা আয় করতে পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মতো ষড়ঋতুর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আমাদের আছে মনোরম পাহাড়, আছে নদী, আছে দিগন্ত বিস্তৃত ভাটি-বাংলার হাওড়, সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ তো আছেই। আছে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতি বিহার, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মনোমুগ্ধকর পাহাড়ের চা বাগান আর আদিবাসীদের বিচিত্র জীবন ধারা। এছাড়াও আছে কোয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, মাধবকু-ের ঝরনা ধারা, ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প, রেশম শিল্প, খাদি শিল্প, জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁত, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগান, বাংলার বিচিত্র পেশা, ঐতিহ্যবাহী সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, স্বাধীনতা ও ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ভাস্কর্য ও স্থাপনা, চিরসুন্দর গ্রামীণ জনপদ, হাটবাজার, মেলা-কৃষ্টি-কালচার, কৃষক-কৃষাণীর সংগ্রামী জীবন, ঋতুবরণ ঐতিহ্য, বাংলা নববর্ষের উৎসব এসব কিছুই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের হাকালুকি হাওড় এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি। এছাড়াও আছে- টাঙ্গুয়ার হাওড়, শনির হাওড়, ডিঙ্গাপুতা হাওড়সহ দিগন্ত বিস্তৃত হাওড়ের সমাহার। বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আরও আছেÑ তিন পার্বত্য জেলা, নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া, সোনাদিয়া, পতেঙ্গা, মৌলভীবাজার, মহেশখালী, চট্টগ্রামের ফয়স লেক, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ ইতিহাসÑ ঐতিহ্য সমৃদ্ধ অনেক স্থান, পাহাড়পুর বিহার, শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, রানী ভবানীর কীর্তি, বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, গীর্জা। আরও আছে ময়নামতি, রামসাগর, সোনারগাঁও, নাটোর, রাজবাড়ী, দীঘাপাতিয়া জমিদার বাড়ি, তাজহাট জমিদার বাড়ি, কক্সবাজারের বৌদ্ধমন্দির, ঢাকার লালবাগ দুর্গ, আহসান মঞ্জিল, গৌড় লক্ষণাবতী শহর, বাগেরহাটের অযোধ্যা মঠ ইত্যাদি। এসব স্থান ভ্রমণপিপাসু বিশ্ববাসীর কাছে আকর্ষণীয় এবং তাদের অবকাশ কাটাবার উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে। ৬৪টি জেলার প্রতিটিই আকর্ষণীয়। সমুদ্রসৈকতের কক্সবাজার; এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করে বিদেশী পর্যটক আনাসহ অনুকূল সুবিধা সৃষ্টি করতে পারলেই সমুদ্র সৈকত দুনিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম কক্সবাজার থেকে বছরে কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি সুন্দরবন; সিলেটের দীর্ঘতম চা বাগান; পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই হ্রদ; সিলেটের জাফলং; মৌলভীবাজারের মাধবকু- জলপ্রপাত। নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, শেরপুরের প্রত্নসম্পদ। নওগাঁর পালযুগের গৌরব পাহাড়পুর, কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধবিহার, পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙ্গামাটি আর খাগড়াছড়ির গাছপালা-পাহাড়-জঙ্গল-ঝরনা আর মেঘের ভেলা, রাঙ্গামাটির কাসালং, সাজেক, বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, রাজস্থলী, চন্দ্রঘোনা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় শ্যামল বাংলার রূপাবন্য, নদীর দেশ চাঁদপুর, বরিশাল, পিরোজপুর আর ঝালকাঠিতে দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি আছে নদী ভ্রমণের অপূর্ব সুযোগ।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের নবেম্বরে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক জারিকৃত অধ্যাদেশ নং-১৪৩ আদেশবলে ‘বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৭৩ সাল থেকে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কার্যক্রম শুরু করে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি এ শিল্পে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য ‘জাতীয় হোটেল ও পর্যটন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ গড়ে ওঠে ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড নামে প্রতিষ্ঠানটি পর্যটন আকর্ষণীয় স্থানগুলোয় অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে চলেছে, যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে করেছে সমৃদ্ধিশালী।
- অফুরন্ত সম্ভাবনা ঘিরে আছে কিছু জঞ্জাল
২০০৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল হওয়ায় পশ্চিমা ভ্রমণবিলাসীদের কাছে ইন্দোনেশিয়ার অবকাশ কেন্দ্র বালি অথবা থাইল্যান্ডের চমৎকার বিকল্প হতে পারে বাংলাদেশ। পর্যটন শিল্প সম্পর্কে অভিজ্ঞদের মতে, আধুনিক ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে কক্সবাজারকে গড়ে তোলা হলে পর্যটকের সংখ্যা বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা অন্তত দশগুণ বাড়বে। ফলে রাজস্ব আয় দাঁড়াবে ন্যূনতম ২০ হাজার কোটি টাকা। সী বীচ কে আরও আধুনিক নিরাপত্তায় বেষ্টিত করে, পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধা বাড়িয়ে, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজালে কক্সবাজার, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পাল্টে দিতে পারে পর্যটন শিল্পের চেহারা। সিলেটের খাদিম নগর রিসোর্ট বিশ্ব ট্যুরিজম স্পট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলো আমাদের সাফল্য ও সম্ভাবনার নমুনামাত্র। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারেরও আছে নতুন পরিকল্পনা। সরকার ইতোমধ্যে সারাদেশে ৮ হাজার পর্যটন স্পট নির্ধারণ করেছে। সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা টেকনাফ নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার। টেকনাফে পর্যটকদের জন্য অপার সৌন্দর্যের সমুদ্র সৈকত ছাড়াও রয়েছে নাফ নদীর পাড় দিয়ে পাহাড়ের অপরূপ রূপ দেখার সুযোগ। টেকনাফকে নিয়ে নতুন যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এর নামকরণ করা হয়েছে প্রিপারেশন অব ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান অব কক্সবাজার টাউন এ্যান্ড সী বীচ আপ টু টেকনাফ শীর্ষক প্রকল্প। বাংলাদেশের এই পর্যটন কেন্দ্র দেশের রাজধানী থেকে অনেক দূরে হওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো রেল ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরী। রেলে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ভাল যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হলে কম খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে। দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটারের রেললাইন খুলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়ালে পাল্টে যাবে অর্থনৈতিক চেহারা।
- শিল্পে অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে করণীয়
দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও ইতিহাস বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রচারণা ও উদ্যোগ। সে সঙ্গে পর্যটনকে একটি বিশেষ শিল্পখাত হিসেবে গুরুত্বারোপ করতে হবে। সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পর্যটনের জন্য প্রয়োজন দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি অনুকূল সামাজিক পরিবেশ ও অবকাঠামোগত পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। নৈসর্গিক সৌন্দর্যও শুধু প্রকৃতির দানের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। পরিকল্পনামতো মানুষের সৃজনশীলতায় সৃষ্ট স্থাপনা ও অবকাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে হবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক পর্যটন অবকাঠামোও আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে পৌঁছতে এখনও অনেক পথ বাকি। সুতরাং সরকারকে এই সম্ভাবনাময় শিল্প ব্যবস্থাপনার কথা গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অধিক সুবিধা দিয়ে এই শিল্পে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ দেশের প্রতিষ্ঠান বেশি হলে আমাদের লাভ বেশি হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে রয়েছে সম্ভাবনাময় আরও বহু পর্যটন স্পট। সময়োপযোগী ও পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে এসব পর্যটন স্পট যদি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে নবদিগন্তের সূচনা হবে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের প্রয়োজন- পর্যটনকে বাণিজ্যিকভাবে গ্রহণ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সুযোগ-সুবিধা দিলে পর্যটকরা অধিক হারে আকৃষ্ট হতে পারে।
দেশের আনাচে-কানাচে অরক্ষিত ঐতিহ্যম-িত দর্শনীয় স্থানগুলোকে সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বহু লোকের নতুন নতুন কর্মসংস্থান ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।
শুধু বিদেশী পর্যটকদের নির্ভরতায় না থেকে ‘দেশকে চিনুন, দেশকে জানুন’; ‘ঘুরে দেখুন বাংলাদেশ-ভালবাসুন বাংলাদেশ’ এ রকম দেশাত্মক সেøাগানে দেশের মানুষকে দেখানোর লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালানো দরকার। মালয়েশিয়ার আদলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বছরে একবার শিক্ষা সফরের আয়োজন বাধ্যতামূলক করা দরকার। শিক্ষা সফর বাধ্যতামূলক করা হলে- প্রজন্মের সন্তানরা দেশকে চিনবে, জানবে, ভালবাসবে। পাশাপাশি আয় হরে শতকোটি টাকা। স্কুল ক্যাম্পেইন এবং তরুণ প্রজন্মদের ভ্রমণে আগ্রহী করে তোলা দরকার। পর্যটন এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। ট্যুরিস্ট পুলিশ ব্যবস্থা কার্যকর করা দরকার।
নৌ-ভ্রমণ হতে পারে পর্যটনের আরেক পদক্ষেপ। নতুন প্রজন্ম দেশের নদীগুলোকে চিনবে এবং ইতিহাস জানবে। বর্ষায় এবং শুকনো মৌসুমে দুই বিপরীত রূপের হাওড় দর্শন হতে পারে পর্যটনের নতুন আকর্ষণ। শহরে জন্ম ও শহরে বেড়ে উঠা প্রজন্মকে গ্রামের সঙ্গে পরিচিত করে তোলাটাও হতে পারে পর্যটনের নতুন ক্ষেত্র। কৃষি, কৃষক এবং গ্রামের মানুষের সরল জীবন দর্শন হতে পারে আভ্যন্তরীণ পর্যটনের উৎস।
পর্যটন সমৃদ্ধ অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন; পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা; পর্যটন এলাকায় পর্যটন পুলিশ স্টেশন স্থাপন; পর্যটকদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা; ওয়েবসাইটে প্রচারণা বা ক্যাম্পেইন।
পর্যটন দ্রুত বিকাশমান শিল্প। বিশ্বের কয়েকটি দেশ একমাত্র পর্যটনকে অবলম্বন করেই সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল। ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই বাংলাদেশে। আমাদের দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঠিকমতো ও পরিকল্পিতভাবে করতে পারলে সুইজারল্যান্ড, পাতোয়া, ব্যাংকক-এর মতো ট্যুরিজম এখানেও গড়ে উঠতে পারে।