হাওড় সম্ভাবনায় বাংলাদেশ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে ধান এবং মাছের চাহিদা পূরণে যুগে যুগে অবদান রেখে আসছে ভাটিবাংলা তথাÑহাওড় এলাকা। বাংলাদেশ আর প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতনের চারণভূমি হাওড়াঞ্চল। বাংলাদেশের অনেক মানুষ জানে না হাওড়বাসীর সুখ-দুঃখ, সমস্যা-সম্ভাবনার কথা। হাওড়াঞ্চলে ৬-৭ মাস থাকে পানি। বাকি সময় শুকনো সবুজ প্রান্তর। এ কারণে শুকনার ৬ মাস শুধুমাত্র ফসল উৎপাদন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন হাওড়বাসীরা। এই এক ফসলের আয় দিয়ে সারা বছর চলে উদ্বৃত্ত থাকে সঞ্চয়। মৎস্য চাষ আর কৃষিভিত্তিক প্রকল্প গড়ে তোলার অপার দিগন্ত এই হাওড়ে। অনেকের ধারণা, হাওড়ের সোনার ফসল প্রতিবছর ঠিক মতো ঘরে তুলতে পারলে ১০ বছরে পাল্টে যাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা।
সম্পদে ভরপুর হাওড়
বর্ষায় যৌবনবতী হাওড় সাগরের মতো অনন্ত অসীম জলাধার। হাওরে বর্ষায় জলেভরা মাছ আর মাছ। শুকনা মৌসুমে খাদ্য শস্য ধানের সমৃদ্ধ ভা-ার। মাটির নিচে না জানি লুকিয়ে আছে কিসের খনি। বাংলাদেশের হাওড়গুলোর আছে মনোমুগ্ধকর নাম, বিশেষত্ব এবং অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে ছোট-বড় ৪১৪টি হাওড়, জলাশয় ও জলাভূমি রয়েছে। জলমহাল রয়েছে ২৮ হাজার। বিল রয়েছে ছয় হাজার ৩০০। এর মধ্যে হাওড়ের আয়তন ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। ভাটির দেশ হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জে রয়েছে ১৩৩টি, সিলেটে ৪৩টি, হবিগঞ্জে ৩৮টি, মৌলভীবাজারে ৪টি; কিশোরগঞ্জে ১২২টি, নেত্রকোনায় ৮০টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩টি হাওড় রয়েছে। হাওড়বাসীর প্রায় ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠী কৃষিকাজ করে। বাকি ১০ ভাগের ৫ ভাগ মৎস্যচাষ আর ৫ ভাগ ব্যবসা, চাকরি ও অন্যান্য কাজে নিয়োজিত।
আগামী দিনের খাদ্য ভা-ার
হাওড়াঞ্চলে একটি মাত্র ফসল- বোরো। দুঃখ কিংবা গর্ব যাই হোক- বলা হয়ে থাকে- এক ফসলি ধান; হাওড়বাসীর প্রাণ। সত্যিই বছরে একটি মাত্র ফসল হলেও বিরল বিচিত্র দেশীজাতের অনেক ধান এখনও এই হাওড়াঞ্চলে উৎপাদিত হয়। বছরে প্রায় তিন লাখ টন ধান উৎপাদন করে দেশের খাদ্য চাহিদা মেটায় হাওড়বাসীরা। হাওড় ভাটি বাংলা হচ্ছেÑ এমনই সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, যেখানে ৩৭৩টি হাওড়ে রয়েছে ০.৭৩ মিলিয়ন হেক্টর চাষযোগ্য জমি যা থেকে বছরে একটি ফসল আবাদ করে উৎপাদন হয়- ৫.২৩ মিলিয়ন টন ধান। বছরের বাকি ৬ মাস প্রায় অব্যবহৃত থেকে এ বিশাল সম্ভাবনার সুফল থেকে জাতি বঞ্চিত হচ্ছে।
হাওড়ে মাছের খনি
মাছ আর ধান হাওড়ের প্রাণ- হাওড়াঞ্চলের মানুষ এক সময় গর্ব করে বলত। হাওড়াঞ্চলের জলরাশিতে পাওয়া যায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নানা জাতের মাছ যেমন- কৈ, সরপুঁটি, পুঁটি, তিতপুঁটি, কাতলা, মাগুর, খৈলসা, বাঁশপাতা, আইড়, টেংরা, বাইম, চিতল, ভেদা, পাবদা, গজার, শোল, মহাশোল, চাপিলা, কাকিলা, বোয়াল, মৃগেল, রুই, কালবাউস প্রভৃতি। বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশে ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে হাওড়গুলোতে ১৩০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। তবে গত প্রায় এক দশকে এসব মাছের মধ্যে প্রায় ৬২ প্রজাতি অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।
বিশ্ব ঐতিহ্যের টাঙ্গুয়ার হাওড়
হাওড় শুধু মাছ আর ধান নয়। পাখির জন্য অভয়ারণ্য এলাকা। শুকনো মৌসুমে বিশেষত শীতকালে দেশের বিরল প্রজাতির বহু পাখির দেখা মিলবে হাওড়ের বদ্ধ জলাশয়ে। হাওড়ের হিজল বাগে বসে পাখিদের মিলনমেলা। সুনামগঞ্জের বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ছোট বড় ৫১টি বিলের সমন্বয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওড়কে সম্পদ ও সৌন্দর্যের রানী হিসেবে অভিহিত করা হয়। টাঙ্গুয়ার হাওড় পরিযায়ী পাখির জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান।