বড় হচ্ছে পেয়ারার বাজার

বড় হচ্ছে পেয়ারার বাজার

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক 

সবর্ত্রই পেয়ারা। বাজারে, ফুটপাথে সর্বত্রই ছড়াছড়ি পেয়ারার। এবার পেয়ারার বাম্পার ফলনের কারণে সুলভে মিলছে পেয়ারা। কেজি দরে কিংবা হালি হিসেবে চলছে পেয়ারার অর্থনীতি। ফল ব্যবসায়ীরা নানা জাতের পেয়ারার পসরা বসিয়েছে। বেরি জাতীয় ফল পেয়ারা। বাংলাদেশের সর্বত্রই পেয়ারা জন্মে। তবে বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের পেয়ারা স্বাদে, গন্ধে অপূর্ব। মৌসুমের তিন মাস পাকা পেয়ারার সুবাসে সুরভিত থাকে এ তিনটি জেলার ৫৬টি গ্রামের বাতাস। এ কারণে তিন জেলাকে বলা হয় ‘পেয়রা রাজ্য’। এখানে হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে পেয়ারার বাগান। বাণিজ্যিকভাবে বরিশাল, ফিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি প্রভৃতি এলাকায় এর চাষ হয়ে থাকে। এ পেয়ারা চাষীদের ভাগ্য নিয়ে এসেছে পরিবর্তন।


রফতানি হচ্ছে স্বরূপকাঠির আপেল পেয়ারা

ব্যাপক ফলনে এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে এসব ফসল সরবরাহ করলেও বাংলার আপেল নামে পরিচিত স্বরূপকাঠির পেয়ারা দ্বারা উন্নতমানের জেলি তৈরির কাঁচামাল হিসেবে বিশ্বের কয়েকটি দেশ পর্তুগাল, মেক্সিকো, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, ভারত, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানে রফতানি হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে পিরোজপুর জেলাধীন স্বরূপকাঠি উপজেলার পেয়ারা বিদেশে জেলি তৈরির কাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। উপজেলার ২৩টি গ্রামে ১৬ হাজার একর জমিতে ২০৪১টিরও বেশি পেয়ারা বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে বছরে প্রায় ১৬ লাখ মণ পেয়ারা উৎপাদন হয়, যার মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এ টাকার তিন ভাগের এক অংশ টাকাই বিদেশ থেকে আসছে। ২০৪১টি বাগানের মালিকসহ প্রায় ৮ হাজার পেয়ারা চাষী এতে শ্রম দিচ্ছেন। এদের অর্থ উপার্জনের একমাত্র পথ পেয়ারা চাষের ওপর নির্ভরশীল। কোন রাসায়নিক সার ছাড়াই এর ভাল ফলন হয়। উৎপাদন খরচ খুবই কম অথচ লাভ বেশি হওয়ায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা পেয়ারা চাষে অধিক উৎসাহী। এক একর জমিতে যেখানে বাদাম ফলে ২০-২৪ মণ, যার মূল্য ১৬ হাজার টাকার মতো আর কাঁঠাল ফলে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার টাকার, সেখানে পেয়ারা পাওয়া যায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার।

মাগুরায় কোটি টাকার পেয়ারা

মাগুরা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মাগুড়া-ঝিনাইদহ সড়কের পাশে হাজরাপুর, ইছাখাদা, মিঠাপুর, কালিমপুর, উথলী, নন্দলালপুর, নোয়াপাড়া, ছাচানি, রাউতরা, গৌরিচরণপুর, হাজীপুর ইউনিয়নের আলাইপুর, আড়য়াকান্দি, আড়ালিয়া, হৃদয়পুর, রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাকাকাঞ্চনপুর, বীরপুর, দোরামথানা, বেরইলসহ জেলার অপর তিনটি উপজেলায় ব্যাপক পেয়ারা চাষ হচ্ছে। জেলায় মোট ৫ থেকে ৭ হাজার পেয়ারা বাগান রয়েছে। সঠিক পরিচর্যায় ভাল ফলন হলে এখান থেকে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

পেয়ারার ভাসমান হাট

আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্রের অর্ধেক এই আড়াই মাস জমে ওঠে পেয়ারা বেচাকেনা। পেয়ারা চাষ ও ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে ২০টিরও বেশি ছোটবড় ব্যবসা কেন্দ্র। মোকামগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ আটগড়, কুড়িয়ানা, ভিমরুলী, ডুমুরিয়া, শতদশকাঠি ও বাউকাঠি। তিনটি খালের সংযোগস্থলে এ হাটটি অবস্থিত। একটি খাল থেকে নৌকা যায় স্বরূপকাঠি, একটি থেকে কাউখালি অপরটি থেকে ঝালকাঠির দিকে। দৈনিক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকার ভাষমান এ বাজারে চলে পেয়ারার কেনাবেচা। ডিঙ্গি নৌকা করে পেয়ারা নিয়ে আসে চাষীরা। নৌকা ভরা পেয়ারা এই ভাষমান বাজারের পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। ভীমরুলি, শতদশকাঠি, জগদীশপুরের খালে লাইন ধরে চলে পেয়ারা ভর্তি নৌকা। দর্শনার্থীরা ট্রলার-নৌকা ভাড়া করে দেখতে আসেন এ হাট। পাইকাররা পেয়ারা কিনে কার্গো ও ট্রলারযোগে চালান করে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

পেয়ারা পাতার চা

পেয়ারা গাছের কোন কিছুই ফেল না নয়। পেয়ারা পাতারও রয়েছে বিশেষ গুণ। পেয়ারা পাতা দিয়ে এক প্রকার চা তৈরি করেছে জাপান যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেয়ারা পাতার চা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ডায়েবেটিস রোগীদের জন্য। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এই চা মানবদেহকে সতেজ করে, দাঁত মজবুদ ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। পেয়ারা পাতা প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বাংলাদেশী পেয়ারা পাতার বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

রয়েছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

বছরের পর বছর ধরে পেয়ারা উৎপাদিত এসব এলাকার চাষিদের একমাত্র সমস্যা হিমাগার ও সড়কপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকা। প্রতি বছর হিমাগারের অভাবে এসব এলাকার কয়েক কোটি টাকার পেয়ারা নষ্ট হয়। ভিমরুলী দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পেয়ারার মোকাম ভিমরুলী থেকে নৌপথে খুলনা, ফেনী, ঢাকা, সিলেট, পটুয়াখালী, ভোলা, মাদারীপুর, নাটোর, বরিশালে হাজার হাজার মণ পেয়ারা যাচ্ছে। কিন্তু সড়কপথে যোগাযোগ থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে এসব জেলায় পেয়ারা নেয়ার জন্য পাইকাররা চাষীদের আরও বেশি দাম দিয়ে পেয়ারা কিনত। দেশের অন্যতম পেয়ারা অঞ্চল হলেও আজ অবধি এসব এলাকায় সরকারীভাবে কোন হিমাগার নির্মাণ করা হয়নি। নেই কোন জেলি কারখানাও। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, হিমাগার ও জেলি কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া অতি আবশ্যক।

লেখক: এস এম মুকুল

favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment