সাফল্যের আকাশ কেমন…?
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
আমরা সবাই জীবনে সফলতার জন্য মুখিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের অনেকেরই নাই নির্দিষ্ট কোন লক্ষ। জীবনে কোন পর্যায়ে যেতে চাই, বড় হয়ে কি হতে চাই তা অধিকাংশ মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই বলতে পারে না। কারন তদের নির্দিষ্ট কোন লক্ষই নাই। আবার অনেককে পেয়েছি যারা তাদের লক্ষের সাথে কোন ভাবেই কম্প্রোমাইজ করতে রাজি না। তাদের একটাই চাওয়া যা কিছুর বিনিময়ে হোক তাকে লক্ষে পৌছাতে হবে।
আমাদের অনেকের লক্ষ স্থির আবার অনেকের দোদুল্যমান। একটু ঝড়ো বাতাসেই শুকনা পাতার মত উড়ে যায়। ছোট বেলায় জীবনের লক্ষ কখনও ঠিক করে দেওয়া হয় আবার কখনও বা সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে বলা হলেও থাকে কয়েকটি বেঁধে দেওয়া পছন্দ অপছন্দের বিষয়। ফলাফল যে কাজটি করতে ভাল লাগে না তার সাথেই উঠাবসা করতে হয়। কিছুদিন পর শুরু হয় সেখান থেকে ছুঁটে পালানোর চেষ্টা। আর জীবনের লক্ষের স্থান হয় বাংলা বইয়ের রচনা অধ্যায়ে।
ছোট বেলায় যখন যেটা ভাল লাগত সেটাই হতে মনে চাইত। কখন বা বিমান চালানোর ইচ্ছা হত, কখনও আবার ঝালমুড়িওয়ালা আবার কখনও বাসের ড্রাইভার আবার কখনও বন্দুক হাতে পুলিশ হয়ে চোর ধরার প্রচেষ্টা। পড়াশুনার শুরুতে প্রায়ই মনে হত শিক্ষক হব। এমন অজস্র হওয়ার ইচ্ছা থেকে আসলে যে কি হব সেটাই বুঝতে না পারাটা হয়ে দাড়িয়েছে প্রধান সমস্যা।
সাইন্স, আর্টস, কমার্সের বাইরে বের হয়ে আমরা কেন চিন্তা করতে পারছি না। আমাদের তো আরও অনেক কিছু হওয়ার আছে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও তো আরও পেশা আছে। আমাদের চিন্তা ভাবনার যতটুকু পেশার মধ্যেই আটকে থাকছে কেন। আমাদের চিন্তা শক্তির সবটুকু কাজে লাগিয়ে নিজের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে নিজের ভাল লাগার কাজকে কেন গ্রহন করতে পারছি না। হ্যা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারও দরকার আছে। তাই বলে যে সবাইকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য ছুটতে হবে সেটাও নয়।
লক্ষ নির্দিষ্ট করুন কি হতে চান। তারপর কাজ একটাই সেই লক্ষের পানে ছুটতে থাকুন। লক্ষে পৌছাতে হলে লেগে থাকার কোন বিকল্প নেই। আপনাকে খেলতে হলে ১২০ মিনিট খেলার মত দম নিয়ে মাঠে নামতে হবে। ৯০ মিনিটে খেলা শেষ নাও হতে পারে। ১০-১৫ মিনিট খেলে মাঠ থেকে বিদায় নেয় তো ভীরুর দল। আরে জয় পরাজয় তো পরের ব্যাপার আগে তো মাঠে খেলুন। সেই সাথে পায়ে বল রাখার চেষ্টা করুন যাতে গোলের সাফল্য আপনার কাছ থেকেই আসে।
ছোট বেলা থেকে আমাদেরকে নিজের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। কারও সাথে কোন কিছুর শেয়ার করার বিষয়টি শেখানো হয়নি। যার ফলাফল স্যাররা যা শিখিয়েছে তার বাইরে কিছু শিখতেও পারিনি। আমাদের মা-বাবা ছোট বেলা থেকে শিখাচ্ছে স্কুলে সবার থেকে ভাল করতে হলে কাউকে কিছু দেখানো যাবে না। হোমওয়ার্ক বা নোট কাউকে দেয়া যাবে না। ও যদি তোমার নোট পেয়ে যায় তো তোমার থেকে পরীক্ষায় ভাল করবে। তোমাকে হতে হবে সবার থেকে আলাদা।
কিন্তু এই আলাদা কিছুই যে তাকে নেতিবাচক দিকে টেনে নিচ্ছে তা কি কখনও ভেবে দেখেছি। বড় হয়েও সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। তার কর্মস্থলেও সে আলাদা হওয়ার চেষ্টায় থাকছে। কারও সাথে অফিসের কোন কাজের ব্যাপারেও শেয়ার করছে না। কোন কাজে প্রবলেমে পড়লেও তা নিজেই চেষ্টা করছে সমাধান করার। যা তার বস বা সহ কর্মীর সাথে শেয়ার করলে হয়ত সহজেই সমাধান করতে পারত। সেই সাথে নিজেকেও পরবর্তীতে চাকুরি হারানোর মতসমস্যায়ও পড়তে হত না।
পারিবারিক ভাবে জীবনের লক্ষ নির্দিষ্ট না করে দিয়ে তাকে সুযোগ দেওয়া উচিৎ তার লক্ষ নিয়ে কাজ করার। যে যার ভাল লাগার বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারলে সাফল্য তার সুনিশ্চিত। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা যে ছেলেটি হয়ত তার গ্রামের বাজারের বাইরে আসে নি সেই কিনা ছুটে বেড়িয়েছে বিশ্বের বড় বড় শহর গুলোতে তার লক্ষের শেষ সীমানায় পৌছাতে। যে সুপারির পাতার খোলে চড়ে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখেছে সেই তার লক্ষে পৌছে আকাশ ছুয়েছে।
জীবনে সাফল্য পাওয়া অনেক কঠিন কিছু নয়। যারা সফল হয় তারাও আপনার মত একই কাজ করে কিন্তু লেগে থেকে। তাদের ঘাড়ের ওপর দুইটা মাথা নয় একটাই। লক্ষটাকে স্থির রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যান। সাফল্য আপনার গলায় মালা হয়ে ঝুলবে। জীবনে করেকটা বছর পরিশ্রম করে কাটালে যদি বাকীটা জীবন ভাল থাকা যায় তবে লক্ষ স্থির না করে অবহেলায় সময় কাটানোই বোকামী।