যেসব কারণে ব্যর্থ হয় অনলাইন ব্যবসা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
অনলাইন ব্যবসা শুরু যদি করার চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন, তবে মাথায় রাখবেন আপনার সাথে সম্পৃক্ত যেসব ব্যবসাগুলো আছে, তারা কেমন করছে? অথবা যায়গাগুলো এখন কোন অবস্থানে আছে। তারা কোন দিকে ভালো করছে আর কোন দিকে ভালো করছে না। ভালো না করার দিকগুলো কেন, আর ভালো করার দিকগুলো কেন। এগুলো হচ্ছে মার্কেট এনালাইসিস। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু একটা অনলাইন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে। আমার কাছে এমন কিছু কারন মনে হয়েছে, যে সমস্যার কারনে বেশিরভাগ অনলাইন বিজনেসে ধ্বস নেমেছে।
হিসাব এর অঙ্কে গড়মিল
বেশিরভাগ অনলাইন কোম্পানি তাদের ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট টা ঠিক মত পর্যবেক্ষণ করে না। যার কারনে খুব দ্রুত এই ধরনের কোম্পানিগুলো ক্রাশ হয়ে যায়। বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ইনকাম করার পূর্বেই হিসাবের বাইরে টাকা খরচ করে। কিন্তু প্রাথমিক দিকে একটা ছোট্ট স্টেপ এর ক্ষেত্রে ভেবে নেওয়া উচিৎ যে, এই টাকাটা আসলে আমার কি রিটার্ন দিবে বা আসলে এটা রিটার্ন দিয়ে সক্ষম কি না?
পকেটে আছে ১০ লক্ষ টাকা। ১ লক্ষ টাকা স্পেস ভাড়া দেওয়া। যেখানে একটা টেবিলে বসে কাজ করা যায়, মানুষ দেখানোর তাগিদে ১০ টা টেবিল নিয়ে আসা। এগুলো হচ্ছে অবাঞ্ছিত ব্যয়।প্রাথমিক দিকে শুধুমাত্র আপনার মাথায় রাখা উচিৎ যে, আমার পাশে যে টিম আছে তারা কতটুকু ভালো, এবং তারা এই বিজনেসকে বিশ্বাস করছে কি না, তাদের লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার মত সামর্থ্য এবং শক্তি আছে কি না?
অনলাইন ব্যবসাটা নিশ্চয় একটা ল ফার্ম না। যেখানে মানুষকে ইম্প্রেস করার জন্য হাই প্রোফাইল অফিস নিতে হবে। যে টাকাগুলো খরচ সেখানে করতে হবে সেটা যদি টিম মেম্বারদের পেছনে এবং অফিসের বিভিন্ন সফটওয়্যার এর পেছনে খরচ করেন, তবে ওই টাকাটা আপনার কাজে দিবে, যেটা আপনার হাই-প্রোফাইল অফিস তৈরি তে সাহায্য করবে।
প্রতিদিন অফিস এক্সপেন্স ম্যাথ করা উচিৎ। এবং সেই পর্যন্ত করা উচিৎ যেই পর্যন্ত না গেলে আপনার অফিসে একজন ফাইনান্সিয়াল এনালাইসিস জব হোল্ডার আপনার রাখার প্রয়োজন হয়। এবং কম করে হলেও প্রতিদিন দুইবার চেক করে নেওয়া উচিৎ যে, টাকাগুলো সঠিক এবং সেগুলোর প্রোপার ব্যবহার হচ্ছে কি না।
রেভিনিউ মডেল
স্টার্টআপদের কাছে আমার সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটা থাকে, সেটা হচ্ছে তাদের রেভিনিউ মডেল কি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্টার্টআপ কোন ধরনের রেভিনিউ মডেল তৈরি না করেই ব্যবসাতে নেমে পড়ে। কিন্তু একটা ব্যবসা শুরুর চিন্তা করার পূর্বে এই সঠিক উত্তর নিজে জেনে এরপর ব্যবসা তে নামা উচিৎ। কিভাবে রেভিনিউ আসবে? ইনকামটা কতদিন যাবত থাকবে? যদি ইনকাম এই মডেলে না আসে, তবে কোন মডেলটি ব্যাকআপ প্ল্যান হিসেবে রাখা উচিৎ ? কিভাবে এই প্রোফিটগুলো ভাগ হবে? ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়েই রেভিনিউ মডেল তৈরি হয়।
যদি ব্যবসাটা সফল করতে হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই উচিৎ একের অধিক আয় এর পথ খোলা রেখে কাজ করা। কারন যেকোনো একদিকে ইনকাম কম আসতেই পারে। আর এটা খুব সাধারন হিসাব। কিন্তু আপনি যদি এটার ব্যাকআপ পথ খোলা না রাখে, তবে প্রথমে আপনাকে ওয়ার্কারদের সেলারিগত সমস্যা এরপর ইনভেস্টার সমস্যা এবং শেষপর্যন্ত ব্যর্থতার খাতায় নাম লেখাতে হবে। সুতরাং ব্যবসা শুরুর পূর্বে বিজনেস রেভিনিউ মডেলটা দাড় করানো বাধ্যতামুলক ।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ ই-কমার্স বিজনেসগুলো ব্যর্থ হবার পেছনে এটা একটি অন্যতম কারন। যেখানে মার্কেট তৈরি করে ব্যবসা করতে হবে, সেখানে তারা এই ধরনের রেভিনিউ মডেল তৈরি না করে কিভাবে ব্যবসাতে ঝুকে, আমার কোন আইডিয়া নেই। অতি সাহসী বলা চলে।
সু–পরিকল্পনা এবং স্ট্রাটেজি
বেশিরভার স্টার্টআপ ইনভেস্টর নেয়, কিন্তু মিথ্যা বলে। যেটা আদৌ সম্ভব না, সেটা জানার পরও ইনভেস্টমেন্ট নেয়। আর যদি জেনেও থাকে, তবে সেটার মধ্যে কোন ভুলত্রুটি আছে কিনা যাচাই করে না। বাংলাদেশের কয়েকজন স্টার্টআপ এর কাছে যখন আমি জিজ্ঞাস করি যে, আপনার স্ট্রাটেজি কি এটার জন্য। তখন তারা উত্তর দিতে চায় না। কারন একটাই মনে করে যে, তার বিজনেস আইডিয়া নিয়ে আমি মার্কেটে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আসবো। কিন্তু ধারনাটা সম্পূর্ণ ভুল।
আপনার প্ল্যান নিয়ে কেউ কখনও আগাবে না। কারন আমরা কেউ বিল-গেটস বা মার্ক জুকারবার্গ না যে, টাকাতে আমাদের সমস্যা নেই। আমাদের ২ কদম হাটতে গেলে ভাই পেছন দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। তাই শেয়ার এর মাধ্যমে নিজদের প্ল্যান পাকাপোক্ত করে নেওয়া উচিৎ। একটা আলোচনাতে কোন না কোন নতুন স্ট্রাটেজি তৈরি হয়। এভাবে প্রত্যেক স্ট্রাটেজি যখন আপনার পাকাপোক্ত হবে, তবেই ব্যবসাতে নামা উচিৎ।
যখন ইনভেস্টররা তাদের রেভিনিউ এর জন্য সিইও প্রেশার করে, তখন তারা ওই ইনভেস্টরকে বাদ দেওয়ার চিন্তা করে অন্য আরেকজনকে খোজার চেষ্টা করে। তাছাড়া তারা ইনভেস্টর কে কখনও তাদের প্রোপার প্ল্যান এবং স্ট্রাটেজি শেয়ার করে না। যার কারনে ইনভেস্টর আরও বেশি হাংরি হয়ে যায়। তারা মনে করে যে, কোন না কোনভাবে হয়ত এখানে কিছু লুকানো হচ্ছে। ফলে ইভেস্টর আরও বেশি রেভিনিউ এর জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকে।
বেশিরভাগ এর চিন্তা০ভাবনা থাকে যে, ইনভেস্টমেন্ট নিব। বাজারের সবথেকে বড় ইলিশ কিনব, এরপর বাকীটা চিন্তা-ভাবনা করে দেখব। যদি নিজের কাছে সৎ না থাকতে পারেন, তবে শিউর থাকেন যে, আপনার জন্য বিজনেস না। একই সাথে রেভিনিউ মডেল তৈরির সময় উচিৎ যে, হিসাবটা নিখুদ আছে কিনা এবং এটা ইনভেস্টরকে রিটার্ন দেওয়ার সময়-সীমা অতিক্রম করবে কি না। প্রয়োজন সময় বেশি নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনাকে বাস্তবরূপ দান করা।
মার্কেটিং প্ল্যান
প্রত্যেকটা স্টার্টআপ শুরু হয়, কোন না কোন গ্রেট পরিকল্পনা, প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস নিয়ে। কিন্তু সঠিক কোন মার্কেটিং প্ল্যান নিয়ে চিন্তা করে না। আর যদিওবা করে থাকে, তবে সেটার জন্য সীমিত পরিমান বাজেট রাখা হয়। যা তুলনামূলক নগণ্য। আমাদের ভাবনা এইরকম যে, আমরা মার্কেটার রাখব কদু টাইপের একজন, এরপর তাকে দিয়ে আমি মার্কেটিং করব।
একজন কোয়ালিটি মার্কেটার সবথেকে কম কাজ করে থাকে। যে মার্কেটার অতিরিক্ত কাজ করে, আপনি ধরেই নিতে পারেন, এই লাইনে নুব। যদি মার্কেটার বসাই রেখে আপনার চার্জ দিতে হয়, তবে সেটা দেওয়ার জন্য মনস্থির করে রাখুন। কারন তার একটা মার্কেটিং আইডিয়া আপনার ব্যবসা একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত নিতেই সাহায্য করবে। কিন্তু এই ঘটনার সম্পূর্ণ উলটা হয়।
আমরা টাকার নামে টাকা ঠিক ঢালি। কিন্তু সঠিক যায়গাতে না। ব্যবসা শুরুর পূর্বে মার্কেটিং পদ্ধতি এবং কিভাবে ট্র্যাফিক কে কনভার্ট করা যায়, সেটার সঠিক পরিকল্পনা, স্পেশাল বাজেট এবং টার্গেট গোল ফিক্স করে তবে ব্যবসাতে হাত দিন। এতে ব্যবসার উন্নতি ছাড়া ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
মার্কেটিংটা হচ্ছে সেক্স এর মত। যত বেশি আপনি ইম্প্রেশনটা ভালো করতে পারবেন, ট্র্যাফিক তত বেশি আপনার কাছে আসবে। তাই ট্র্যাফিককে কনভার্সন করার মাথায় রেখে প্ল্যান করুন। রিয়েলস্টীক প্ল্যান করবেন। যে প্ল্যানে আপনার হিউজ বাজেট দরকার বা অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন, সেই ধরনের মার্কেটিং পদ্ধতি থেকে বিরত থাকুন। তাতে যদি আপনার খরচ একটু বেশি লাগে, সেটা করেন। মূল কথা রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট ঠিক রেখে তবেই আপনাকে লংটাইম প্রোসেস এর চিন্তা করা উচিৎ। এতে সফল না হলে লসের পরিসংখ্যানটা কমে আসে।