কৃষি–উপকরণের ব্যবসায় নারীরা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
১০ বছর আগে স্বামীর কৃষি–উপকরণের ব্যবসা যখন লোকসানের মুখোমুখি, তখনই যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মিনা পারভীন হাল ধরেন সেটির। উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসাটিকে আবার দাঁড় করানো। একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সামাজিক সব বাধা ডিঙিয়ে একটু একটু করে তিনি সফলতা অর্জন করেছেন। উপার্জন বাড়িয়েছেন সংসারের। ক্রমাগত বেড়েছে তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতাও।
আরেক উদ্যোক্তা স্বপ্না ছয় বছর ধরে কৃষি–উপকরণের ব্যবসায় জড়িত। খুলনার বটিয়াঘাটায় স্বপ্নার কৃষি–উপকরণের দোকানটি ছিল মূলত তাঁর স্বামীর। স্বামীর ব্যস্ততার কারণে দোকানটির দেখাশোনা স্বপ্নাকেই করতে হতো। বছরখানেক হলো স্বপ্না নিজের উদ্যোগে একই বাজারে কৃষি–উপকরণের আরেকটি দোকান খোলেন।
বরিশালের বাকেরগঞ্জে দরজির দোকান ছিল মোসাম্মৎ খাদিজার। সেই দোকানের আয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন তিনি। বেশ পরিশ্রম করলেও দোকান থেকে তাঁর আয় বেশি ছিল না। তাই বছরখানেক আগে দরজি দোকানের পুঁজিটুকু সম্বল করেই একটি দোকান ভাড়া নিয়ে শুরু করেন কৃষি–উপকরণের ব্যবসা। এখন সেই ব্যবসা থেকে তাঁর মোটামুটি ভালোই আয় হয়, এলাকায়ও বেড়েছে মানমর্যাদা।
মিনা, স্বপ্না, খাদিজা—তিনজনই তাঁদের নিজ নিজ এলাকার বাজারে দোকান দিয়ে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিক্রি করেন কৃষি–উপকরণ। যেমন বীজ, সার ও বালাইনাশক। শুধু বেচাকেনার মধ্যেই কিন্তু তাঁদের কাজ শেষ হয়ে যায় না। প্রতিষ্ঠিত বীজ, সার, বালাইনাশক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, কৃষি–উপকরণের সঠিক ব্যবহার ও সচেতনতামূলক পরামর্শও নিয়মিত দিচ্ছেন কৃষকদের। দায়িত্ব এখানেই শেষ নয়; বীজ কিনে রোপণে সমস্যা, সঠিক মাত্রা জানা নেই, বালাইনাশকের ব্যবহার সম্পর্কে জানা দরকার—সব পরামর্শই দিয়ে থাকেন তাঁরা।
মিনা পারভীনের এলাকায় আগে সাধারণত কেউ বালাইনাশক ব্যবহারের সময় ফুলহাতা শার্ট, প্যান্ট, গ্লাভস, মাস্ক ব্যবহার করতেন না। তিনি এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করেছেন। মিনা মনে করেন, কৃষকেরা মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার করলে ফলন বাড়বে, উৎপাদনও হবে আশানুরূপ।
স্বপ্না শুধু কৃষি–উপকরণ বিক্রি বা প্রয়োজনীয় পরামর্শই দেন না, ক্রেতাদের পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও ধারণা দিয়ে থাকেন। তিনি এখন তাঁর এলাকায় অনেক কাজেই নেতৃত্ব দেন। তাঁর দোকান দেখে এখন এলাকায় আরও অনেকে এই ব্যবসায় জড়িত হওয়ার সাহস করছেন। মিনার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা দুই শ থেকে বেড়ে এখন পাঁচ শতে দাঁড়িয়েছে। তাঁর ক্রেতাদের একজন স্মৃতি রাণী বলেন, ‘স্বপ্নার এমন সাজানো দোকান দেখে আমরা উৎসাহ পাই। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা এখানে ভালো জিনিস পাই।’ ব্যবসা ভালো হওয়ায়, স্বপ্না ও তাঁর স্বামী এখন প্রতি মাসে ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমান। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়মিত স্কুল যাচ্ছে।
মিনা, স্বপ্না, খাদিজা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২০টি জেলার খুচরা কৃষি–উপকরণ বিক্রেতাদের সংগঠন এআইআরএনের সদস্য। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের© ফিড দ্য ফিউচার ইনিশিয়েটিভের আওতায় ইউএসএআইডির অর্থায়নে এগ্রো-ইন পুটস প্রজেক্টের (এআইপি) সহযোগিতায় গঠিত। এআইআরএন তিন শ নারী কৃষি–উপকরণ বিক্রেতাসহ সব মিলিয়ে তিন হাজার খুচরা কৃষি–উপকরণ ব্যবসায়ীর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে মিনা, স্বপ্না, খাদিজার মতো আরও ১৪৭ জন নারী কৃষি–উপকরণ বিক্রেতা প্রকল্পটির আওতায় এই পেশায় এসেছেন। নারীদের জন্য সমাজের গৎবাঁধা কাজে না গিয়ে তাঁরা বেছে নিয়েছেন একটি প্রতিযোগিতামূলক পেশা।