সাক্ষাৎকার : পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্বাচন করা উচিৎ

সাক্ষাৎকার : পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্বাচন করা উচিৎ

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

দেশের শীর্ষ স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটি লিমিটেড চাকরি ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে প্রতিষ্ঠানটিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের দেশে বিদেশে দ্রুত কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও দক্ষ মানবশক্তি তৈরির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছে গত এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটিতে ১৬ জন প্রতিবন্ধীকে চাকরি দিয়েছে ক্রিয়েটিভ আইটি কর্মক্ষেত্রে এসব নানান উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন


: ক্রিয়েটিভ আইটি প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প কি?
মো. মনির হোসেন: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য ২০০৮ সালে ক্রিয়েটিভ আইটি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই ট্রেনিং এর পাশাপাশি আইসিটি প্রোডাকশন বিভাগও রেখেছিল। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সাথে সাথে তাদেরকে লাইভ প্রোডাকশনের সাথে সম্পৃক্ত করে অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা। অভিজ্ঞদের দিয়ে স্থানীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি। ফলে আমাদের এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর প্রত্যেকে ক্যারিয়ার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশে আমরা অনেক সময় দেখি কম্পিউটার সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেও অনেকে চাকরি পাচ্ছেন না। আমরা মার্কেট অ্যানালাইসিস করে যেসব প্রতিষ্ঠান দক্ষ আইটি প্রফেশনাল খুঁজছে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে জব প্লেসমেন্টের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের ধারা অব্যাহত রয়েছে

: আইটি খাতে অনেকেই নানান বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেও সফল হচ্ছে না কেন?
মো. মনির হোসেন: অনেকেই মনে করেন আইটি খাতে সাফল্য নিশ্চিত করতে হলে অনেক বিষয়ে শিখতে হবে। তবে আমি মনে করি খাতে চাকরি বা উদ্যোক্তা হিসেবে সাফল্য পেতে হলে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায় আপনি ঠিক কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ। সেই অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করার জন্য আমরা আমাদের প্রশিক্ষণ কোর্স ছোট ছোট করে ভেঙ্গে ফেলেছি। এখন , ১২ মাসের অনেকগুলো কোর্স চালু করা হয়েছে। ফলে যার যতটুকু যে বিষয়ে জানা দরকার তা স্বাচ্ছন্দ্যে জানতে পারছেন। একই সাথে প্রশিক্ষণার্থীদের জব প্লেসমেন্টের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি

: দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চাকরির জন্য কোন প্রশিক্ষণগুলো সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন?
5_237084মো. মনির হোসেন: চাকরি ক্ষেত্রে বর্তমানে গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং এবং অনলাইন মার্কেটিং সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। আগামী দিনে এসব ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। এসবের যত চাহিদা বাড়বে তত কর্মক্ষেত্রে তৈরি হবে। তাই এখনই এসব বিষয়ে যারা জেনে নিতে পারবেন তারাই কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন। তবে আমাদের দেশে অন্যের কোন বিষয়ে সাফল্য দেখে সেই বিষয়ে কোন প্রকার অভিজ্ঞতা অর্জন ছাড়াই ঝাঁপ দেওয়ার অভ্যাস সচারাচার দেখা যায়। আসলে মানুষ সেটাতেই সাফল্য অর্জন করে যেটাতে সে আগ্রহী থাকে। অন্যের সাফল্য শুধু অনুপ্রেরণা মাত্র। নিজের পছন্দ সক্ষমতাকে গুরুত্ব দিয়ে নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে সারা জীবনে আর কখনই পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না

: কর্মক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য আসলে কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিৎ?
মো. মনির হোসেন: আমি আগেই বলেছি তার পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্বাচন করা উচিৎ। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে অনেকেই তার চাওয়া বুঝতে পারে না। সে ক্ষেত্রে তার কোন পেশায় যাওয়া উচিৎ তা নির্ধারণ করার জন্য নিজের পারিপার্শ্বিক অবস্থাও অনেক কিছু বলে দিতে পারে। যেমন সাংবাদিকদের জন্য অনলাইন মার্কেটিং বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে ভালো করবে। আবার কেউ কোন কিছুর মধ্যে নতুনত্ব চিন্তা বা আবিষ্কার করতে পারলে তার গ্রাফিক ডিজাইন শেখা উচিৎ। ক্রিয়েটিভ আইটিতে কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার আগে সে বিষয়ে অন্তত দুটি ফ্রি ক্লাস করে নিজের সক্ষমতা যাচাই করে নিতে পারে। সে যদি মনে করে বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে তার কষ্ট হবে না তাহলে ক্লাস শুরু করবে। অন্যথায় বিকল্প চিন্তা করতে হবে

: আপনার দৃষ্টিতে সময়ে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের জন্য সবচেয়ে কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ?
মো. মনির হোসেন: এটা আসলে পরিস্থিতিতে ওপর নির্ভর করে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ননআইটিদের জন্য গ্রাফিক ডিজাইন সবচেয়ে বেশি অর্থবহ। আইটি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে খাতে গ্রাফিক, অনলাইন মার্কেটিং বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট দিয়ে শুরু করলে ভালো হয়। তারা এটা ভালো করে শিখতে পারলে দেশেবিদেশে কাজের কোন অভাব হবে না। তবে মজার বিষয় হচ্ছে দেশের অধিকাংশ আইটি প্রতিষ্ঠান কিন্তু ননআইটিরা প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর যারা সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের তাদের সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কিং, অ্যাপস, কমার্স এফকমার্সের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। দিনদিন এগুলোর চাহিদা বাড়ছে। ফলে জায়গাতে ক্যারিয়ার করলে ভালো ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে

: আইটি খাতে চাকরি উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সরকারি উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন?
মো. মনির হোসেন: সরকারি উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো। গ্রামের একটি মানুষ কখনই কম্পিউটার ধরেনি। অন্তত সে কম্পিউটার ধরে বেসিক বিষয়গুলো শিখতে পারছে। মানুষ স্বপ্ন না দেখলে সফল হতে পারে না। সরকারের এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের ওই সাধারণ মানুষের স্বপ্নের সূচনা হচ্ছে। আর স্বপ্ন দেখতে পারলেই মানুষ বড় হতে পারে। এছাড়া যারা সরকারের এই প্রজেক্টের মাধ্যমে কম্পিউটারের বেসিক শিখে নিতে পারছেন তারা পরবর্তীতে যেকোন আইটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পরবর্তী ধাপে অংশগ্রহণ করে নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করতে পারছেন। ফলে এরাই হচ্ছে পরবর্তী আইটি সেক্টরের বড় উদ্যোক্তা

: দেশে অনেক আইটি ট্রেনিং হচ্ছে কিন্তু সে তুলনায় ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতা কম কেন?
মো. মনির হোসেন: এটা সত্য, দেশে প্রচুর আইটি ট্রেনিং হচ্ছে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাফল্য আসছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, আমাদের মানুষের ধৈর্যশক্তি কম। এরা বিড করা মাত্রই কাজ পেতে চায়; যেটা অসম্ভব। আবার অনেকে আছে কাজ ভালো পারে কিন্তু ইংরেজি কমিউনিকেশনে দুর্বলতা আছে। তারা কাজ পারে কিন্তু ভয় পায় বলে যোগাযোগ করতে পারে না। ফলে তাদের দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং হয় না। আবার অনেকের বাসায় ইন্টারনেট বা পিসি নেই বলেও এখানে কাজ করতে পারছে না

: ফ্রিল্যান্সিংয়ে কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিত করার জন্য আপনারা কি কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন?
মো. মনির হোসেন: হ্যাঁ। ইতোমধ্যেই আমরা ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের সাবেক সফল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং ক্লাব গড়ে তুলছি। এর মাধ্যমে নতুনদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের ক্ষেত্র তৈরি করছি। নতুনরা তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী তাদের মাধ্যমে কাজ নিয়ে নিজেদের প্রোফাইল ভারী করতে পারছে। এর মাধ্যমে তারা পরবর্তীতে সহজে কাজ পেতে পারছে। ফলে খাতে আর ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ থাকছে না। এখন আমাদের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাফল্যের মুখ দেখছে। উদ্যোগের ফলে শিগগির সাফল্য ৮০ শতাংশে উন্নিত হবে বলে আশা করছি। আগামী বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং ফার্ম হিসেবে কাজ করবে ক্রিয়েটিভ আইটি লিমিটেড। এখানে দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ পাবে

monir3_4804: সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) থেকে আপনারা কি ধরণের কাজ করছেন?
মো. মনির হোসেন: সিএসআর আমরা সব সময় করছি। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইসিটি সচেতনতা বৃদ্ধি করছি। চলতি মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক বিভাগের সাথেও আমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সেখানে আমরা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন করার সুযোগ ডিজাইনে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছি। শিগগির আরও কয়েকটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরণের সহযোগিতা করার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে প্রত্যেক জেলায় আইটি ট্রেনিং এবং বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া আমরাই প্রথম প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে আইটি ট্রেনিং জব প্লেসমেন্টের সুযোগ করে দিচ্ছি

: চাকরি ক্ষেত্রে আপনারা শিক্ষার্থীদের কি ধরণের সহযোগিতা করে থাকেন?
মো. মনির হোসেন: আমরা প্রফেশনাল প্রস্তুত করছি। আমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী জনশক্তি সরবরাহ করছি। তবে এখন আমাদের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা উল্লেখজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মাস পরপর আইটি জব ফেয়ার করবো। সেখান থেকে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পছন্দমত লোক নিয়োগ দিতে পারবেন। এছাড়া আমরা গত এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ১৬ জন প্রতিবন্ধীকে আমাদের অফিসে চাকরি দিয়েছি। আমাদের ধরণের উদ্ভাবনী উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে

: আপনাদের আগামীদিনের পরিকল্পনা কি?
মো. মনির হোসেন: দেশের আইটি খাতে দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিগগির দেশজুড়ে ব্রাঞ্চ চালু করতে যাচ্ছি। দ্বিতীয়ত আমাদের ট্রেনিংএর বাংলা ভিডিও ইউটিউবে ফ্রি করে দিতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশে বা বিদেশে যারা আইটিতে প্রশিক্ষণ নিতে চাচ্ছেন তারা সহজেই ঘরে বসে ট্রেনিং নিতে পারবেন। এছাড়া যারা সরাসরি ট্রেনিং নিতে চাচ্ছেন তারা আগে থেকে ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত এবং প্রস্তুতি নিতে পারবেন। আমরা আশা করছি এর মাধ্যমে আইটি ট্রেনিং সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে

সূত্র: প্রিয় ডটকমfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment