ব্যানার ও সাইনবোর্ডের দোকান
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
 
ব্যানার হলো কাপড়ে লেখা বিভিন্ন তথ্য এবং সাইনবোর্ড হলো কাপড় ও স্টীল বা টিনের উপর লেখা বিভিন্ন তথ্য যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ ও বিভিন্ন বিষয় জানানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পণ্যের প্রচার-প্রচারণায় ব্যানার ও সাইনবোর্ড প্রয়োজনীয় মাধ্যম হতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সভা, মিছিল, বনভোজনে ব্যানার ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সামগ্রীর প্রচার ও বিভিন্ন তথ্য জনগণকে জানানোর জন্যও ব্যানার ব্যবহার করা হয়। ব্যানার মূলত স্বল্প সময়ের অধিবেশন ও স্বল্পকালীন তথ্য প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। তাই ব্যানার কাপড়ের উপর বিভিন্ন রঙ দিয়ে লেখা হয়।
সাইনবোর্ড সাধারণত দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত, দোকান প্রভৃতির সামনে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া রাস্তার পাশে বিভিন্ন নির্দেশ ও নানান দীর্ঘমেয়াদী বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হয়। সাইনবোর্ড সাধারণত বেশি সময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ কারণে সাইনবোর্ডে লেখার জন্য অ্যালুমিনিয়াম, টিন, স্টীল বা কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বাজার সম্ভাবনা
বাংলাদেশের সব স্থানেই নানান তথ্য প্রচারের জন্য সাইনবোর্ড ও ব্যানার ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ব্যানার ও সাইনবোর্ডে বিজ্ঞাপন এঁকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তাই সবসময় সবখানে ব্যানার ও সাইনবোর্ডের চাহিদা আছে।
স্থান নির্বাচন
ব্যানার ও সাইনবোর্ডের ব্যবসার জন্য স্থায়ী দোকান ঘরের প্রয়োজন হয়। বাজারের কেন্দ্র বা যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় এরকম স্থানে দোকান ঘর নিলে সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।
মূলধন
ব্যানার ও সাইনবোর্ডের ব্যবসা করার জন্য স্থায়ী উপকরণ কিনতে প্রায় ২১২-২৪৫ টাকার প্রয়োজন হয়। এছাড়া ১টা ব্যানার তৈরি করতে প্রায় ১২৫-১৪১ টাকার প্রয়োজন হবে। সেই হিসেবে কাজ বুঝে কাঁচামাল কিনতে হবে। এছাড়া এই ব্যবসার জন্য স্থায়ী দোকানের প্রয়োজন। তাই দোকান ঘরের পজিশন ও ভাড়া বাবদ আলাদা টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা) -এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ
ব্যানার ও সাইনবোর্ডের ব্যবসা শুরু করার আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে ব্যবসার বিস্তারিত জেনে নিলে ভালো। এই ব্যবসা করতে হলে কিছুটা লেখাপড়া জানতে হয়। এছাড়া উদ্যোক্তাকে সৃজনশীল হতে হবে। সুন্দর হাতের লেখা এবং একটু নতুন আঙ্গিকে ব্যানার ও সাইনবোর্ড লিখলে সহজেই বাজারে সুনাম ছড়াবে এবং বেশি অর্ডার পাওয়া যাবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান
স্থায়ী উপকরণ
| 
 উপকরণ  | 
 পরিমাণ  | 
 আনুমানিক মূল্য (টাকা)  | 
 প্রাপ্তিস্থান  | 
| 
 হাতুড়ি  | 
 ১টা  | 
 ৮০-১০০  | 
 হার্ডওয়ারের দোকান  | 
| 
 স্কেল  | 
 ১টা  | 
 ২২-২৫  | 
 স্টেশনারি দোকান  | 
| 
 তুলি  | 
 ২/৩টা  | 
 ৯০-৯৫  | 
 হার্ডওয়ারের দোকান  | 
| 
 রঙ মেশানোর পাত্র  | 
 ২টা  | 
 ২০-২৫  | 
 তৈজসপত্রের দোকান  | 
| 
 মোট=২১২-২৪৫ টাকা  | 
|||
কাঁচামাল (১টি ব্যানার লেখার জন্য)
| 
 উপকরণ  | 
 পরিমাণ  | 
 আনুমানিক মূল্য (টাকা)  | 
 প্রাপ্তিস্থান  | 
| 
 কাপড়  | 
 ৪ গজ  | 
 ৮০-৮৫  | 
 কাপড়ের দোকান  | 
| 
 রঙ( প্লাস্টিক পেইন্ট)  | 
 পরিমাণ মত  | 
 ৩৫-৪০  | 
 হার্ডওয়ারের দোকান  | 
| 
 চক  | 
 ১টা  | 
 ৫-৮  | 
 স্টেশনারি দোকান  | 
| 
 পেন্সিল  | 
 ১টা  | 
 ৫-৮  | 
 স্টেশনারি দোকান  | 
| 
 মোট=১২৫-১৪১ টাকা  | 
|||
ব্যানার তৈরির নিয়ম
সাধারণত ব্যানার তৈরি করা হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির অর্ডারের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে নিদের্শকারীর পছন্দ অনুযায়ী ব্যানারের কাপড় ও রঙ নির্বাচন করা হয়। ব্যানারের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মাপও হয় তাদের নিদের্শ অনুযায়ী।
ব্যানার তৈরির বিভিন্ন ধাপ
- প্রথমে ব্যানার ক্রেতার নির্দেশ অনুযায়ী সঠিক মাপ, রঙ ও ধরণ অনুযায়ী কাপড় নিতে হবে।
 - এর পর ব্যানারে যে বিষয়টি লেখা হবে সেটা লেখার জন্য কাপড়ের উপর চক ও স্কেল এর সাহায্যে দাগ দিয়ে নিতে হবে। এটা করা হয় যাতে সব লেখাগুলো একই মাপের হয়। সাধারণত সবচেয়ে জরুরি তথ্য, প্রতিষ্ঠানের নাম বা সম্মেলন বা সভার প্রধান ব্যক্তির নাম অপেক্ষাকৃত বড় অক্ষরে লেখা হয়। সেদিকে খেয়াল করে সেই মাপ অনুযায়ী কাপড়ে দাগ দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতার নির্দেশনা থাকলে তা মেনে চলতে হবে।
 - এরপর দাগের মধ্যে যে তথ্য দেওয়া হবে সেটা লিখতে হবে। লেখাটা প্রথমে চক দিয়ে লিখে নেওয়া ভালো। কারণ এক্ষেত্রে কোন ভুল হলে তা সংশোধন করার উপায় থাকবে।
 - লেখা শেষ হলে যে রঙ দিয়ে ব্যানারের উপর লেখা হবে সেই রঙ একটি পাত্রে ভালোভাবে গুলিয়ে নিতে হবে।
 - ব্যানারটা সমান মেঝেতে রেখে বা সমান দেয়ালে টাঙিয়ে আগে যা চক দিয়ে লেখা হয়েছে তার উপর রঙ ও তুলির সাহায্যে লিখতে হবে।
 - লেখা শেষ হলে রঙ শুকানোর জন্য ব্যানারটা কিছুক্ষণ বাতাসে রাখতে হবে।
 - ক্রেতা যদি ব্যানারটা ফ্রেমে আটকানো অবস্থায় চায়, তাহলে ব্যানারের মাপ অনুযায়ী কাঠ কেটে নিয়ে একটি ফ্রেম তৈরি করতে হবে। ব্যানারটিকে ফ্রেমের উপর রেখে এর চারপাশে পেরেক ও হাতুড়ির মাধ্যমে আটকিয়ে দিতে হবে।
 
সাইনবোর্ড তৈরির নিয়ম
সাইনবোর্ড ঠিক ব্যানারের নিয়মেই লেখা হয়। তবে এক্ষেত্রে কাপড়ের পরিবর্তে টিন, স্টীল বা কাঠ ব্যবহার করা হয় এবং এনামেল রঙ ব্যবহার করা হয়। অনেকসময় স্টীল বা টিনটাকে বিভিন্ন রঙে রঙিন করে নিয়ে তার উপর লেখা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে মাপ মতো টিন বা স্টীল নিয়ে সেটাকে ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী রঙে রঙিন করে নিতে হবে। রঙ করা শেষ হলে এটা ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে তার উপর ব্যানার যে নিয়মে লেখা হয় সেভাবে রঙয়ের টিন বা স্টীলে লেখার কাজ শুরু করতে হবে।
সাবধানতা
- ব্যানার ও সাইনবোর্ডের রঙ যাতে ভালোভাবে শুকায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
 - সুন্দর ও পরিস্কার হাতের লেখা হলে ব্যানারটা দেখতে সুন্দর হবে।
 - রঙ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে ব্যানার বা সাইনবোর্ড ভালো হবে না।
 
আয় ও লাভের হিসাব
নির্দেশ অনুযায়ী ব্যানার ও সাইনবোর্ড তৈরি করে তার বিনিময়ে ব্যানার তৈরির খরচ ও মজুরি নেয়া যাবে।
মোট খরচ
| 
 খরচের ক্ষেত্র  | 
 আনুমানিক খরচ (টাকা)  | 
| 
 ১টা ব্যানার লিখতে কাঁচামালের খরচ  | 
 ১২৫-১৪১ টাকা  | 
| 
 মজুরি  | 
 ৮০-৯০ টাকা  | 
| 
 স্থায়ী উপকরণের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ  | 
 ১০-১৫ টাকা  | 
| 
 একটি ব্যানার তৈরি করতে মোট খরচ ২১৫-২৪৬ টাকা  | 
|
আয় ও লাভের পরিমাণ
| 
 ১টি ব্যানারের মজুরিসহ মূল্য  | 
 ৩৪০-৩৫০ টাকা  | 
| 
 ১টা ব্যানার লিখতে মোট খরচ  | 
 ২১৫-২৪৬ টাকা  | 
| 
 একটি ব্যানার তৈরি করে মোট লাভ= ১২৫-১০৪ টাকা  | 
|
এছাড়া বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর আয় ও লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠানামা করে। তাই এ ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।
স্থায়ী উপকরণগুলো একবার কিনলে অনেকদিন ধরে কাজ করা যাবে। ব্যবসার শুরুতেই এ খরচটি করতে পারলে পরবর্তীতে শুধু কাঁচামাল কিনে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব।![]()
