সাক্ষাৎকার : বিপিওতে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
আগামী দিনের টেকসই শিল্পগুলোর মধ্যে ওপরের দিকে থাকবে বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং)। বিপিও সেক্টরে সারা বিশ্বের ৬০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ভারত ১০০ বিলিয়ন, ফিলিপাইন ১৬ বিলিয়ন ও শ্রীলঙ্কা দুই বিলিয়ন ডলার আয় করছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতে এক বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং বা ‘বাক্য’র সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।
খাতটিতে ভালো করার উপায় কী?
আমরা এখন কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যায় পড়ছি। পাঁচ বছর আগে আমাদের সঙ্গে যাঁরা কাজ শুরু করেছিলেন, তাঁরা কিন্তু প্রমিত বাংলায় কথা বলতে পারতেন। এখন বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যেই আঞ্চলিকতার টান লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকে তো টানা পাঁচ মিনিট শুদ্ধ বাংলায় কথাই বলতে পারছেন না। এর ফলে আমরা যাঁদের সাপোর্ট দিচ্ছি, তাঁরা নানা সমস্যায় পড়ছেন। বিপিওতে কাজ করার জন্য শুদ্ধভাবে কথা বলার অভ্যাস থাকাটা খুব জরুরি। ইংরেজিতে দক্ষ হলে খুবই ভালো। তবে ইংরেজিতে দক্ষ না হলেও অন্তত বাংলায় ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। পরিষ্কার করে স্পষ্টভাবে সহজে কোনো কিছু বোঝানোর দক্ষতা থাকলে একজন কর্মী খুবই ভালো করতে পারবেন বিপিও সেক্টরে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু প্রয়োজন?
বিপিওর অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে সব বিষয়ে শিক্ষার্থীরাই কাজ করতে পারেন। কল সেন্টারগুলোতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কে কোন বিষয়ে পড়েছেন, সেটা মুখ্য নয়। আগ্রহ থাকলে যেকোনো বিষয়ের যে কেউ ভালো করতে পারেন। তবে বিশেষায়িত কিছু কাজ এখনো হচ্ছে। এসব জায়গায় প্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী হলে ভালো। বিপিওর কাজের পরিসর বড় হওয়ায় বর্তমানে প্রায় সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদেরই কাজের সুযোগ আছে। এই সেক্টরে এক বছর কাজ করলেই আপনার যোগাযোগের দক্ষতা অনেক বেড়ে যাবে।
বিপিও খাতে প্রতিবন্ধীদের ব্যাপক সুযোগের কথা বলা হয়েছে।
২০১৫ সালে প্রথম বিপিও সামিটের পর আমরা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি। বিপিওর কাজের ক্ষেত্রে কাউকে চেনার সুযোগ নেই। এখানে কাজের দক্ষতা দেখাতে পারলেই হলো। কেউ যদি ডাটা এন্ট্রিতে ভালো করে, তার পা না থাকলেও সমস্যা নেই। এসিডদগ্ধ অনেক নারী আছেন, যাঁরা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করতে পারেন না। তাঁদের জন্য বিপিও কিন্তু সম্ভাবনার অন্যতম জায়গা।
সরকারের এসইপি প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছে বাক্য। এই প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা কী?
বিপিওতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্যও যে কেউ নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছেন। সম্প্রতি আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে এসইপি (স্কিল এমপ্লয়মেন্ট প্রজেক্ট) বাস্তবায়ন করছি। এখানে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাঁদের প্রায় ৭০ শতাংশের চাকরি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পে পাঁচ হাজার ৭০০ মানুষকে বিপিওর প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে।
খাতটিতে ভবিষ্যতে বড় পরিসরে কাজের জন্য বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত?
বড় পরিসরে কাজের জন্য আমাদের কাজের মান ধরে রাখাটা একটা বড় ফ্যাক্টর। এ জন্য এখন যাঁরা বিপিওতে কাজ করছেন, তাঁদের গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। না হলে নতুন কাজ সৃষ্টি হবে না। বিপিওতে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। এখানে কাজ শিখে যে কেউ নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন। আমার সঙ্গে একসময় কাজ করতেন এ রকম অনেকেই এখন নিজেই বিপিও চালাচ্ছেন।