টেকসই ব্যবসায় তিন চ্যালেঞ্জ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা মন্ত্রী লিলিয়ান প্লোমেন বলেছেন, ব্যবসা টেকসই করার মধ্য দিয়েই এগোতে হবে। এটিই একমাত্র পথ। তৈরি পোশাক ব্যবসাকে টেকসই করতে হলে পণ্যের ন্যায্য দাম, শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় অনুযায়ী মজুরি প্রদান, পণ্য ক্রয়সহ পুরো সরবরাহব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা—এই তিনটি হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।
রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল সোর্সিং ইন দ্য গার্মেন্ট সেক্টর’ (এসএসজিএস) বা পোশাকশিল্পের টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথা বলেন লিলিয়ান প্লোমেন। পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদকদের অনৈতিক মুনাফা করা এবং শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হলে উভয় পক্ষের মধ্যে টেকসই ও কার্যকর সংলাপের আহ্বান জানান তিনি।
বিজিএমইএ ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএফ) সঙ্গে যৌথভাবে দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করে নেদারল্যান্ডস সরকার। আয়োজন সহযোগী ছিল বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ ও ডাচ প্রতিষ্ঠান এনএএসএইচ বা ন্যাশ। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। সেমিনারে তিনটি অধিবেশনে বিভিন্ন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ (আইএলও) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
নেদারল্যান্ডসের মন্ত্রী বলেন, পোশাক কারখানা নিরাপদ করার জন্য নতুন পরিদর্শন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। রপ্তানিমুখী সব কারখানার পরিদর্শন শেষ হয়েছে। বিপজ্জনক কারখানাগুলো এখন বন্ধ। অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন করছেন উদ্যোক্তারা। এ জন্য ধন্যবাদ। তিনি বলেন, ‘সত্যিকারের নিরাপদ টেকসই পোশাক কারখানা গড়তে এখনো অনেক কাজ করা বাকি। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে।’
লিলিয়ান প্লোমেন বলেন, বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা অনেক অর্থ খরচ করে কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নতি করেছে। তবে খুচরা বিক্রি পর্যায়ে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে অধিকাংশ ব্র্যান্ড উৎপাদন খরচ কমাতে চাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রেতারা পোশাক ক্রয়ে ২০১২-র চেয়ে ২০১৫ সালে মাত্র ১ শতাংশ বাড়তি দাম দিচ্ছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে নেদারল্যান্ডসের মন্ত্রী পরামর্শ দেন, বিজ্ঞাপন খরচ হ্রাস এবং সাধারণ মানের বিক্রয়কেন্দ্র করে উৎপাদকদের সঙ্গে নিয়ে কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করুন। তিনি আরও বলেন, কম দাম দেওয়ার প্রবণতা দীর্ঘ মেয়াদে টিকবে না কিংবা টেকসই হবে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা সেটিই করে চলেছে।
ক্রেতাদের সব সময় পোশাকের দামের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন লিলিয়ান প্লোমেন। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য ক্রেতাদের উৎপাদন-প্রক্রিয়ায় কত পানি ব্যবহৃত হচ্ছে এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশে শ্রমিকেরা কত ঘণ্টা কাজ করেন, সেসবের বাস্তবিক হিসাব-নিকাশ করতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভালো কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করলে পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ে না, বরং কর্মপরিবেশ উন্নত হয়, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং উচ্চ মুনাফার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, পোশাকের দাম ও মানের দিকে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এখনো সর্বোচ্চ। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি পোশাক উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনে। একই কারণে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারিয়েছে তুরস্ক। তাদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের পোশাক কারখানা বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ। ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সদস্য কারখানাগুলো যথাক্রমে ৬৩ ও ৫৭ শতাংশ ত্রুটি সংস্কার সম্পন্ন করেছে। চলতি বছরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা টেকসই শিল্প করার জন্য কাজ করছি। তবে বিদেশি ক্রেতাদেরও পোশাক ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি দাম দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সেমিনার উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার বিষয়ে লিলিয়ান প্লোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের মতো গুলশানের ঘটনায় আমরাও শোকাহত। আমি মনে করি, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার যথাসাধ্য ব্যবস্থা নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। এটি নির্মূলে সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।