পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
দুই বেণি দুলিয়ে কিছু একটা যেন গাইছে আমেনা। এ অনুমান থেকে কয়েক পা এগোতেই কানে বাজল তার সুর। খুব সম্ভবত এ গানের গীতিকার-সুরকার আমেনা নিজেই। মন খুশি থাকলে মাথায় আসা গানের বাণীতে সুর দেয়া কোন ব্যাপারই নয়। আমেনা যেন তাই বুঝিয়ে দিলেন। সুরের সঙ্গেই চলছে সুই-সুতার নিপুণ সেলাই। সবুজ প্রযুক্তিতে গড়ে ওঠা ‘রেমি হোল্ডিংস লিমিটেড’ শ্রমিকরা আমেনার মতো এ রকম চনমনে চঞ্চল। সবুজ জ্বালানি ব্যবহার, জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশসম্মত উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা পোশাক কারখানার অন্যতম এটি। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়বে সমালোচকদের এমন ধারণাকে পেছনে ফেলে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক খাত। সম্প্রতি দেশের পোশাক খাতে রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ গড়ে উঠছে বিশ্বমানের সব কারখানা।
মান সনদে ইতোমধ্যে আমেরিকার ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি)’-এর সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘প্লাটিনাম’ পেয়েছে দেশের কয়েকটি কারখানা। এর মধ্যে সম্প্রতি সর্বোচ্চ মান পেয়ে যে কারখানাটি বিশ্বসেরা হয়েছে সেটি হলো ‘রেমি হোল্ডিংস লিমিটেড। রাজধানী থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরের আদমজী রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে আড়াই লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে বিশ্বের এক নম্বর তৈরি পোশাক কারখানা ‘রেমি হোল্ডিংস লিমিটেড’। যক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব কারখানা বা ভবনের সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। এ সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে শুরু“করে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়।
লিড সনদ পেতে নয়টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। উল্লেখযোগ্য শর্ত হচ্ছে- এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয় যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ জন্য পুনঃউৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুত খরচ কমাতে সূর্যের আলো ও সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পানিসাশ্রয়ী কল লাগে। ইউএসজিবিসির তথ্য অনুযায়ী, লিড সনদের জন্য নয়টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ’৬০-৭৯ পয়েন্টে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ পয়েন্টে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ পয়েন্ট হলে ‘লিড সার্টিফিকেট’ সনদ মেলে। রেমি হোল্ডিংস অর্জন করেছে ৯৭ পয়েন্ট। বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান বিটপি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রেমি হোল্ডিংস লিমিটেডকে তৈরি করা হয়েছে সবুজ পরিবেষ্টিত বিশ্বের আধুনিক সব যন্ত্রপাতি দিয়ে।
কারখানার চারপাশে প্রচুর খালি জায়গা। লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবুজ গাছপালা। কারখানায় শ্রমিকদের স্বস্তির জন্য রাখা হয়েছে নিয়ন্ত্রিত নির্দিষ্ট তাপমাত্রা। মনোরম পাঁচ তলা ভবনে এক হাজার ৫০০ শ্রমিক ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করছে। তারাই প্রতিদিন তৈরি করছে ১৫ হাজার পিস পোশাক। রেমি হোল্ডিংস নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেড এবং বেপজার সদস্য। ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি এই কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এক হাজার ৫০০ কর্মী কাজ করছে এই কারখানায়। তবে ভবিষ্যতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী কাজ করতে পারবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। স্বল্প কার্বন নিঃসরণে রেমি হোল্ডিংস মাইলফলক স্থাপন করেছে। কারখানায় ব্যবহার করা হয়েছে সৌরবিদ্যুত, হাই ভেলোসিটি লো স্পিড ফ্যান, সরাসরি দিনের আলোর ব্যবহারসহ নানা প্রযুক্তি।
ইনসিনারেশন বয়লার ব্যবহার করে স্টিম তৈরি করার প্রযুক্তি বাংলাদেশে এটাই প্রথম। থারমাল অয়েল হিটার প্রযুক্তি ব্যবহারে রক্ষা পাচ্ছে প্রচুর জ্বালানি। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সেই পানি ব্যবহার করবে রেমি হোল্ডিংস, এতে পানির অপচয় কমবে। সব মিলিয়ে ৩৭ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করছে রেমি হোল্ডিংস লিমিটেড। সামনে পানি রিসাইক্লিং করার প্রযুক্তিও যুক্ত করা হবে এই কারখানায়। শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টারও আছে এখানে। কারখানার ছাদে, সামনের খোলা অংশে এবং ভবনের ভেতরেও করা হয়েছে বাগান। পর্যাপ্ত অক্সিজেন কর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে।