পচনশীল পণ্য : সংরক্ষণ প্রযুক্তির ব্যবহার
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, মৌসুমী তরিতরকারি এবং মাছ উপযুক্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের সুযোগ-সুবিধার অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। অর্থনৈতিক দিক থেকে বিচার করতে গেলে এটি একটি জাতীয় অপচয়। সংরক্ষণের উপায় জানা থাকলে এই অপচয়টা দেশের উৎপাদক চাষীরা নিজেরাই রোধ করতে সক্ষম হতো। কৃষিজ-পণ্য উৎপাদন যতটা সহজ, উৎপাদিত এসব পচনশীল পণ্যের সংরক্ষণ মোটেই সহজ নয়। মাঠ-পর্যায়ের উৎপাদক-চাষীরা শ্রম-অর্থ-মেধা প্রয়োগ করে ফসল ফলায়। কিন্তু সেই ফসল থেকে তারা যথেষ্ট লাভ হাসিল করতে পারে না সংরক্ষণের উপযুক্ত প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তি তাদের আয়ত্তে না থাকায়। ফলে, উৎপাদিত বেশকিছু পচনশীল কৃষিজপণ্য প্রতিবছর নষ্ট হয়ে যায়। এতে দরিদ্র চাষীদের আর্থিক ক্ষতি। অথচ ওইসব ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সংরক্ষণের সুযোগ করে দিতে পারলে তারা ধীরে-সুস্থে উপযুক্ত বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা আরও বেশি উপভোগ করতে পারত।
তবে এখন আমরা বিজ্ঞানমনস্ক একটি জেনারেশন তৈরি করতে পেরেছি। এর ফলে কিছু কিছু আবিষ্কারের সুফল আমরা ভোগ করতে পারছি। দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে বিদেশী প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পেরেছি। দেশের কৃষিজ পণ্যের মধ্যে যে সমস্ত ফসল দ্রুত পচনশীল এখন থেকে তার অনেকগুলোকেই সংরক্ষণের মাধ্যমে আমাদের দেশের কষ্টসহিষ্ণু উৎপাদক জনগোষ্ঠী তাদের দারিদ্র্যজয়ের সংগ্রামের হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। অর্থাৎ শ্রমের ফসলের অপচয় বন্ধ হবে। সংরক্ষণের দেশীয় কিছু সহজ প্রযুক্তি তারা ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে সুবিধামতো সময়ে পণ্য বাজারজাত করার কথাও ভাবতে পারবে। জলের দামে বিক্রি করে দিতে হবে না। দর-কষাকষি করে ফড়িয়া-দালালদের কাছে পণ্য বিক্রি করে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করতে পারবে।
শাক-সবজি, ফলমূল ও মৎস্যাদি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড এবং গ্রামীণ শিল্প বিভাগ এক বিশেষ ধরনের ‘ড্রায়ার’ আবিষ্কার করেছে। পণ্য শুকানোর বিশেষ যন্ত্রের এই উদ্ভাবন আমাদের কৃষিজ পণ্য উৎপাদক চাষী-জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলে দিতে পারবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড এবং গ্রামীণ শিল্প বিভাগের সবজি ও মাছ শুকানোর যে বিশেষ যন্ত্রটি আবিষ্কার করছে এটি প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে ব্যবহারকারী চাষীদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। আমরা আশা করি, এই যন্ত্রের ব্যাপক প্রচারে সরকার উদ্যোগী ভূমিকা নেবেন।