আইটি ও অবকাঠামো খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ছে
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। এ কাজে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো চলতি বছরে ২৮৫টি নতুন শাখা খোলার অনুমোদন নিয়ে এক-তৃতীয়াংশ শাখা চালু করেছে। অবকাঠামো উন্নয়নে এক বছরে ব্যাংকগুলোর এটাই হবে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরে ব্যাংকগুলো ২৮৫টি নতুন শাখা খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েছে। আইটি খরচ বাদে শহরে একটি নতুন শাখা খুলতে ৭৫ লাখ এবং গ্রামে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারে। এছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর সেবা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর প্রতি শাখায় আরও পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় হয়। তবে গ্রামের শাখাগুলোতে আইটি খাতের খরচ কম হয়। সূত্র আরও জানায়, নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাংকের নীতিমালায় শহরাঞ্চলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার বর্গফুট এবং পল্লী অঞ্চলে সর্বোচ্চ দুই হাজার বর্গফুটের ভবন ব্যবহার করা যাবে। আইটি সরঞ্জামাদি ব্যতীত ভল্ট স্থাপন, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন, অফিসের আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বাবদ প্রতি বর্গফুটের জন্য সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা খরচের অনুমতি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী শহরে একটি শাখা খুললে অপর শাখাটি গ্রামে খুলতে হবে। তবে ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিকভাবে শহরের তুলনায় গ্রামেই বেশি শাখা হয়। এ হিসাবে ২৮৫টি শাখার মধ্যে ১৪৩টি গ্রামাঞ্চলে করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনসীমা অনুসারে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। গ্রামীণ শাখায় সর্বোচ্চ দুই হাজার বর্গফুটের ভবন ভাড়া করে প্রতি ফুটে দেড় হাজার টাকা খরচ করার অনুমতি রয়েছে। সে হিসাব অনুযায়ী গ্রামে একটি নতুন শাখা খুলতে সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ৩০ লাখ টাকা। শাখাটি অনলাইন সেবার আওতায় আনতে হলে আরও পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এতে একটি শাখা করতে সর্বোচ্চ ব্যয় দাঁড়াবে ৩৫ লাখ টাকা। আর শহরে একটি শাখা করতে হলে প্রতি শাখায় সর্বোচ্চ ব্যয় হবে ৭৫ লাখ টাকা। সঙ্গে আইটি খরচ পাঁচ লাখ টাকা ধরলে ব্যয় দাঁড়াবে শাখাপ্রতি ৮০ লাখ টাকা। এ হিসাবে চলতি বছরে বাকি ১৪২টি শাখা শহরে করা হলে তাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় দাঁড়াবে ১১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি গ্রামীণ নতুন শাখা স্থাপনে দুই হাজার বর্গফুট জায়গার ভবনের প্রয়োজন হয়।
গ্রামীণ শহরে প্রতি বর্গফুটের ভাড়া পাঁচ থেকে সাত টাকার মধ্যে। এতে ব্যাংকের প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ খরচ হবে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা। ব্যাংকিং উপযোগী কাঠামো ও ভল্ট স্থাপনে খরচ হয় পাঁচ লাখ টাকা। আসবাবপত্র ও সাজসজ্জায় খরচ পাঁচ লাখ টাকা। অন্যান্য খরচ আরও দুই লাখ টাকা। অনলাইন সেবার উপযোগী করে গড়ে তুলতে আরও পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন পড়ে। রয়েছে আরও অনেক খরচ। সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। কয়েকটি ব্যাংকের শাখা খোলা সংক্রান্ত কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শাখা খোলার ব্যয়ের ৯টি নির্ধারিত খাত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভবন ভাড়া, আসবাবপত্রাদি, ডেকোরেশন, সাইনবোর্ড, ইলেক্ট্রিক ওয়্যারিং, ম্যানেজার রুম ও ক্যাশ কাউন্টার, চাপডোর (ভল্টের আগের দরজা), ভল্ট স্থাপন, মিলাদ-আপ্যায়ন, আনুষঙ্গিক খরচ এবং অন্যান্য খাত। এছাড়া নিয়মিত খরচের মধ্যে রয়েছে আমানতের ওপর সুদ, ভবন ভাড়া, কর ও খাজনা, প্রশাসনিক খরচ-বেতন ও বোনাস, জ্বালানি, টেলিফোন ও ফ্যাক্স বিল, সম্পত্তির অপচয়, স্টেশনারি ও অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ব্যাংকের শাখা ছিল ৯ হাজার ৪০টি। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৩৯৭টি। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের শাখা বেড়েছে ৩৫৭টি। চলতি বছরে ২৮৫টি শাখা খোলার অনুমোদন নিয়েছে ব্যাংকগুলো। ইতোমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ শাখা স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকগুলো। বছর শেষে সবগুলো খোলা হলে ব্যাংকের শাখা দাঁড়াবে ৯ হাজার ৬৮২টি আর ২০১৪ সালে গ্রামীণ শাখা ছিল পাঁচ হাজার ১৫০টি। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৩৪টিতে। শহুরে শাখা তিন হাজার ৮৯০টি থেকে বেড়ে হয়েছে চার হাজার ৬৩টি।
ব্যাংকিং খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ২০৯টি শাখা রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ৩০টি শাখা কৃষি ব্যাংকের। শাখার দিক থেকে তৃতীয় অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অগ্রণীর ৯২০টি। ৯০৪টি শাখা নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে জনতা ব্যাংক। শাখা বিবেচনায় পঞ্চম শীর্ষ ব্যাংক রূপালী। ব্যাংকটির মোট শাখা ৫৫৩টি। বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাখা পূবালী ব্যাংকের ৪৩৯টি। তবে ব্যাংকিং খাতে ষষ্ঠ স্থানে পূবালী। ৩৭৬টি শাখা নিয়ে শীর্ষ সপ্তম স্থানে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। ৩০৪টি শাখা নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। খাতওয়ারি হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট শাখা বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৬৯০টি, গত বছরে যা ছিল তিন হাজার ৬৪৯টি। এক বছরে শাখা বেড়েছে ৪১টি। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে শাখা এক হাজার ৪০৪টি থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪০৬টি। ২০১৫ সাল শেষে বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শাখা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২২৬টি। এর মধ্যে শহুরে শাখা দুই হাজার ৫১২টি এবং গ্রামীণ শাখা এক হাজার ৭১৪টি।
গত ২০১৪ সালে মোট শাখা ছিল তিন হাজার ৯১৭টি। এর মধ্যে শহুরে দুই হাজার ৩৬০টি এবং গ্রামীণ এক হাজার ৫৫৭টি। সার্বিকভাবে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর এক বছরের ব্যবধানে শাখা বেড়েছে ৩০৯টি। অন্যদিকে বিদেশী নয় ব্যাংকের এক বছরে শাখা বেড়েছে পাঁচটি। আগের বছরের ৭০টি থেকে বেড়ে গত বছরে হয়েছে ৭৫টি। এ খাতের ব্যাংকগুলোর গ্রামে কোন শাখা নেই।