এলএনজি খাতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ
- উদ্যেক্তা ডেস্ক
দেশের নতুন জ্বালানি এলএনজিতে (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) বিনিয়োগের জন্য সরকারের পর বেসরকারি খাতও এগিয়ে এসেছে। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে অন্তত ১৪টি দেশি-বিদেশি বেসরকারি কোম্পানি। এর আগে কয়েক বছর ধরে সরকার এলএনজিতে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পায়নি।
সরকারি উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মত ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে নির্মিতব্য এ টার্মিনাল থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ গ্যাস পাওয়া যাবে। এটি ছাড়াও আরও একটি ভাসমান ও দুইটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এবার বেসরকারি খাতও এই অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল জ্বালানিতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসায় এলএনজির বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র জানায়, সম্প্রতি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে প্রস্তাব দিয়েছে দেশের জ্বালানি খাতে অন্যতম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার। মহেশখালীতে একটি টার্মিনাল নির্মাণে প্রায় ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কোম্পানি। সামিট পাওয়ার নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মহেশখালীতে তিনটি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। অনুমোদন পেলে দুই বছরের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল ও তিন বছরের মধ্যে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে তারা।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য সরকারের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে চলতি বছরের এপ্রিলে একটি প্রস্তাব দেয় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পেট্রোনেট। ৫ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে এ টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় তারা। প্রস্তাবিত টার্মিনালটির ধারণক্ষমতা হবে বার্ষিক ৫০ লাখ টন। চলতি অক্টোবরেই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ভারত সফরকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এলএনজি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে চারটি চীনা কোম্পানি। এগুলো হলো- হুয়ানকিং কন্ট্রাক্টিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, অফশোর অয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং গুয়াডং। আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপানের মিতসুই অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, বেলজিয়ামের এক্সামার, সিঙ্গাপুরের সিমক্রপ ইউটিলিটিস প্রাইভেট লিমিটেড ও গেনকোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, দক্ষিণ কোরিয়ার কেওজিএএস এবং থাইল্যান্ডের সিয়াম গ্যাস অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়া মালয়েশিয়ার দুইটি কোম্পানিও প্রস্তাব দিয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দেশে গ্যাস সংকট বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০১০ সালে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। এর প্রায় ছয় বছর পর দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িতব্য (ফাস্ট্ ট্র্যাক) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গত ১৮ জুলাই পেট্রোবাংলা ও ঠিকাদারি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেডের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মহেশখালীতে টার্মিনালটি নির্মাণ এবং ১৫ বছর মেয়াদে পরিচালনা করবে এক্সিলারেট এনার্জি। এ জন্য এক্সিলারেট এনার্জি যে বিনিয়োগ করবে তা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো আমেরিকান কোম্পানির সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে বেশ কয়েকটি কোম্পানির প্রস্তাব পেয়েছি। এটি আশাব্যঞ্জক। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ হিসাবে ঘাটতি রয়েছে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। মহেশখালীতে প্রস্তাবিত ভাসমান টার্মিনাল থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি আরো দুইটি টার্মিনাল থেকে বাড়তি ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। আর্থিক ও কারিগরী দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাব জমা দেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দুই থেকে চারটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হতে পারে।