‘অর্থ নয়, উদ্যোগই বড় মূলধন’

‘অর্থ নয়, উদ্যোগই বড় মূলধন’

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা কাজী সাজেদুর রহমান। এখন তার নতুন পরিচয় ‘বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা’। এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে তিনি পেয়েছেন ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০১৬।’ কাজী সাজেদুর রহমানের প্রতিষ্ঠান কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ। পরিবেশবান্ধব পেপার কাপ ও প্লেট উৎপাদন করে তার কোম্পানি। এক সাক্ষাৎকারে নিজের সফলতার গল্প ও বাংলাদেশি ক্যাটারিং শিল্পকে নিয়ে বলেছেন নানা কথা। 


: ‘বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা’ পুরস্কার অর্জন করায় আপনার অনুভূতি কি?

সাজেদুর রহমান : আমি খুশি। ২০১২ সালে যখন ব্যবসা শুরু করি তখন ভাবতেও পারিনি যে, আমি জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পাবো। এ পুরস্কার আমাকে উৎসাহিত করছে। পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন ও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করতে আরো উৎসাহিত হবো। আমি যা করবো, তা যেন দেশের জন্য হয়- এ প্রতিজ্ঞায় এগুবো।

: আপনার সফলতার গল্পটা আমাদের একটু জানান।

indexসাজেদুর রহমান : ২০১০ সালে আমার মাকে নিয়ে হজে যাই। সারাদিন রোজা রাখার পর মদিনা শরীফে মাগরিবের নামাজ পড়ি। এক এরাবিয়ান আমাকে পেপার কাপে খেজুর ও কফি দেন। ঐ পেপার কাপ থেকেই আমার আইডিয়া আসে যে, আমি বাণিজ্যিকভাবে পেপার কাপ ও প্লেট তৈরি করবো। এরপরে দেশে ফিরে এ সেক্টরের ওপর জরিপ করলাম। দেখলাম, মার্কেটে পেপার কাপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এরপরে ২০১২ সালে বেসরকারি একটি ব্যাংকের সহযোগিতায় উৎপাদন শুরু করি। তিনটি মেশিন দিয়ে পেপার কাপ ও প্লেট তৈরি করি; যা এখন ৭ টিতে দাঁড়িয়েছে।

: পেপার কাপ উৎপাদন শুরু করার পরে গ্রাহকদের কেমন সাড়া পেলেন?

সাজেদুর রহমান : এর ওপর আমি নিজে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এর ফলে আমাদের পণ্যের গুণগত মানে কোন দূর্বলতা ছিল না। তাই পেপসি, নেসলে, ডানো, প্রাণ ও ওয়েস্টিনসহ শীর্ষস্থানীয় বহুমুখী কোম্পানির পেপার কাপ সরবারহকারী নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয় কেপিসি ইন্ডাস্ট্রি।

: আপনার কোম্পানির গ্রাহকদের তালিকায় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো কীভাবে আসলো?

সাজেদুর রহমান : বিশ্বের সকল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিই অনেক কিছু বিবেচনা করে বিজনেস পার্টনার নির্ধারণ করে। আমাদের এখানে কর্মপরিবেশ ও পণ্যের গুনগত মানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির প্রতিনিধিরা অভিভূত হন। তাদের আস্থা ধরে রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমার টিমের সদস্যরা। কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখার জন্য কারখানায় নিযুক্ত আছে সুশিক্ষিত ও সুপ্রশিক্ষিত কর্মচারী ও শ্রমিক। আছে নিজস্ব ল্যাবরেটরি। এসব কারণে গুণগত মান সবসময় নিশ্চিত হচ্ছে।

: আপনার এই ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে?

সাজেদুর রহমান : আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জমির সংকট। সরকারের পক্ষ থেকে যদি আমরা কোন প্লট পাই, তাহলে কর্ম পরিবেশ আরো উন্নত করতে পারবো। উচ্চ হারে ব্যাংক ঋণের সুদ ও  ওয়ানস্টপ সার্ভিসের সমস্যা তো আছেই।

: পেপার কাপ ও প্লেট তৈরির কাচাঁমাল কোথা থেকে আসে?

সাজেদুর রহমান : কাচাঁমালের শতভাগই আমদানি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কোন বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ ধরনের এই কাগজের সিংগভাগই আমদানি হয় কানাডা থেকে। তবে রিসাইক্লিং করা যায় না।

interview21459908536: বাংলাদেশে এ খাতের সম্ভাবনা কতটুকু?

সাজেদুর রহমান : অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি তৈরি পোশাক শিল্প খাতের চেয়েও পেপার কাপ খাতের সম্ভাবনা বেশি। বিশ্ববাজারে পেপার কাপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারণ, এ পন্যটি পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত । তবে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার আইনও বাস্তবায়ন করতে হবে।

: তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কি?

সাজেদুর রহমান : সবার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমি কি করবো। যদি উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। টাকার চেয়েও বড় মূলধন কিন্তু উদ্যোগ। তাই তরুণদেরকে ভালো  উদ্যোগ নিতে হবে।

: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সাজেদুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সূত্র:  রাইজিংবিডিfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment