সাফল্যের সঙ্গী সাবরিনা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
নতুন নতুন অভিজ্ঞতা, চাকুরী থেকে অব্যাহতি, নিজের পেশা নিয়ে সংশয়, নতুন উদ্যমে নতুন কোন কাজ শুরু করা, সফল হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়; একজন উদ্যোক্তার এসবগুলো অভিজ্ঞতাই অর্জিত হয়ে যায়। ঠিক তেমনি এত সব বাঁধা পেরিয়ে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন সাবরিনা ইসলাম। তিনি ডেকোরেটিভ এবং আর্কিটেকচারাল আর্ট গ্লাস তৈরি করার প্রতিষ্ঠান ‘রিফ্লেকশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা ‘রিফ্লেকশন’ই সাবরিনার জীবনের চিত্র পাল্টে দেয়।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৮ সালে দ্যা ডেইলি স্টার এবং ডিএইচএল এক্সপ্রেস আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস এওয়ার্ড’এ আউটস্ট্যান্ডিং উইমেন ইন বিজনেস পদক পেয়েছেন তিনি।
মাত্র ২৪ বছর বয়সেই নতুন কিছু করার চিন্তা থেকে কাজ শুরু করেন সাবরিনা। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত অন্যতম প্রাচীন কারুশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘কারিকা’তে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আইনে পড়ার সময়ই ১৯৯৮ সালে তিনি ছোট্ট পরিসরে তার প্রতিষ্ঠান ‘রিফ্লেকশন’এর যাত্রা শুরু করেন। সেসময়ে ইস্কাটনের ৪০০ স্কয়ার ফিট দোকানে মাত্র দুজন কর্মী কাজ করত।
প্রথম প্রথম স্যান্ডব্লাস্টেড গ্লাসই তৈরি করত ‘রিফ্লেক্সশন’। একবার তিনি গুলশানে একজনের বাসা ইন্টেরিয়র ডিজাইনের দায়িত্ব পালন করেছেন।কাজ শেষে তিনি যথেষ্ট প্রশংসাও পেয়েছিলেন। এরপর তিনি ধীরে ধীরে রেস্টুরেন্ট এবং কর্পোরেট হাউজগুলোর ইন্টেরিয়র ডিজাইন পেতে শুরু করেন। নিজের ব্যবসার প্রসারের সাথে সাথে দোকানের আকারও বাড়াতে থাকেন সাবরিনা। ২০০০ সালে ছোট পরিসর থেকে বের হয়ে ২,২০০ স্কয়ার ফিটের একটি স্টুডিওতে কাজ শুরু করেন তিনি। তাদের সাথে বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও কাজ করা শুরু করতে থাকে। স্টেইন্ড গ্লাস ওভারলে নামে বিশ্বখ্যাত এক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেন সাবরিনা।ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক ডেকোরেটিভ এবং আর্কিটেকচারাল গ্লাস তৈরিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান হতে থাকে ‘রিফ্লেকশন’। এখন এই স্টুডিওতে পুরোদমে কাজ করছে ২৪ জন কর্মী।ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা এই প্রতিষ্ঠানে এখন বার্ষিক লাভ হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে এমবিএ সম্পন্ন করা সাবরিনা মহিলা উদ্যোক্তা এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।মহিলাদের উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।মহিলাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে উৎসাহিত করার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।সাবরিনা জানান, বাংলাদেশে মহিলা উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়াতে সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের মহিলাদের বিভিন্ন কাজ শেখার ট্রেনিং সেন্টারও অনেক কম বলে মনে করেন তিনি। মহিলাদের সঠিক ট্রেনিং, পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্থিক ঋণ সুবিধা এবং অন্যান্য সেবার ব্যবস্থা করা হলে বাংলাদেশেও মহিলা উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
তবে শুধু সরকারি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতাই নয়, পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্যকেও অনেক বড় কিছু বলেই মূল্যায়ন করেছেন তিনি।সাবরিনার মতে, পরিবার থেকে সাহায্য পেলে মহিলাদের সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশী বেড়ে যায়।