নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে সুপারির চাষ বাড়ছে
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
নড়াইলে দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে সুপারির চাষ বাড়ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ অঞ্চলের সুপারি এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে সুপারির হাট। আর এসব হাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার প্রায় দুই হাজার সুপারি ব্যাবসায়ী।
জানা যায়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সুপারির দাম বেশি। এতে বেশ লাভবান হচ্ছেন জেলার সুপারিচাষীরা। জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, নড়াইলে আগে থেকেই সুপারি উত্পাদন হলেও তা বাণিজ্যিকভাবে হতো না। তখন সাধারণত বসতভিটার চারপাশে, পতিত জমিতে, ঘের ও পুকুরপাড়ে, রাস্তার পাশে সুপারি গাছ ছিল। কিন্তু সুপারির ফলন ভালো হওয়া ও বাজারে দাম ভালো থাকায় জেলার চাষীরা দিন দিন এর চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১০ বছর আগে এ অঞ্চলের চাষীরা বাণিজ্যিকভাবে সুপারির চাষ শুরু করেন, যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, জেলায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় সুপারি বাগান অনেক থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ৬৫০ হেক্টর জমিতে। জেলার তিন উপজেলাতেই চাষ হলেও সদর ও লোহাগড়ায় উত্পাদন বেশি হয়।
সাধারণত জুলাই-আগস্ট থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত সুপারির চারা লাগানো হয়। চারা লাগানোর সাত-আট বছর পর গাছে ফল আসা শুরু করে। বর্ষাকালে গাছে ফুল আসে। এর পর আশ্বিন-কার্তিকের দিকে পরিপক্ব সুপারি গাছ থেকে পাড়া হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে সুপারি হয় ২ দশমিক ৬৮ টন। সুপারি গাছে তেমন কোনো রোগ হয় না। আর একটি গাছ থেকে ৩৫-৪০ বছর টানা ফল পাওয়া যায়।
জেলায় সুপারির সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট সদরের রূপগঞ্জ হাট ও লোহাগড়ার এ্যাড়েন্দা বাজার। রূপগঞ্জ বাজারে প্রতিদিনই সুপারি বেচাকেনা হলেও রবি ও বৃহস্পতিবারে বড় পাইকারি হাট বসে। এ্যাড়েন্দা বাজারে হাট বসে শনি ও মঙ্গলবারে। এসব হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি কিনে নিয়ে যান।
এ্যাড়েন্দা বাজারের ব্যবসায়ী জয়নুল আবেদিন জানান, স্থানীয়ভাবে ২০০টি সুপারিতে এক কুড়ি হয়। বর্তমান প্রতি কুড়ি সুপারি ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সুপারি ব্যবসায়ী মো. নওশার জানান, তিনি ১৪ বছর ধরে নড়াইল থেকে সুপারি কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে আসছেন। তিনি প্রতি মৌসুমে নড়াইলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫-২০ ট্রাক সুপারি ক্রয় করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, চাষীদের কাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে সেগুলো বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে রোদে শুকিয়ে খোসা ছাড়ানো প্রতি কেজি শুকনা সুপারি ৪০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এছাড়া পাকা সুপারি তিন-চার মাস পানিতে ভিজিয়ে বিক্রি করা হয়। পানিতে ভেজানো সুপারিকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় মজা সুপারি। এ সুপারির চাহিদা বেশি, তাই এর দামও ভালো পাওয়া যায়।
চাষীরা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে খরচ অনেক কম। চারা লাগানোর প্রথম দু-তিন বছর একটু কষ্ট করতে হয়। তবে একবার ফল এলে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রায় ৪০ বছর ফল পাওয়া যায়। ফল আসার পরে আর তেমন কোনো খরচ হয় না। লোহাগড়া উপজেলার এ্যাড়েন্দা গ্রামের সুপারিচাষী নয়ন শেখ জানান, সাত বছর আগে তিনি এক একর ২২ শতক জমিতে সুপারি বাগান করেন। এ বছর তার বাগানে ১৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। যার থেকে লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ আমিনুল হক জানান, এ জেলার মাটি সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তাছাড়া সুপারি বেশ লাভজনক হওয়ায় জেলার চাষীরা তাদের পতিত জমিতে সুপারির বাগান করছেন। এ বিষয়ে কৃষককে তারা সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।