ওয়াফিদের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
গমের ডাঁটি, চালের কুঁড়া, ঘাস হোক আর সুতার কারখানার বর্জ্য হোক—কোনো কিছুই আর ফেলনা নয়। এসব কৃষিবর্জ্য কিংবা কারখানার বর্জ্যই পাল্টে দিয়েছে ওয়াফি ইসলামের জীবন। যত সহজে বলা হচ্ছে শুরুটা এত সহজ ছিল না ঢাকার মধ্যবাড্ডার বাসিন্দা ওয়াফি ইসলামের।
নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মায়ের নকশি কাঁথার কাজ দেখেই নতুন কিছু করার আগ্রহ জেগেছিল ওয়াফির। সংসারে খুব বেশি টানাটানি ছিল না। তবু নিজের ওপর দাঁড়ানোর ইচ্ছা জাগে স্কুলজীবনেই। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০০৩ সালে কেনা কাগজ দিয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করে দোকানে সরবরাহ করেন। যা লাভ হতো তা আবার বিনিয়োগ করতে থাকেন ব্যবসায়। এভাবেই শুরু।
বিয়ের পর স্বামীর সহায়তায় নতুন উদ্যমে শুরু করেন এ উদ্যোক্তা। পড়াশোনাও চালিয়ে নিয়েছেন। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে পুরোপুরি জড়িয়ে যান ব্যবসায়। গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে হলেও ব্যবসার সুবিধা ভেবে ময়মনসিংহে কারখানা দেন ২০১১ সালে। এখন বগুড়া, রংপুর থেকে কৃষিবর্জ্য এবং সুতার কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য সংগ্রহ করেন। কারখানার এসব বর্জ্য দিয়ে হয় হাতে তৈরি কাগজ। এরপর নিজেই ডিজাইন করেন। হাতে তৈরি কাগজ দিয়ে ফটোফ্রেম, অ্যালবাম, নোটবুক, টিস্যু বক্স, জুয়েলারি বক্সসহ ১৪০টি পণ্য তৈরি হচ্ছে তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘বিমূর্ত’ থেকে। কাগজের তৈরি শিল্পকর্মের পাশাপাশি বুটিক পণ্যও তৈরি করছেন এ উদ্যোক্তা। দ্বিতীয় পক্ষের মাধ্যমে রপ্তানিও হচ্ছে ওয়াফি ইসলামের কারখানার পণ্য। কারখানায় কাজ করছেন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ৭৫ জন নারী-পুরুষ। যাঁদের অনেকেই একসময় ছিলেন যৌনকর্মী কিংবা ভিক্ষুক।
ওয়াফি ইসলামের মতো উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে এবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আন্তর্জাতিক এসএমই মেলা। গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া মেলা শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার। মেলায় ৫৮টি স্টলে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে ৫৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১৫টি স্টলে পাট ও চামড়াজাত পণ্য, বুটিক পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খাদ্যপণ্য, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটনসহ নানা খাতের প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনিয়ে ওয়াফি ইসলাম বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ইচ্ছাশক্তিই হলো মূল। পদে পদে বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু দমে যাইনি। শেষ পর্যন্ত ইচ্ছাশক্তিই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে নিয়ে গেছে।’
গতকাল শেষ দিনে মেলায় এসেছিলেন একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক সীমা দাশ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মেলায় হাতে তৈরি কাগজের এত পণ্য আগে কখনো দেখেননি। প্রতিটি পণ্যেই আছে শিল্পের ছোঁয়া। মেলায় অনেক প্রতিষ্ঠান এলেও হাতে তৈরি কাগজ, পাট ও চামড়াজাত পণ্যের বৈচিত্র্য দেখে ভালো লেগেছে। দামও তুলনামূলক সস্তা মনে হয়েছে।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক এসএমই মেলা হলেও এতে বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। আবার চট্টগ্রাম শহরে এখন পাঁচটি মেলা চলার সময় এই মেলা শুরু হয়েছিল। এটি হচ্ছে ষষ্ঠ মেলা।
মেলায় রাজশাহী থেকে পাটপণ্য ও বুটিক পণ্য নিয়ে এসেছে শিশুবিতান সেলাই ঘর। পাট দিয়ে পাপোশ, মাদুর, হাতব্যাগ, স্কুলব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য শোভা পায় স্টলটিতে। স্টলে থাকা আশরাফুল ওমর বলেন, স্টলটিতে তাঁর প্রতিষ্ঠান পাট বাজারের পণ্য ও তাঁর মায়ের প্রতিষ্ঠান শিশুবিতানের পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। মায়ের পথ ধরে উদ্যোক্তা হওয়া ওমর বলেন, একসঙ্গে ছয়টি মেলা না হলে এটি আরও জমত।
মেলার আহ্বায়ক চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, প্রথমবারের মতো বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের এই মেলায় দর্শনার্থীদের সাড়া পাওয়া গেছে ভালো। ভবিষ্যতে বিভিন্ন খাতভিত্তিক মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা আছে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে। মাঠে নয়, প্রকৃত উদ্যোক্তাদের মেলা হবে এই বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে। এই মেলায় বেচাকেনার চেয়ে উদ্যোক্তাদের পণ্যের পরিচিতি বাড়ানোই ছিল মূল লক্ষ্য।