পাট থেকে আয় শুধু আঁশে নয়, পাতায়ও
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
মানুষের দৈনন্দিন আড্ডায় চা বহুল প্রচলিত পানীয়। বহুকাল ধরেই চায়ের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ। এবার চায়ের ক্ষেত্রে যুক্ত হলো নতুন অধ্যায়। পাট পাতা থেকে অর্গানিক চা উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। এতে পাট পাতার চা-ও পান করতে পারবে মানুষ। এ চা মানুষের শরীরের জন্যও অনেক বেশি উপকারী। অতি শিগগির বাংলাদেশের বাজারে পাট পাতার চা ছাড়া হবে। পাশাপাশি বিদেশেও ব্যাপক আকারে রপ্তানি করা হবে। ইতোমধ্যে জার্মানিতে পাট পাতার চা রপ্তানি শুরু হয়ে গেছে।
একসময় বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পাট। পাটের আঁশ ও তা থেকে উত্পাদিত বিভিন্ন সূতা ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণে আয় হতো বৈদেশিক মুদ্রা। তখন দেশের রপ্তানির সিংহভাগই আসতো পাট ও পাটপণ্য থেকে। এখন রপ্তানি আয়ে পাট ও পাটপণ্যের অংশ কমে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিংহভাগ রপ্তানি আয় হয় তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে পাট পাতার চা দিয়ে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন পাটখাত সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে জার্মানিতে পাট পাতার চা রপ্তানি করা হয়েছে। জাপানও এ চা আমদানির ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাসিমুল গনি বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে পাট পাতার গুণাগুণ এবং সেটা চা হিসেবে পান করার সময় যথাযথ থাকে কি না, এসব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। এখন প্রতীয়মান হয়েছে যে, নির্দিষ্ট উপায়ে সংগ্রহ করা হলে পাট পাতার চা মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী হবে। এজন্য ফুল আসার আগেই পাটগাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করতে হবে। পরে সে পাতা সূর্যের আলোতে শুকিয়ে আকার অনুযায়ী গুঁড়া করে নিতে হবে। এরপর মধু বা চিনি দিয়ে এ চা পান করা যাবে। মধু বা চিনি ছাড়াও পান করা যাবে। পাটশাকের সব ভেষজ গুণাগুণ পাট পাতা থেকে তৈরি হওয়া চায়ে বিদ্যমান থাকবে।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা বলছেন, তোষা পাটের পাতা থেকে তৈরি করা চা সুস্বাদু হবে। কিন্তু দুধ মিশিয়ে এ চা খাওয়া যাবে না। এটি গ্রিন টির বিকল্প হবে এবং গুণাগুণের কারণে এটি দ্রুত বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে তাদের বিশ্বাস। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে পাটের পাতা থেকে চা তৈরি করে রপ্তানি ও বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছে অ্যাকুয়া অ্যাগ্রো টেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এইচ এম ইসমাইল খান জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ১৬ কেজি চা জার্মানিতে পাঠানো হয়েছে। শিগগির আরো ২০০ কেজি পাঠানো হবে। আর বাংলাদেশের বাজারে দেওয়ার জন্য ১০০ ও ৫০ গ্রামের দুটি প্যাকেট করা হয়েছে, যার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ১৫০ ও ৯৯ টাকা। এতে প্রতি কাপ চায়ের জন্য খরচ পড়বে এক টাকারও কম। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের আশা, পাট পাতার চায়ের গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। তাহলে পাট পাতার চায়ের চাহিদা বাড়বে। দেশের বাইরেও এ সম্পর্কে জানান দিতে হবে। তাহলে এর মাধ্যমে উন্মোচিত হতে পারে রপ্তানির একটি নতুন দ্বার।
গবেষকরা বলছেন, ভেষজ হিসেবে পাটের পাতার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। পাটের বিটা এ, বি, সি’র মতো ভিটামিন প্রদান করে। প্রতিরোধ করে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি। পাট পাতার রস রক্ত পিত্তনাশক, বাত নিরোধক, ক্ষুধা বৃদ্ধিকারক, আমাশয়, উদরাময় ও অম্ল রোগের মহৌষধ। তাই পাট পাতার চায়ের চাহিদা মানুষের কাছে অনেক বেশি থাকবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। তাছাড়া ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হূদরোগ ও আলসার প্রতিরোধ, ডিএনএ ও লিভারের ক্ষয়রোধ, রক্তচাপ এবং কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করার মতো অনেক গুণাবলি রয়েছে পাট পাতায় তৈরি এ চায়ে। ফলে এ চায়ের নামকরণ করা হয় ‘মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টি’। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্মকর্তাদের দাবি, মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টিতে যে পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’ এবং অন্যান্য ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইটোকেমিক্যাল আছে; তা অনেক দামি ফলমূল বা সবজিতেও পাওয়া যায় না। তাই এ চায়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকবে অনেক বেশি। গ্রিন টি-এর তুলনায় পাট পাতার চায়ের চাহিদা বেশি হবে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য পাট পাতার চা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। পাশাপাশি বিদেশেও জানাতে হবে।