সামাজিক বিপণন বলতে কী বোঝেন
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
সমাজের বৃহত্তর সামাজিক বিকাশে কার্যকর, দক্ষ, উপযুক্ত একটা পদ্ধতি হিসেবে দীর্ঘ অর্ধশতক ধরে খুবই প্রভাশালী পক্রিয়া হিসেবে নিরবে কাজ করে যাচ্ছে সামাজিক বিপনন বা সোস্যাল মার্কেটিং। এটা সামাজিক পরিবর্তন কমর্সূচীর ধারণা ছড়িয়ে দিতে কাজ করলেও বর্তমানে এর বহুবিধ ব্যবহার করে আসছে করোপোরেট হাউসগুলো। ফলে সোস্যাল মার্কেটিং থেকে লাভবান একদিকে হচ্ছে সমাজ ও সামাজিক ব্যবস্থা অন্যদিকে সুবিধা পাচ্ছে সিএসআর এর আডালে কোম্পানীর মার্কেটিং পলিসি।
“সামাজিক বিপণন” কখনও কখনও শুধুমাত্র অ বাণিজ্যিক লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যবহার করা হতো। আজকাল বাণিজ্যিক বিপণন কৌশলও সামাজিক কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটা সহজ ব্যাপার যে “বাণিজ্যিক বিপণন” এর ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে “আর্থিক লক্ষ্য অর্নজণটাই মূখ্য বলে ধরা হয়। যখন সামাজিক বিপণন প্রধান লক্ষ্য হয় “সামাজিক কল্যাণ”. তখন সেটাকেও আমরা সামাজিক বিপনন বলে থাকি। কিন্তু কখনো কখনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক বিপনন করলেও তার মধ্যে এতবেশী বানিজ্যিক স্বার্থ চলে আসে তখন তা সমাজের প্রকৃত কল্যান সাধন করেনা। তখন তাকে সামাজিক বিপনন বলাও যায়না।
সর্বপ্রথম কলকাতায় ১৯৬৩ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট এ কেটি চন্দ নামে এক গবেষকের নেতৃত্বে প্রজনন স্বাস্থ্য প্রোগ্রামের আওতায় সরকার কম খরচে কনডম বিক্রির জন্য সামাজিক বিপনন শুরু করে। এই বিপনন এর আওতায় ছিলো বিক্রয়, প্রচার ও প্রশিক্ষণ। মোট কথা একটি সমন্বিত ভোক্তা বিপণন প্রচারাভিযান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।পরে বিলেত সরকার একে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়। একই কাজ করে যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, ওঅস্টেলিয়া। একসময় জাপানেও “সামাজিক পরিবর্তন প্রচারণা” নামে কতলার এবং নেদ রবার্ট প্রচার অভিয়ান পরিচালনা করা হয়। লেখাভিত্তিকিএই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিলো সচেতনতা তৈরী, নির্দিষ্ট ধারণা পরিবর্ণত, মনোভাব বদলানো, অনুশীলন বা কিছু আচরণ পরিত্যাগ। (উইকিপিডিয়া)
২০০৫ সালে, স্টারলিং বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৭ সালে মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিপণন এর উপর ভিত্তি করে গবেষণা বিভাগ খোলে এতে ছিলো স্বাস্থ্য ও সামাজিক মার্কেটিং একটি বিশেষ স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে “কৌশলগত সামাজিক বিপণন” এবং “কর্মক্ষম সামাজিক বিপণন” এর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য এর ধারণাগত কাজ ও কৌশলগত বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। লেখালেখি এবং বাস্তব উদাহরণ ব্যবহার করে টার্গট পিপলদের নির্দিষ্ট আচরণগত পরিববর্নের লক্ষ্য অর্জন করতে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্মক্ষম সামাজিক বিপণনে সামাজিক বিপণন নিশ্চিত করার জন্য প্রচেষ্টা বৃদ্ধি “মূল প্রজেক্টের” অণ্তভূক্ত। মূলত সামাজিক বিপনন এর আওতায় কখনো শুধুমাত্র প্রচার প্রচারণা চালানো হয় কেবল জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। আমাদের দেশে এনজিওগুলো এ ধরনের প্রচুর কমর্সূছী গ্রহণ করে থাকে। অনেক সময় এধরনের কর্মসূচীকে বায়বীয় প্রকল্প বলা হয়। কিন্তু ভূতকি দামে পন্য সরবরাহের কারণে এ ধারনার ব্যাপকতা এখনো বজায় রয়েছে।
১৯৭৫ সালে রাজা কনডম দিয়ে বাংলাদেশে এই কাজ শুরু করে সোস্যাল মার্টিং কোম্পানরী -এসএমসি। সাথে ভুতর্কি দামে বাজারে ছাড়ে মায়া বড়ি। ১০৮৫ সালে তারা বাজারজাত করে খাওয়ার স্যালাইন। যদিও ৯০ সালে সংস্থাটি কোম্পানী আইনে নথিভুক্ত হয়। ১৯৯৫ সালে ইউএসএআইডি তহবিল সঙ্গে চালু করে এসটিডি / এইচআইভি / এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচী । (এসএমসির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে) এটা ভূতকী বা অলাভজনক প্রকল্প বিধায় সারা বিশ্বে এ ধরনের কাজ সামাজিক মাকের্টিং হিসেবে চিহিুত হয়ে আসছে। পরবতির্তে ড. মুহাম্মদ ইউনুষ সামাজিক ব্যবসায় ধারণা নিয়ে হাজির হলে সামাজিক মাকের্টিং কথাটা ছাপা পড়ে যায়। সামাজিক কল্যানের দিক থেকে দুটো প্রায় একই জিনিস। সামাজিক ব্যবসায় অবশ্য ভূতর্কির কথা বলা হয়না, বলা হয় অলাভের কথা। বতর্মানে সামাজিক মাধ্যমে বিপনন বা সোস্যাল মিডিয়া মারকেটিং ব্যাপক শোরগোলে সামাজিক বিপনন বা সোস্যাল মারকের্টিং কথাটা চাপা পড়ে যায়। এর মধ্যে পদ্মা মেঘণা যমুনার অনেক জল গড়িয়ে গেছে, বিশ্বব্যাপী এই ধারনার ব্যাপক প্রসার ও প্রচার বেড়েছে। বর্তমানে আটটি বিষয়ের উপর এ সামিাজিক বিপনন ধারণা প্রতিষ্ঠিত।
- জনসাধারণ এর চাহিদা ও সমস্যার আলোকে সেবা ও পন্য সেবা মানষিকতায় মানুষের কাছে পৌছানে।
2. একটি শক্তিশালী ভোক্তা চাহিদা বিশ্লেষণ ও বাসবতবায়ন কমর্সূছী প্রণয়ন।
3. গবেষণা
4. গঠনমূলক গবেষণা ও ব্যবহার এর জন্য পণ্য এবং প্রচারণা পরিকল্পনা তৈরী।
5. পন্য বন্টন সেবা পৌছানো প্রচারণা যোগাযোগ এর জন্য একটি বিশ্লেষণী চ্যানেল বিদ্যমান রাখা। এর মধ্যে আরো রয়েছে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ইতিবাচক হস্তক্ষেপ, সমন্বিত বিপণন ব্যবহার এবং সমন্বিত পণ্য, মূল্য, স্থান নিধারণ বং প্রচার কৌশল ঠিক করা।
6. পুরো পক্রিয়া হবে সুসংহত এবং নিয়ন্ত্রণ মূলক্
7. এবং একটি পক্রিয়ার মাধ্যমে পুরো প্রসেসকে ট্র্যাকিং করা।
8. সমস্যা বিশ্লেষণ, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও প্রতিক্রিয়া যাচাই।
অবশ্য পরবতির্তে বিভিন্ন দেশে এই সামাজিক বিপননের ব্যাপক শ্রেণীকরণ, বিস্তৃতিকরণ ও নতুন নতুন ধারণার সংযুত্তিকরণ ঘটেছে।
আমরা যদি ধরে নিই যে সামাজিক কল্যানের লক্ষ্যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন প্রচারণা্ চালায় কোন উপহার দেয় কোন ভূরতকি পন্য বাজারে ছাড়ে তাকে সামাজিক বিপনন বলে এবং এসংক্রান্ত অন্য্যান্য কাজ গবেষানা, বাজার যাচাই ইত্যাদি কাজও সোস্যাল মার্কেটিং এর আওতাভুক্ত বলে বিবিচিত হবে।
বতর্মানে বিভিন্ন লাভজনক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সামাজিক বিপননকে কাজে লাগাচ্ছে তাদের ব্যবসায়িক সুনাম ও ইতিবাচক ভাবমূতি তৈরী করার জন্য যদিও আমরা একে বলছি সিএসআর বা সোস্যাল করপোরেট রেসপন্সসিবিলিটি।
বর্তমানে সামাজিক মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে। সে তুলনায় সামাজিক মার্কেটিং বিষয়টা নিয়ে পরিচিত নয়। বিষয়টি পরিস্কার করার জন্য সামাজিক বিপনন বা স্যোসাল মার্কেটিং এর গোড়ার কথাগুলো আলোচনা করে নিলাম। এখন একজন ব্যবসায়ী বিশেষকরে ই কমার্স ব্যবসায়ী কিভাবে সোস্যাল মার্কটিংকে কাজে লাগাতে পারেন। সে বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।
১. ঐতিহ্যগত সামাজিক বিপননের অনুকরনে:
এ ধরনের অনুকরণ খুব কঠিন জিনিস নয়। যেহেতু আমাদের দেশে সোস্যাল মার্কেটিং কোম্পানী নামে একটি প্রতিষ্ঠান ভূতর্কিতে পন্য বিক্রয় ও বিপনন করে থাকে সূতরাং বিষয়টি ধরতে আমাদের খুব বেশী বেগ পাওয়ার কথা নয়। যেমন: আপনার একটি ফ্যাশন হাউস রয়েছে আপনি চাইলে ১০টা স্কুলে ৫ জন করে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে স্কুল ড্রেস দিতে পারেন ভর্তুকি বা বিনামূল্যে। এতে আপনার লোগো লাগানো থাকবে। যাদেরকে দেবেন তারা হয়তো দরিদ্র বা আপনার ভোক্তা হবেনা। কিন্তু এর মাধ্যমে স্কুলে একটি অনুষ্ঠানে অথবা স্কুলের পুরস্কার বিতরণেী অনুষ্ঠানে আপনি উপস্থিত হয়ে এটা দেয়ার মাধ্যমে আপনার প্রচারণার সুযোগ নিতে পারেন। স্কুলের সামনে আপনি এবিষয়ে একটি ডিজিটাল ব্যানার লাগানোর সুযোগও পেতে পারেন। যদি আপনি ভুর্তকি মূল্যে দেন সেটা আপনার জন্য সামাজিক বিপনন আর যদি ফ্রি দেন সেটা সিএসআর বা সোস্যাল করপোরেট রেন্সপন্সসিবিলিটি বা ব্যবসায়ীর সামাজিক দায়িত্ব।
২. সভা সমিতির মাধ্যমে:
এলাকার বিভিন্ন সভা সমিতি এমনকি আপনি যে মার্কেটে অফিস নিয়েছেন তারও দোকান মালিক সমিতির মাধ্যমেও আপনি এ ধরনের করতে পারেন। এক্ষেত্র্রে মূল উদ্যোগটা নেবে দোকার মালিক সমিতি। তারা হয়তো তাদের মার্টের সামনে থেকে ১০ জন ভিক্ষুককে পূর্নবাসনের দায়িত্ব নিলেন আর আপনি মাত্র একজনের দায়িত্ব নিয়ে প্রচারের সুযোগটা নেবেন মাত্র। বাংলাদেশ ই কমার্স এসোসিয়েশান যেভাবে নতুন উদ্যোক্তা তৈরীর জন্য বিনাপয়সায় পরামর্শ এবং ভূতর্কিমূল্যে নানা ওয়াকর্শপএর আয়োজন করছে এটাকে আমরা সামাজিক বিপনন বলতে পারি অনায়াসেই।
৩. কমিউনিটি সোস্যাল মার্কেটিং
আপনার কমিউনিটির জন্য কিছু কাজ করে আপনি এই প্রচারের সুযোগটা নিতেই পারেন। যেমন আপনার এলাকার ৫টি স্থানে ৫টি বড় বোর্ড লাগিয়ে আপনি ৫টি সামাজিক প্রচার চালাতে পারেন। যেমন একটাতে আপনি পুলিশ, র্যা ব, হাসপাতাল, ব্লাডব্যাংক ইত্যাদি দরকারী ফোন নাম্বার লিখে দিলেন। অন্যটাতে দিলেন এলাকার ম্যাপ। আরেকটাতে দিলেন যৌতুক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দূণীতিবিরোধী শ্লোগান। নিচে সামাজিক সচেতনতায় আপনার প্রতিষ্ঠানের নামটা এবং ওয়েব এড্রেসটা জ্বলজল করে জ্বলে উঠলে ক্ষতি কি?
৪. বিভিন্ন মেধা প্রতিযোগিতার আয়োজন:
বিভিন্ন মেধা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আয়োজন সংক্রান্ত পুরস্কার ও প্রচারণার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠান ও সেবাকে পরিচিত করাতে পারেন সহজে। দিতে পারেন ২/৪টা স্কলারশীফ। আপনি ভালো করেইতো জানেন যে ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার পেছনে ইউনিলিভার এমনি এমনি কোটিটাকা খরচ করেনা।
৫. সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার
এসমস্ত কাজে আপনি সোস্যাল মিডিয়া ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার এসব ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আপনি টুরিজম এর উপর কাজ করবেন। আপনার প্রয়োজন বাংলাদেশের টুরিজম বিষয়ের উপর ভিন্ন ভিন্ন কিছু লেখা। পাশাপাশি প্রয়োজন শুরুতেই একটা টুরিস্ট কমিউনিটি। আপনি সারাদেশের অথবা দেশে বিদেশের টুরিস্টদের জন্য বাংলাদেশের টুরিস্ট স্পট নিয়ে অনলাইনে একটি লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন। প্রথমত আপনি সেরাদের পুরস্কারতো দিবেনই। তারপরে প্রথম একশজনের জন্য আপনি ৫০% হোটেল ছাড়ে, এবং ২০% সার্ভিস চার্জ ছাড়ে একটি ককক্সবাজার ট্যুরের আয়োজন করলেন। অথবা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের সাথে যৌথভাবে ওয়ানওয়ে ছাড় দিয়ে টুরিজম টিকেটের ব্যবস্থা করলেন, শর্ত হলো পুরো প্যাকেজটি অপারেট করবে আপনার প্রতিষ্ঠান। এটা ছাড়া ১০০০ প্রতিযোগিকে সারাজীবন আপনি সার্ভিস চার্জ ১৫% ছাড় দেবেন। বা ১ বছরের জন্য সকল অংশগ্রহণকারীকে ১০% ছাড় দেবেন। ইত্যকার নানা সুবিধা দিয়ে আপনি একটি টুরিস্ট গ্রুপ পেয়ে গেলেন।
শেষ কথা: এরকম আরো অনেক কাজই রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি যদি শুধু প্রচার ও ব্যবসায়ের স্বার্থে এটা করেন তাহলে আমি বলবো আপনার এটা করার দরকার নেই। কারণ আপনার উদ্দেশ্যের ভেতরে জনকল্যাণ না থাকলে একসময় এটা এমনুপ ধারণ করবে তখন তা হয়তো আর সামাজিক বিপননের রুপে থাকবেনা। আপনি সোস্যাল মার্কেটিং শুধু এজন্য করবেন যে সমাজের প্রতি আপনার কিছু দায়িত্ব আছে, দেশের প্রতি আপনার মমত্ববোধ আছে। আর যেহেতু আপনি আপনার ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে একাজগুলো করবেন। সেজন্য আপনার ব্যবসাকে প্রমোট করবেন। কারণ ব্যবসা হলে এ ধরনের সমাজসেবা আপনি ভবিষ্যতে আরো বেশী করতে পারবেন। আর ব্যবসা পড়ে গেলে এখানেই শেষ। কেউ এটাকে বাঁকা চোখে দেখলে তাকেও মেসেজটা দিয়ে দিন।