নারী উদ্যোক্তাদের ‘হলিডে মার্কেট’
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
প্রথমবারের মতো রাজধানীতে চালু হয়েছে সম্পূর্ণ নারী বিক্রেতা পরিচালিত ‘উইমেন্স হলিডে মার্কেট’। সপ্তাহে দুদিন শুক্র ও শনিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেট সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। তবে নারী উদ্যোক্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ঈদ উপলক্ষে পুরো রমজান মাসে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের উত্তর পার্শ্বে ডিএনসিসি কর্তৃক নবনির্মিত মহাখালী পাইকারি কাঁচাবাজার প্রাঙ্গণে গত বৃহস্পতিবার মার্কেটটি উদ্বোধন করেন মেয়র আনিসুল হক। এ মার্কেটে ব্যবসা করতে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষকে কোন প্রকার ফি প্রদান করতে হবে না। ব্যবসা পরিচালনা করতে উদ্যোক্তাদের দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ।
৫০ নারী বিক্রেতা এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হলেও ক্রেতা নারী পুরুষ যে কেউ হতে পারবেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক রাজধানীতে বসবাসকারী নারীদের অধিক কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করে ‘নারী উদ্যোক্তা’ তৈরি করতে নারী বিক্রেতাদের দিয়ে এ মার্কেটটি চালু করছে। নারী পরিচালিত এ মার্কেটটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন ডিএনসিসির ৩১, ৩৩ ও ৩৪নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজি। বিক্রেতা এসব নারী উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা রক্ষায় ডিএনসিসি মার্কেটের সামনের ফাঁকা স্থানের সীমানার মধ্যেই ব্যবসা পরিচালনা করবেন। এর বাইরে ডিএনসিসির নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীও থাকবে।
প্রাথমিকভাবে সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্য থেকে আগে থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন এমন ৫০ নারী উদ্যোক্তা এ মার্কেটে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নির্বাচিত করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে নারী উদ্যোক্তোদের চাহিদা ও আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে এর সংখ্যা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব উদ্যোক্তা আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এই হলিডে মার্কেটে কাপড় থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সকল জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএনসিসির গুলশান, বনানী, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও ফুটপাথের ওপর বসে ব্যবসা করা হকারদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এমনকি অবৈধভাবে ব্যবসা করা হকাররা নাগরিকদের চলাচলের পথে বাধার সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেন আনিসুল হক। এমতাবস্থায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নাগরিকগণ আগের মতো ফুটপাথ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন না।
এছাড়া নারীরা তাদের ভিড়ের মাঝে পুরুষ হকারদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে তেমন একটা আগ্রহী হন না। এর সমাধানকল্পে আগ্রহী নারী উদ্যোক্তা ও নারী ক্রেতা বিক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ এই মার্কেটটি চালু করছে বলে জানা গেছে। ব্যবসা পরিচালনাকারী ৫০ নারীই সিটি কপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সভুক্ত। এসব নারীরা রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ইতোমধ্যেই ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তবে নারীরা ঘরে পণ্য তৈরি করে কম দামে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে সরবরাহ করেন। দোকান মালিকগণ ঘরে তৈরিকৃত এসব পণ্যই ক্রয়ের চেয়ে দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রি করেন।
সূত্র জানায়, এসব নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য ফর দ্য ওমেন বাই দ্য ওমেন নামক একটি বেসরকারি সংস্থা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণে ঘরে তৈরিকৃত সকল পণ্যের বাজারজাতকরণ, ব্যাংকিং সিস্টেম সম্পর্কে জানাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত করা হবে।
এ বিষয়ে মার্কেটটি পরিচালনার সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা স্থানীয় নারী কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজি বলেন, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন রাজধানী তথা দেশে প্রথমবারের মতো ৫০ জন নারী উদ্যোক্তা নিয়ে উইমেন্স হলিডে মার্কেট চালু করা হচ্ছে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের উত্তর পার্শ্বে ডিএনসিসি নবনির্মিত মহাখালী পাইকারি কাঁচাবাজার প্রাঙ্গণে এই মার্কেটটি বসবে। সপ্তাহের বন্ধের দিন হিসেবে শুক্র ও শনিবার এই মার্কেটে আগ্রহী নারী ও পুরুষগণ গৃহস্থালীসহ নিত্য ব্যবহার্য সকল পণ্য ক্রয় বিক্রয় করবেন।
আনিসুল হক বলেন, আমাদের একটি স্বপ্ন পূরণ হলো। আমরা যেভাবেই বলি না কেন নারীদের জন্য এখনো বেশি কিছু করা সম্ভব হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের পুনর্বাসিত করা ডিএনসিসির একটি ম্যান্ডেট এবং কমিটমেন্ট। ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে একটি করে এ ধরনের মার্কেট চালু করা হবে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের জন্যও পৃথক একটি হলিডে মার্কেট চালু করা হবে। সরকার নারীদের এখন জামানতবিহীন ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে। তাই নারীরাও এগিয়ে চলছে। এজন্য নারীর সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।