শুরুর আগে কুড়ি প্রশ্ন
পিটার চোহানের অনেক পরিচয়। তিনি একাধারে শিক্ষক, লেখক, বক্তা, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায় কৌশলবিষয়ক বিশেষজ্ঞ। নতুন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রায়ই তিনি পরামর্শমূলক নিবন্ধ লিখে থাকেন। পিটারের বর্তমান নিবন্ধটি আইএনসি ডটকম থেকে ভাষান্তর করেছেন মারুফ ইসলাম।
আমি একটি কলেজে শিক্ষকতা করি। সেখানে আমাকে উদ্যেক্তা বিষয়ক একটি কোর্স পড়াতে হয়। ক্লাসে, শিক্ষার্থীরা প্রায়ই আমার কাছে জানতে চায়, ব্যবসা শুরুর করার আগে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা উচিত। আমি তাদের হাতে কুড়িটি প্রশ্ন ধরিয়ে দিই। তাদেরকে বলি, ‘এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর খুঁজে পেলে ব্যবসা শুরু করতে পারো।’
আপনিও চোখ বুলাতে পারেন প্রশ্নগুলোতে, যদি অবশ্য আপনার ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছে থাকে!
১. আপনি কি মনে করেন, আপনার ব্যবসায় মুনাফা হবে? কী উপায়ে হবে? দৃশমান কোনো পার্থক্য আছে?
- এই প্রশ্নের মানে হচ্ছে, বাজারে প্রচলিত অন্যান্য পণ্যের সাথে আপনার পণ্যের পার্থক্য কী? ঠিক কোন পার্থক্যের মাধ্যমে আপনি ভোক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। ভেবে বের করুন।
২. আপনার ব্যবসার মাধ্যমে আপনি কি সমাজ, পরিবেশ এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাহায্য করতে পারবেন?
- উত্তর সহজ। আপনাকে প্রথমেই ভেবে বের করতে হবে পরিবেশবান্ধব এবং মানববান্ধব ব্যবসা। যে ব্যবসার মাধ্যমে আপনি আপনার সমাজ, রাষ্ট্র এবং সমগ্র পৃথিবীর মানুষের কল্যাণ করতে পারবেন সেই ব্যবসায়িক কৌশল খুঁজে বের করুন। সাফল্য দ্রুত ছুটে আসবে আপনার কাছে।
৩. আপনার ব্যবসার উদ্দেশ্য কী? সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে আপনি কতটুকু সংগ্রাম করতে প্রস্তুত?
- প্রথমেই ব্যবসায়িক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। তারপর লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে দক্ষ আর যোগ্য ব্যাক্তিকে নিয়োগ দিন। বিষয়টাকে আবেগ দিয়ে বিচার করবেন না, যুক্তির নিরিখে সিদ্ধান্ত নিন।
৪. চৌকশ ভোক্তাদের কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। তাদের কাছ থেকে কীভাবে শিখবেন? উপায় বের করেছেন?
- প্রতিদিন অসংখ্য বৈচিত্রময় গ্রাহকের মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে। কেউ বোকাসোকা, কেউ সাধারণ গোছের, কেউ অতিমাত্রায় চৌকশ। এই চালাক-চতুর গ্রাহকদের আপনি কীভাবে সামলাবেন সেটা ভেবে বের করুন। তারা কীভাবে পণ্য যাচাই-বাছাই করে, কীভাবে পণ্য পছন্দ করে এসব আচরণ সুক্ষ্মভাবে খেয়াল করুন।
৫. গ্রাহকদের জন্য নিশ্চয় কিছু সুযোগ-সুবিধা রাখতে হবে আপনাকে। আপনি কোন ধরনের সুযোগ রাখতে চাইছেন?
- এক্ষেত্রে গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন। তাদের মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে তাদের মতামত নিন। তারা কী ধরনের সুযোগ পেতে পছন্দ করে সেটা যেকোনো উপায়ে বের করুন।
৬. আপনার বাঁধা গ্রাহক হবে কারা?
- ব্যবসা শুরু করার আগেই আপনাকে ভেবে বের করতে হবে, আপনার ‘টার্গেট পিপল’ কারা? আপনি যদি আপনার গ্রাহক সুনির্দিষ্ট করতে পারেন, তবে ব্যবসায়িক সাফল্য আসবে তাড়াতাড়ি।
৭. যে ব্যবসা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে ব্যবসা থেকে আয় হবে কীভাবে?
- আপনি কোন ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন, সেটা নির্ধারণ করার পর ক্যালকুলেটর নিয়ে বসুন। তারপর পুঙ্খানুপঙ্খভাবে হিসাব কষে দেখুন, ওই ব্যবসাতে কী পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে, কতজন কর্মী প্রয়োজন হবে, তাদের বেতন-ভাতা বাবদ কত খরচ হবে, অফিস বাবদ কত খরচ হবে ইত্যাদি হিসাব করে বের করুন। তারপর হিসাব করুন, এসব খরচ বাদ দিয়ে অপনার পণ্য থেকে কতটুকু আয় করতে পারেবন।
৮. আপনি যে পণ্য বাজারে আনতে চাইছেন, সে পণ্যের ব্যাপারে গ্রাহকের আগ্রহ আছে তো?
- মনে রাখতে হবে, আপনাকে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে লড়াই করে বাজারে টিকে থাকতে হবে। অতএব, পণ্য তৈরির আগে বারবার ভাবুন সেটা গ্রাহকের মনে কেনার আগ্রহ তৈরি করতে পারবে কিনা।
৯. আপনি কী উপায়ে গ্রাহকের মন জয় করতে চান?
- গ্রাহকের মন জয় করার নানা কৌশল আছে। পণ্যের সর্বোচ্চ মান কিংবা কম মূল্য নির্ধারনের মাধ্যমে ভোক্তার মন জয় করা যায়। এর বাইরে আরও হাজারটা কৌশল বের করা যায়। আপনি কোন কৌশল অবলম্বন করবেন, ভেবে দেখুন।
১০. আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান কোনটি? তাদের ভালো দিক এবং মন্দ দিক নির্বাচন করেছেন কি?
- ব্যবসা শুরুর আগে আপনাকে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী পণ্য এবং প্রতিষ্ঠান সনাক্ত করতে হবে। তারপর তাদের ভালো দিক এবং মন্দ দিক নিয়ে গবেষণা করতে হবে। তা না হলে নিজের পথ তৈরি করে নিতে পারবেন না।
১১. আপনি আপনার পণ্যকে কীভাবে বিপণন করতে চান? কীভাবে আপনার পণ্যকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে চান?
- অনেকে ভেবে থাকেন, ব্যবসা শুরু করার পর এসব বিপণন বিষয় নিয়ে ভাবা যাবে। আগে ব্যবসা শুরু করা যাক। আমি বলি, এটা ভুল সিদ্ধান্ত। ব্যবসা শুরুর আগেই ঠিক করুন, কীভাবে পণ্যটি ভোক্তার হাতে তুলে দিবেন।
১২. আপনার পণ্যের মাধ্যমে কীভাবে ভোক্তাকে দিনের পর দিন খুশি রাখবেন?
- পণ্যের দামের ব্যাপারে সব সময় স্বচ্ছতা দেখাবেন। দাম নিয়ে কখনো কারচুপি করবেন না। এতে গ্রাহক খুশি থাকে।
১৩. একটি পণ্য উৎপাদন করতে আপনার প্রতিষ্ঠানের কী পরিমান অর্থ ব্যায় হবে সেটা হিসাব করেছেন?
- পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌছে দেওয়া পর্যন্ত একটি পণ্যের পেছনে কত টাকা খরচ হচ্ছে সেটা সঠিকভাবে হিসাব করুন।
১৪. আপনার পন্যের ‘র ম্যাটেরিয়াল’ কোন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করবে? তাদের সঙ্গে আপনার চুক্তি কেমন হবে?
- যে প্রতিষ্ঠান আপনাকে ‘র ম্যাটেরিয়াল’ সরবরাহ করবে তাদের সঙ্গে চুক্তি করুন। চুক্তিতে অস্পষ্টতা রাখবেন না। চুক্তিপত্রে খোলাখুলিভাবে সব লিখুন।
১৫. আপনার ‘র-ম্যাটেরিয়াল’ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ এবং পরিবেশবান্ধব?
- চুক্তি করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন তারা পরিবেশের ক্ষতিকর কিছু উৎপাদন করে কি না। তারা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ কিনা সেটাও ভাবুন।
১৬. আপনার প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক কে হবে? আপনার পণ্যেকে প্রমোট করবে কে?
- ব্যবসায় নামার আগে একটি বিপণন কৌশল নির্ধারণ করুন। এ জন্য অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে পরামর্শ নিন।
১৭. শুরুতেই আপনার ব্যবসায় কী পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করবেন?
- নিজের সামর্থ্য বিবেচনা করে বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। কখনো সমর্থের অতিরিক্ত পুঁজি বিনিয়োগ করবেন না।
১৮. আপনার ব্যবসা থেকে কীভাবে আয় হবে সেটার অন্তত পরবর্তী তিন বছরের পরিকল্পনা আছে তো?
- ব্যাসায়ীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দূরদর্শী হতে হয়। তাই তারা ভবিষ্যতের ভাবনাটা আগেই ভেবে রাখেন। ব্যবসা শুরুর আগে আপনাকেও ভবিষ্যতেই ভাবনা ভাবতে হবে এবং তা কমপক্ষে তিন বছরের জন্য।
১৯. কত বছর পর আপনার প্রতিষ্ঠান লাভ-ক্ষতি সমান করতে পারবে?
- একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করুন যে ঠিক কত বছর পর আপনার প্রতিষ্ঠান লাভ-ক্ষতি সমান করতে পারবেন। সেভাবে বিপণন কৌশল তৈরি করুন।
২০. আপনার ব্যবসাতে ঝুঁকি কোনটি?
- আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, আপনার ব্যবসাতে ঝুঁকি থাকবেই। ঝুঁকিবিহীন কোনো ব্যবসা নেই পৃথিবীতে। তাই শুরুতেই আপনার ব্যবসার ঝুঁকি খুঁজে বের করুন। তারপর ঝুঁকি মোকাবেলার কৌশল বের করুন।