হাল সামলাবেন নাকি পাল সামলাবেন ?

হাল সামলাবেন নাকি পাল সামলাবেন ?

যিনি চেনা পথে হাঁটেন তাঁর পথ একটাই। আর যিনি অচেনা পথে হাঁটেন তাঁর পথ অনেক। তাই পথে নামবার আগে ভেবে নিতে হয়, কোন পথে যাচ্ছেন আপনি? ব্যবসা পথের পথিক, আপনি কী এ পথে নবীন? আপনি যদি নবীন ব্যাবসায়ী হোন, আপনার জন্য কিছু পরামর্শ বাতলেছেন ফিনান্সিয়াল পোস্টের বিনিয়োগ বিশ্লেষক মেলিসা লিয়ং। আর তা ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন মারুফ ইসলাম


অধিকাংশ মানুষই প্রবল উত্তেজনা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তারপর দিন যত যায় তত তাঁর উত্তেজনা কমতে থাকে। এবং একটা পর্যায়ে এসে তাঁর অবস্থা দাঁড়ায় ঢেউয়ের মাথায় দুলতে থাকা ডিঙ্গিনৌকার মাঝির মতো। তিনি তখন হাল সামলাবেন নাকি পাল সামলাবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। কেবলই প্রাণপণে চান একটু কূলের দেখা পেতে। বস্তুত বিনিয়োগ বাজেট, সঞ্চয় এবং ব্যবসা নিয়ন্তণের কৌশল জানা না থাকার কারণে নবীন ব্যবসায়ীদের এ অবস্থায় পড়তে হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকাও একটা কারণ বটে। এ রকম পরিস্থিতির মোকাবেলা প্রায় সব ব্যবসায়ীকেই করতে হয়। তাই হতাশ না হয়ে, হাল না ছেড়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশল খুঁজে বের করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এ সময় বিনিয়োগ সংক্রান্ত কিছু বিষয় মাথায় রাখতে পারেন।

বিষয়সমূহ:

কী পরিমাণ বিনিয়োগ দিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন সেটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, বরং কীভাবে, কোন খাতে বিনিয়োগ করতে চাইছেন সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেককে বলতে শুনেছি, ‘আমার তো বিনিয়োগ করার মতো বেশি পুঁজি নেই; ব্যবসায় সাফল্য আসবে কী করে!’ আপনাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমি ব্যবসা শুরু করেছিলাম মাত্র ২৫ ডলার দিয়ে। তো, আমার ব্যবসায় কী সাফল্য আসেনি? আপনার চারপাশে তাকান, এরকম অনেক উদাহরণ দেখতে পাবেন যারা তাদের ব্যবসার শুরুতে সামাণ্য পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল।

সুতরাং বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে না ভেবে বরং কত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন সেটা নিয়ে ভাবুন। কারণ সাফল্য আসে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উপর, বড় বিনিয়োগের উপর নয়। ব্যবসায় উত্থান-পতন থাকবেই। লাভ-লোকসানও থাকবে। মূল ব্যাপার হচ্ছে আপনি এ বিষয়গুলোকে কীভাবে মোকাবেলা করতে পারছেন। যিনি যত দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করতে পারেন তিনি তত দ্রুত ব্যবসায় সফল হোন।

ব্যবসায় নামলে আপনাকে নিত্য-নতুন সমস্যার মুখোমুখী হতে হবে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো নতুন সমস্যা আপনার সামনে হাজির হবে। এসব পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিন। অভিজ্ঞ বলতে আমি বলতে চাইছি, এ বিষয়ে যার ধারণা একটু বেশি, যিনি একটু বেশি জানেন-বোঝেন তাঁর পরামর্শ নিন। ধরা যাক, আপনি আয়কর সংক্রান্ত কোনো ঝামেলায় পড়েছেন। এখন এ বিষয়ে যদি কোনো শিক্ষকের পরামর্শ নিতে যান তাহলে আশাহত হবেন। আপনাকে এমন কাউকে খুঁজে বের করতে হবে যিনি আয়কর সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান রাখেন।

ফিনান্সিয়াল পোস্টের বিনিয়োগ বিশ্লেষক মেলিসা লিয়ং।
ফিনান্সিয়াল পোস্টের বিনিয়োগ বিশ্লেষক মেলিসা লিয়ং।

আপনি যদি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চান তাহলে শুরুতেই একেবারে অপরিচিত কোনো পণ্যের শেয়ার কিনবেন না। যেসব পণ্য আপনার পরিচিত, যেসব পণ্য সম্পর্কে আপনার মোটামুটি ধারণা আছে সেসব পণ্যের শেয়ার কিনুন। আপনি যদি অ্যাপেক্সের জুতা ব্যবহার করে থাকেন তবে অ্যাপেক্সের শেয়ার কিনুন। যদি আইফোন-আইপ্যাড ব্যবহার করে থাকেন তবে তাদের শেয়ার কিনুন। এভাবে শেয়ার বিষয়টাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। শেয়ার কেনার কৌশল শিখে ফেলুন। তারপর নতুন নতুন পণ্যের শেয়ার কেনার ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। শুরুতেই পরীক্ষায় নামতে যাবেন না।

একটা ব্যাপার মনে রাখবেন, মানুষ বৈচিত্র পছন্দ করে। অতএব গতানুগতিকতার বাইরে ভিন্ন কিছু ভাবুন। যে পণ্যের উপর বিনিয়োগ করতে চাইছেন সেই পণ্য সম্পর্কে বিশদ পড়াশোনা করুন। পণ্যটি সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালান। সরাসরি ভোক্তার মতামত জানুন। তারপর কত নতুনভাবে পণ্যটিকে ভোক্তার কাছে উপস্থাপন করতে পারছেন সেটা ‍নিয়ে ভাবুন। কত আকর্ষণীয়ভাবে পণ্যটিকে বাজারে ছাড়তে পারছেন সে সম্পর্কে ভাবুন। আশা করি নতুন ব্যবসায়িক কৌশল আপনি বের করতে পারবেন। আপনার বিনিয়োগ জলে যাবে না।

আপনার জন্য সর্বশেষ পরামর্শ। নিজেই নিজের পথ আবিষ্কার করুন। শুরুতে বলেছিলাম, যে অচেনা পথে হাঁটে তার সামনে পথ অনেক। অতএব, নিজেই নিজের পথ আবিষ্কার করুন, কোন পথে হাঁটলে আপনি সফলতার তীর্থস্থানে পৌছাতে পারবেন। এ পথ আপনাকে কেউ দেখিয়ে দেবে না। তবে হ্যা, যাত্রাপথে অনেক সঙ্গী পাবেন আপনি। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে তো দোষ নেই। পরামর্শ নিন, এবং সঠিক পথ খুঁজে বের করুন।

ফিনান্সিয়াল পোস্ট অবলম্বনে। favicon

Sharing is caring!

Leave a Comment