টার্গেট মার্কেটিংয়ের চার অধ্যায়
মারুফ ইসলাম: ‘কাঙ্ক্ষিত বাজার’ শব্দটি অনেকের কাছেই অচেনা মনে হতে পারে। কিন্তু যদি বলি ‘টার্গেট মার্কেটিং’ তাহলে অনেকেই বলবেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, বুঝি তো ব্যাপারটা! তবে আমজনতার বোঝা আর উদ্যেক্তার বোঝা এক জিনিস নয়। আপনি যদি নবীন উদ্যেক্তা হয়ে থাকেন তাহলে টার্গেট মার্কেটিং সম্পর্কে অপনাকে বুঝতে হবে আরও গভীরভাবে। কারণ একটি বাজারের কতটুকু আপনি দখলে রাখতে চান, সেজন্য কী কৌশল অবলম্বন করবেন ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে আপনাকে টার্গেট মার্কেট সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান রাখতে হবে।
বিপণন বিষেজ্ঞরা বলে থাকেন, একটি বাজারে চার ধরনের অবস্থা বিরাজমান থাকে-আপনার শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ এবং হুমকি। আপনি যদি এই চার অবস্থাকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারেন তাহলে বাজারে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে পারবেন।
শক্তি
প্রথমেই খুঁজে বের করুন আপনার শক্তি কোথায়। আপনি যে পণ্য বাজারে আনতে চাইছেন সেটি অন্যান্য পণ্যের চেয়ে মানসম্মত কিনা, ক্রেতা পণ্যটি কিনে সন্তুষ্ট হবে কিনা, আপনার ব্রান্ডের ওপর ক্রেতার কতটুকু আস্থা রয়েছে, আপনার বিক্রয় কর্মীদের ওপর ক্রেতারা সন্তুষ্ট কিনা, নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার সাথে প্রতিযোগীতা মোকাবেলা করার সামর্থ্য আছে কিনা, বিজ্ঞাপন ও প্রসারে আপনি কতখানি এগিয়ে এমন আরও অনেক বিষয় যা টার্গেট মার্কেটে আপনার শক্তি হিসেবে বিবেচিত। দক্ষভাবে বাজার পরিচালনার পাশাপাশি এ শক্তি বাড়ানোর জন্য আপনার প্রচেষ্টা অব্যহত রাখুন।
দুর্বলতা
আপনার পণ্য অত্যন্ত দূর্বল মানের, আপনার পণ্যের ওপর ক্রেতার আস্থা কম, ক্রেতা আপনার ব্রান্ডের ওপর সন্তুষ্ট নয়, পণ্য মান অনুযায়ী মূল্য বেশি, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার সামর্থ্য আপনার নেই, আপনার পণ্য কেনার পর অন্যকে কিনতে বলা তো দুরের কথা দ্বিতীয় বার ক্রেতা নিজেও কিনে না, আপনার কর্মী বাহিনী দূর্বল, মুনাফার বদলে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি, পরিবহণ ব্যবস্থার জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়, সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল… খঁজে বের করুন এরকম দুর্বলতা।তারপর দূর্বলতাগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের পথে নিয়ে আসুন।
হুমকি
বাজারে পণ্য ছাড়ার আগে কয়েকটি বিষয়ে সজাগ থাকুন। যেমন বাজারের ‘মন্দা সময়’ মোকাবেলা করার যথেষ্ট সামথ্য আপনার রয়েছে কি না, চলতি বাজারে আপনার প্রতিযোগীদের সিদ্ধান্ত আপনার পণ্যের কোনো ক্ষতি করতে পারে কি না ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনারটার্গেট মার্কেটের হুমকি। এছাড়া সরকারী কোন সিদ্ধান্ত আপনাকে মোকাবেলা করতে হতে পারে, আপনার পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলে হতে পারে জটিলতার সৃষ্টি। এসব বিষয়ে সজাগ থাকুন।
সুযোগ
বাজারে আপনার জন্য কী কী সুযোগ অপেক্ষা করছে তা যাচাই করুন। আপনার পণ্য বাজারে ছাড়ার পর দেখুন পণ্যটি কি মানুষ চিনে, ব্র্যান্ডটির ওপর কি আস্থা বাড়ছে, ক্রেতা কি পণ্য মান আরও ভাল করার জন্য পরামর্শ দেয়, পণ্যের মূল্য নিয়ে কি কথা বলে, দিন দিন আপনার পণ্যের পরিচিতির সাথে বিক্রয়ও কি বাড়ছে, আপনার বিক্রয় কৌশল প্রতিযোগীদের তুলনায় ফলপ্রসু হচ্ছে কি না-এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তবে জেনে রাখুন এসবই আপনার জন্য সুযোগ। এই সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলে সাফল্য ধরা দিবেই।
মার্কেটিং একটি চ্যালেঞ্জ আর বুদ্ধিমত্তার খেলা। আর এ খেলায় সেই প্রতিষ্ঠান এগিয়ে থাকে যে প্রতিষ্ঠান বাজারের বিশ্লেষণ করে, বাজারের দূর্বলতা কাটিয়ে, সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজারে নিজের অবস্থান করে নিতে পেরেছেন।