উদ্যোক্তার ষড়রিপু
উদ্যোক্তারা কত ধরনের যে ভুল করতে পারে এটা গাই কাওয়াসাকির চেয়ে আর কে বেশি জানবে! গাই কাওয়াসাকি যিনি সিলিকন ভ্যালির একজন সফল উদ্যোক্তা এবং একজন সফল লেখকও বটে। উদ্যোক্তা, স্টার্ট-আপ এবং চলমান ব্যবসায় নিয়ে লিখেছেন ১৩টি বই। তিনি ভেঞ্চার ক্যাপিট্যাল ফার্ম গ্যারেজ ডটকম এবং অনলাইন ম্যাগাজিন অলটপ ডটকম এর প্রতিষ্ঠাতা। কাজ করেছেন অ্যাপল-এ। স্টিভ জবসের সাথে ম্যাকেনটোশ প্রজেক্টে সরাসরি কাজ করে শিখেছেন অনেক কিছু। সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন, উদ্যোক্তাদের ভুল ত্রুটি নিয়ে, ব্যবসায় করতে গিয়ে সচরাচর যে ভুলগুলো তারা করে থাকে। ফোর্বস ম্যাগাজিন অবলম্বনে সে ভুল-গুলোই তুলে ধরেছেন মো. সাইফ।
১. ব্যবসায়ের আকার নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়া
- ব্যবসায় শুরুর পরই উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসায় পরিধি এবং গ্রাহকসেবা নিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ভাবেন। এ কারণে তারা ব্যবসায়ের আকারে পরিবর্তন নিয়ে আসতে চান রাতারাতি। এটিই উদ্যোক্তাদের অন্যতম একটি সাধারণ ভুল। গাই কাওয়াসাকির মতে, তিনি কখনো অন্তত ব্যবসায়ের আকার দ্রুত বড় করতে না পারাকে ব্যবসায় খারাপ হওয়ার কারণ মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ ব্যবসায়ের পণ্যগুলো মানের দিক থেকে ভালো থাকবে, ততদিন পর্যন্ত অল্প গ্রাহক সেবাতেও তারা সন্তুষ্ট থাকবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ের আকারের চেয়ে পণ্যের ভূমিকা বেশি।
.
২. পার্টনারশিপ ব্যবসায়ে বিক্রয়ের উপর কম জোর দেয়া
- অংশীদারি ব্যবসায়ে অধিকাংশ সময়ে পরিস্থিতি না বুঝেই জোর করে ব্যবসায়ের খরচ কমানো বা বিক্রয় বাড়ানোর কথা বলা হয়। এই কারণে কাওয়াসাকি মনে করেন, বেশিরভাগ পার্টনারশিপ বাজে পরিনতির দিকে যায়। এক্ষেত্রে তিনি বিক্রয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বলেন। যখন বিক্রয়ের পরিমাণ বেশি থাকবে তখন বিনিয়োগকারী কিংবা অন্য অংশীদাররা চাপ প্রয়োগের সুযোগ পাবে না।
.

৩. ব্যবসায়ের শুরুর দিকে অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতার ধারা পালন
- নতুন অবস্থায় উদ্যোক্তারা নতুন কিছু করতে ভয় পান। তারা ভাবেন সিরিয়াল অনুযায়ী কাজ না করলে ব্যবসায় বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে। অর্থ না থাকলে যে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কাজ কিংবা পরিকল্পনা শুরু করার কথা ভাবা যাবে না এমনটা কোথাও লিখা নেই। আদতে, প্রথম দিকে থাকতে হবে খুবই নমনীয়। হাতের সামনে রিসোর্স যা-ই থাকবে সেটাকেই কাজে লাগাতে হবে।
.
৪. নিয়ন্ত্রন বিভ্রম
- অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ৫১শতাংশ মালিকানা নিজের থাকা মানেই উদ্যোক্তা মনে করতে পারেন তিনি ব্যবসায়কে নিয়ন্ত্রণ করছেন। আসলে, এক্ষেত্রে তিনি ব্যবসায়ের একটি টুল হিসেবে শুধু ব্যবহার হচ্ছেন। কারণ বাকি বিনিয়োগকারীদেরকে তাদের বিনিয়োগের টাকা মুনাফা অর্জন করে উঠানোর দায়িত্ব তার হাতেই পড়ে। গাই কাওয়াসাকির মতে, এই রকম অংশীদারি উদ্যোগের চেয়ে বড় কোনো কোম্পানিতে ছোট খাটো পরিমাণ স্বত্ত থাকাই ভালো।
.
৫. যোগ্য কর্মী নিয়োগে ভুল
- অধিকাংশ উদ্যোক্তা তার ব্যবসায়ে কর্মী হিসেবে চান তার মতোই মানুষদের। উদ্যোক্তা তরুণ হলে তিনি তরুণদেরকেই তার প্রতিষ্ঠানে নেন, তিনি পুরুষ হলে পুরুষদেরই বেশি প্রাধান্য দেন। গাই কাওয়াসাকির মতে এটি একটি অন্যতম বড় ভুল। তার মতে, তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া উচিৎ যারা ব্যাতিক্রমধর্মী।
.
৬. বিনিয়োগকারীর সাথে পেশাদারী মনোভাবের অভাব
- উদ্যোক্তা ভাবেন বিনিয়োগকারী তাকে পছন্দ করেন বলেই বিনিয়োগ করেন। আসলে উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীর সম্পর্ক খুবই ভঙ্গুর। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন ততক্ষণ পর্যন্ত এই সম্পর্ক ভালো থাকবে। তাই এক্ষেত্রে খুব বেশি আবেগী না হয়ে উদ্যোক্তাকে হতে হবে পেশাদার। বাণিজ্যিক কাজে পেশাদারিত্বই শেষ কথা।

 
	                
	                	
	            
 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	