নারী উদ্যেক্তার জন্য ৬ পরামর্শ
- জ্যাকুলিন হোয়াটমোর
২০১৫ সালে আমেরিকাতে নারী মালিকানাধীন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সেখানে বর্তমানে ব্যবসায়ের প্রায় ৩০ শতাংশই মহিলা মালিকানাধীন এবং প্রায় ৮০ লক্ষ কর্মী এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। ওমেনএ্যাবেলডটকমের এক তথ্যে বলা হয়েছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ে গড়ে প্রায় প্রতি ৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১টি মহিলা মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে।
বিভিন্ন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসা শুরু করে মহিলাদের জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা এখন আর অসাধারণ কোনো বিষয় নয়। কয়েক বছর ধরে আমি নিজেই একজন নারী ব্যবসায়ী হিসেবে অনেক মহিলা উদ্দ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আমি এমন কিছু ব্যবসায়িক কৌশল শিখেছি যা মহিলা উদ্দ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরু করার জন্য বেশ সহায়ক হিবেবে কাজ করছে।
১. আপনার প্যাশন খুঁজে বের করুন
আপনি ব্যবসা শুরু করার জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে যাচ্ছেন, সুতরাং এমন একটি ব্যবসা নির্বচন করুন যা শুধু পছন্দই নয় আপনার জন্য যেন অধিক আবেগপূর্ণও হয়। যখন আপনি অধিক আবেগপ্রবণ হবেন, তখন দেখা যাবে ভোক্তা বা গ্রাহকদের প্রতি আপনার প্রবল উৎসাহ ও বিশ্বাস জন্মাবে, ভোক্তাদের জন্য কি ধরণের পণ্যদ্রব্য বা সেবা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি তাঁদেরও আগ্রহ বেড়ে যাবে।
২. লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসাকে উপযুক্ত করে তুলুন
আপনি কি পরিবারের আয় বাড়ানোর জন্য খণ্ডকালীন কাজ করতে চান বা শিশুদের জন্য নির্ধারিত সময়সূচীর বাইরে গিয়ে কাজ করতে চান অথবা পূর্ণকালীন ব্যবসায়ে নিযুক্ত হতে চান? আর্থিক বা ব্যক্তি স্বাধীনতাই কি আপনার লক্ষ্য অথবা উভয়ই? যখন ব্যবসা শুরু করতে যাবেন-শৌখিন কোনো দ্রবাদির দোকান, পরামর্শমুলক ব্যবসা বা অন্যান্য কিছু, আপনার কাজের সময়ের কোনো ধরাবাধা নিয়ম থাকবে না। এমন ধরনের ব্যবসা পছন্দ করুন যেন তার দ্বারা আপনার জীবনে পরিপূর্ণতা আসে।
৩. বাসস্থান থেকে ব্যবসাস্থানকে দুরে রাখুন
ব্যক্তিগত জীবন ও অফিস-উভয়ের জন্য সময়কে আলাদা করে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অফিসের কাজের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, কোনো জরুরী প্রয়োজন ছাড়া তা সঠিকভাবে মেনে চলুন। অফিসিয়াল কাজ অফিস নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করার চেষ্টা করুন, উক্ত সময়ের বাইরে অফিসিয়াল ফোন কল ও ই-মেইল চেক করা এড়িয়ে যান। উক্ত নিয়মের মধ্যে যথাযথভাবে চলতে পারলে আপনার পণ্যের ভোক্তা, গ্রাহক বা সংশ্লিষ্ট সকলে এব্যাপারে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এর অর্থ অফিস নির্ধারিত সময়ের বাইরে অন্যকে ফোন করা বা ই-মেইল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজের এলাকা পৃথক করতে হবে, হোক এটা আপনার বাসস্থানের বাইরে অথবা মধ্যে এবং অফিস চলাকালীন সময়ে দরজা বন্ধ রাখতে হবে।
৪. প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার
আপনি যত গুরুত্বপূর্ণ কাজেই মনোযোগী হন বা আপনজনদের সাথে যতই অন্তরঙ্গভাবে সময় কাটান না কেন মেসেজ আসার ব্যবস্থা অবশ্যই রাখবেন। ই-মেইল আসাকে সকাল হওয়া পর্যন্ত বা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে চেক করা পর্যন্ত অপেক্ষামান রাখুন, ভয়েস মেইল সক্রিয় করুন যাতে গ্রাহক বা প্রয়োজনে অন্যরা সয়ংক্রিয়ভাবে আপনার অবস্থান বুঝতে পারে। প্রযুক্তিকে আপনার জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
৫. সঠিক যোগাযোগ ব্যবস্থা
শুধু ব্যবসায়েই নয় যে কোনো কাজই একা সম্পন্ন করা খুবই কঠিন, সুতরাং আপনাকে সঠিক লোকদের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি বা একটি ওমেনস সাপোর্ট গ্রুপ তৈরি করুন এবং তাদের সাথে আপনার ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য ও হতাশার দিক নিয়ে আলোচনা করুন। যাতে ব্যবসায়ের খারাপ সময়ে আপনার সহযোগীতার জন্য তাঁদের সহযোগীতা নিতে পারেন। ওমেনস বিজনেস এ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত হতে পারেন যেমন- ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বিজনেস ওনার্স অথবা আমেরিকান বিজনেস ওমেনস অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি। ব্যবসায়িক বিভিন্ন সহযোগিতা পেতে এদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া খুব প্রয়োজন।
৬. পণ্য বা সেবার পরিচিতি
সতর্কতার সাথে আপনার পণ্যদ্রব্য বা সেবা সমূহের পরিচিতি তুলে ধরতে হবে যেমন- এগুলো দেখতে কেমন, এর কাজ কী, এতে কী কী সুবিধা রয়েছে ইত্যাদি। সমস্থ কিছুই আপনাকে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে করতে হবে এবং পণ্য বা সেবার পরিচিতির সাথে এর গুণগত মান, রং, লোগো, ডিজাইন, প্যাকেজিং ইত্যাদি সঙ্গতিপূর্ণ ও এর উপস্থাপনা যথাযথ হতে হবে। গ্রাহকদের সঠিক সেবাদান, প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি এবং লক্ষ্য ঠিক রাখতে হবে। পণ্য বা সেবার সঠিক মানের বিচ্যূতি করা যাবে না। গ্রাহক কী চায় তা বুঝতে হবে, তাঁদের জানাতে হবে, স্মরণ করাতে হবে এবং তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
নিজস্ব ব্যবসা শুরু করা বা পরিচালনা করা হলো এক ধরনের রোমাঞ্চকর ও দুঃসাহসীক যাত্রার সামিল। সুতরাং সুযোগের সদ্বব্যবহার করুন এবং এর প্রস্তাব সমূহের পারিতোষিক দিন।